বাদশার গ্রহণযোগ্যতা নাই, তাঁর ভোট ৩৬’শ

| প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৫:৪৯; আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৫:৫১

সংগ্রহীত

টানা ৩৩ বছর ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে ছিলেন রাজশাহীর আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু। দলটির রাজশাহী মহানগরের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি। তবে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টি তাঁকে বহিষ্কার করেছে। একইসঙ্গে জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আকবর আলীকেও বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে। এ নিয়ে শনিবার তারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মেহনতি মানুষের পক্ষে থাকার আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে ওয়ার্কার্স পার্টি। সকালে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় আইনজীবী আবু রায়হান মাসুদের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আবু রায়হান মাসুদও ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্রসংগঠন ছাত্রমৈত্রীর নেতা ছিলেন। সে দল ছেড়ে তিনি এখন আওয়ামী লীগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সাবেক ছাত্রমৈত্রী নেতা আবু রায়হান মাসুদও। তিনি বলেন, ‘ফজলে হোসেন বাদশা একবার হাতুড়ি প্রতীকে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ৩ হাজার ৬০০ ভোট পেয়েছিলেন। সুতরাং রাজশাহীতে ওয়ার্কার্স পার্টির ভোটের সংখ্যা ৩ হাজার ৬০০। ১৪ দলে এসে আওয়ামী লীগের ভোটে তিনি এমপি হয়েছেন। তিনি ১৪ দল ছাড়া ভোটে জিততে পারবেন না। তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নাই রাজশাহীতে। বাম রাজনীতি থেকে আসা আমরা নেতৃবৃন্দ গত ৯ মার্চ রাজশাহীতে একটি মিটিং করেছিলাম। সেখানে ১৪ দলকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। সে কারণেই এন্তাজুল হক বাবু ও আকবরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা অন্যায়।’
মাসুদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে ২০০ নেতা ফজলে হোসেন বাদশার পাশ থেকে সরে গেছে। আমাদের দাবি, ফজলে হোসেন বাদশাকে আমাদের কাছে অনতিবিলম্বে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। আর কেন্দ্রীয় ওয়ার্কার্স পার্টিকে সবকিছুর তদন্ত করতে হবে। যদি তিনি ক্ষমা না চান এবং তদন্ত না হয় তাহলে পার্টির সবাই পদত্যাগ করবে। আমরা কিন্তু ফজলে হোসেন বাদশার অনেক তথ্য জানি জানি। সেগুলো নিয়ে তখন গণআন্দোলন শুরু করব।’

সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘২০০৯ সালে ১৪ দল ক্ষমতায় আসে। তারপর থেকে ওয়ার্কার্স পার্টি তার আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। বাম সংগঠনগুলোকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালিয়ে গেছে। যার ফলে বাম সংগঠনগুলোর তেমন কোন তৎপরতা দেখতে পাওয়া যায় না। গত ৯ মার্চ আমাদের দুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দল থেকে বহিষ্কার করতে গেলে কিছু নিয়ম আছে। নিয়ম বলতে শোকজ করতে হয়। এগুলো কিছু হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির কোন সদস্যকে মহানগর কমিটি বহিষ্কার করতে পারে না। তারা কীভাবে এটা করল এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটির তদন্ত করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘বহিষ্কারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে গত সিটি নির্বাচনে আমি নাকি ১৪ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে থেকেছি। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এ রকম হলে তখনই আমাকে বহিষ্কার করতে পারত। চারবছর পর এসব কথা বলা ভিত্তিহীন। আমি নাকি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেলের বিরোধিতা করেছি। এটাও ভিত্তিহীন। এর যদি প্রমাণ দিতে পারে তাহলে আমি ওকালতি ছেড়ে দেব। আকবর আলীকে ভূমিদস্যু বলা হয়েছে। এটাও সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চান, ওয়ার্কার্স পার্টি সব সময় মার্কিন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে কথা বললেও দলের রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবুর আমেরিকার নাগরিকত্ব আছে। এটি নেতাকর্মীরা কীভাবে দেখেন? জবাবে এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘আমরা এই ব্যাপারটা দলীয় ফোরামে অনেকবার বলেছি। দ্বৈত নাগরিকত্ব যার আছে, তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক থাকতে পারেন না। তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্দিষ্ট সময় গিয়ে সেখানে থাকেন। তাঁর রাজনৈতিক চেতনা নেই। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। এই একটা ব্যক্তির কারণে জেলা ও মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তিনি পার্টিকে আদর্শচ্যুত করতে বড় ভূমিকা রাখছেন।’

পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশাকে উদ্দেশ্য করে বাবু বলেন, ‘আপনি যদি পার্টির রাজশাহী মহানগরের সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু ও সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবুর কথামতো চলেন, তাহলে পার্টি ধ্বংস হয়ে যাবে। এদের সম্পর্কে আমার কাছে যে তথ্য আছে তা যদি আপনি শোনেন, তাহলে তাদেরকেও বহিষ্কার করবেন।’

ওয়ার্কার্স পার্টি আদর্শচ্যুত হয়ে গেছে, এন্তাজুল হক বাবুর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে দলটির রাজশাহী মহানগরের সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু বলেন, ‘পার্টি আদর্শচ্যুত হয়নি। সে নিজেই আদর্শচ্যুত হয়েছে। ছয়মাস আগে থেকে বলে বেড়াচ্ছে সে পার্টি করবে না। পার্টি করবে না তো পদত্যাগ করবে। তা না করে দলের ভেতর বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে অন্য ফোরামে বক্তৃতা করেছে। এখন বহিষ্কার করার কারণে পাগলের প্রলাপ বকছে।’বহিষ্কৃত নেতা আকবর আলী বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

সূত্র: সংগ্রহীত।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top