ব্যাংক আইন উপেক্ষা করে ১০ বার সাউথইস্ট ব্যাংকের উপদেষ্টা জাকির খান

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৫৬; আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৩৯

জাকির আহমেদ খান। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক আমলা জাকির আহমেদ খান অনেক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পদ একাই দখল করে আছেন। ব্যাংক আইন তোয়াক্কা না করে তিনি দশ বার সাউথইস্ট ব্যাংকের উপদেষ্টা হয়েছেন। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। আর এ পদের প্রভাব খাটিয়ে তিনি দিনের পর দিন লাগামহীন দুর্নীতি-লুটপাট করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার নিয়োগ ব্যাংক আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রীতিবহির্ভূত বলে জানা গেছে।


বিএনপি শাসনামলে জাকির আহমেদ সচিব ছিলেন। অবসরের পর প্রভাব খাটিয়ে তিনি ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০১০ সালে প্রথম তিনি সাউথইস্ট ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ পান। ১১ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ব্যাংকটির উপদেষ্টা পদে রয়েছেন। এছাড়া আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ তিনি দখল করে আছেন।

সাউথইস্ট ব্যাংক গ্রিন ফাউন্ডেশনের সদস্য, সাউথইস্ট ব্যাংক গ্রিন স্কুলের পরিচালক, সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেডের সর্বেসর্বা, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে স্বতন্ত্র পরিচালক, বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেডের পরিচালক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের স্বতন্ত্র পরিচালক, ক্রাউন সিমেন্টের স্বতন্ত্র পরিচালক, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সদস্য জাকির আহমেদ।

মূলত সাউথইস্ট ব্যাংকের উপদেষ্টা পদের প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পদ দখল করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা উপদেষ্টা আছেন সেসব প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতা কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও তিনি উপদেষ্টা। অবৈধভাবে দখল করা এসব পদ থেকেও তিনি মাসের পর মাস বেতন নিচ্ছেন। আবার অবৈধভাবে ঋণ সুবিধা পাইয়ে দিয়ে ব্যাংকের টাকা তিনি হরহামেশা লুটপাট করছেন।

২০০০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাকির আহমেদ এনবিআরের চেয়ারম্যান হন। এ সময় তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের কোনো তদন্ত না করে বিএনপি সরকার তাকে পুরস্কৃত করে। তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন এবং বিপুল অবৈধ অর্থবিত্তের মালিক হন।

বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি পরিচালক প্রতিষ্ঠান। জাকির আহমেদ সাউথইস্ট ব্যাংকের উপদেষ্টা হয়েও কীভাবে বে লিজিংয়ের স্বতন্ত্র পরিচালক হন তা নিয়ে প্রশ্ন আছে? স্বার্থসংশ্লিষ্ট দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে একই ব্যক্তি কিভাবে থাকেন?

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৩ এর ‘ক’ ধারা অনুযায়ী- ‘একই ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ব্যাংক কোম্পানি বা একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা একাধিক বীমা কোম্পানির পরিচালক থাকবেন না।’ কিন্তু এ আইন লঙ্ঘন করে তিনি ক্ষমতার প্রভাবে একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে আছেন। প্রভাব খাটিয়ে তিনি সাউথইস্ট ব্যাংকের কয়েকশ কোটি টাকা কম সুদে বে লিজিংয়ে ডিপোজিট রেখেছেন। যা ব্যাংকের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লাফার্জ সিমেন্টের স্বতন্ত্র পরিচালক থাকার সময় জাকির কোম্পানিটির বিরাট অঙ্কের শেয়ার লেনদেন করে প্রায় ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। তার এ অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় তখন একজনের চাকরি চলে যায়।

সাউথইস্ট ব্যাংকের গ্রাহক হলো ক্রাউন সিমেন্ট। একই গ্রুপের জিপিএস ইস্পাতও ব্যাংকটির গ্রাহক। প্রতিষ্ঠান দুটিকে অবৈধভাবে ঋণ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া ও অন্য সব সুবিধার নাম করে জাকির প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক পদে আছেন। সাউথইস্ট ব্যাংক ও ক্রাউন সিমেন্টের শেয়ার লেনদেন করে তিনি কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

সাউথইস্ট ব্যাংকের আরেকটি গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পর্ষদে বসার জন্য তিনি সাউথইস্ট ব্যাংকের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের অবৈধ ঋণ সুবিধা ও কমিশন বাণিজ্যের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গেও জড়িত। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট মূলত একটি আর্থিক খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান। জাকির আহমেদ প্রতিষ্ঠানটিরও পরিচালক পদে আছেন।

কয়েক বছর আগে জাকির আহমেদের সব কাজে অডিট আপত্তি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এরপরও তিনি বহাল তবিয়তেই আছেন। বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা বেতন, বোনাস, ব্যক্তিগত কর্মচারী, সার্বক্ষণিক গাড়ি ও ভ্রমণ খরচ তিনি পাচ্ছেন। এ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ করেছেন একজন সংবাদকর্মী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পরিচালক জানান, অভিযোগটি এরমধ্যে আমলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই হয়তো তদন্ত শুরু করা হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর (বিআরপিডি) আবু ফরাহ মো. নাছের যুগান্তরকে জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে জাকির আহমেদ খানের মোবাইল ফোনে কল করা হয়। যুগান্তরের পরিচয় পাওয়ার পর তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার তাকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।

সূত্র: যুগান্তর/এএস



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top