মাস্ক পরানোর দায়িত্ব কার?

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৯ জানুয়ারী ২০২২ ১৯:৪৯; আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০২

ছবি: প্রতীকী

ফের দেশে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। দৈনিক শনাক্তের হার প্রায় ৬ শতাংশ। অথচ এখনো দেশে অনেকের মুখে মাস্কই ওঠেনি। এই চিত্র শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে। দফায় দফায় করোনা হানা দিলেও মাস্ক পরায় অনীহা বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে। বহুবার সরকার নির্দেশনা দিলেও এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি বেশ উপেক্ষিত রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাস্ক পরলে ‘জীবাণু বহনকারী ড্রপলেট’ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।

দেশে করোনার সংক্রমণের পর থেকেই সরকারি ও বেসরকারিভাবে মাস্ক পরার বিষয়ে নানা সচেতনতামূলক উদ্যোগ নেয়া হয়।

তা থাকা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় উদাসীনতা রয়েই গেছে। যা লক্ষ্য করা যায় সারা দেশের হাট-বাজার, মার্কেট, লঞ্চ, ফেরি ও গণপরিবহনগুলোতে। নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে মানুষ স্ব-উদ্যোগেই মাস্ক পরবে, স্বাস্থ্যবিধি মেলে চলবে এবং কেউ মাস্ক না পরলে সামাজিকভাবেই তাকে বাধ্য করা হবে এমনটা সারা দেশে শতভাগ নিশ্চিত করা গেলে ভাইরাসের সংক্রমণ যেমন কমবে, তেমনি কঠোর বিধিনিষেধ প্রয়োগ বা লকডাউন দেয়ারও প্রয়োজন হবে না। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা এবং সংস্থাটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, কোথাও স্বাস্থ্যবিধি নাই। উধাও। শহর কিংবা গ্রামে কেউ মাস্ক পরছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশিত ১৫ দফার মধ্যে রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহনের জন্য যেসব নির্দেশনা ছিল সেগুলোর বালাই নেই।?? স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি করতে কেবল নির্দেশনাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে হবে। কাউকে একক দায় দিয়ে লাভ নেই। মানুষকে সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই করোনার আরেকটি ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে মাস্ক পরার বিষয়ে কঠোরতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতাবোধ বৃদ্ধির কৌশল নিয়েও সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে। সরকারি উদ্যোগ ও সচেতনতায় অধিকসংখ্যক মানুষ এখন নিজের কাছে মাস্ক রাখছে। এটিও এক ধরনের সফলতা বা অগ্রগতি। এখন সেই মাস্ক যেন সঠিক জায়গায় সঠিক নিয়মে মানুষ পরে, সে বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি সচেতনতামূলক কার্যক্রম বা উদ্যোগ হাতে নেয়া প্রয়োজন। তরুণ ও যুবকদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা খুবই কম। বিনা কারণে তারা বাইরে বের হয়। ফলে সামপ্রতিক সময়ে দেশে করোনাভাইরাসে যুবকরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হওয়ায় করোনাভাইরাস হয়তো তাদের কাবু করতে পারছে না। কিন্তু যুবকদের উদাসীনতায় পরিবারের বয়স্ক ও শিশুরা যেমন আক্রান্ত হচ্ছে, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর কারণ হয়েও দাঁড়িয়েছে যুবকরা, যা মোটেই কাম্য নয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেকে ও পরিবারকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব সবার আগে নিজেদেরই। সেটি করতে হলে মাস্ক পরতে হবে। আর মাস্ক পরতে ব্যক্তির সদিচ্ছাই যথেষ্ট। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাস্ক পরলে ‘জীবাণু বহনকারী ড্রপলেট’ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা উচিত। দ্য প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এ (পিএনএএস) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা জানান, মহামারির বিস্তার রোধে কোনো কোনো সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বাসায় থাকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় মাস্ক পরিধান করা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উত্তর ইতালি ও নিউ ইয়র্ক শহরে মাস্ক পরার নিয়ম জারির পর সে সময় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাবের এই দুই এলাকায় সংক্রমণের প্রবণতা নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। নিউ ইয়র্কে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর নতুন সংক্রমণের হারও প্রতিদিন ৩ শতাংশ করে হ্রাস পেয়েছিল।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিয়োজিতরা বলছেন, দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর ওমিক্রনের বিস্তারে করোনার টিকা নেয়া মানুষেরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা মানুষকে মাস্ক পরিধান করার আহ্বান জানাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর সর্বশেষ নির্দেশনায় মানুষকে মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনায় কাপড়ের একাধিক স্তরের মাস্ক, আঁটসাঁটভাবে আটকানো এবং নাক পুরোপুরি ঢেকে রাখতে পারে এমন মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, কাপড়ের মাস্কের নিচে বহুস্তরের একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক পরা যেতে পারে। এন৯৫ মাস্ক চিকিৎসাকর্মীদের পরিধান করার কথা বলা হয়েছে।

লেখক: ফরিদ উদ্দিন আহমেদ


সূত্র: মানবজমিন



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top