আবাসন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আনো বাড়ছে

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:১৮; আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২২:২৫

ছবি: সংগৃহিত

দেশে আবাসন বাণিজ্যে বিদেশিদের সফলতায় নতুন আরো বিনিয়োগে উৎসাহী হচ্ছে তারা। অন্যদিকে, বিদেশি বিনিয়োগে ভর করে দেশের আবাসন খাত এখনও সাফল্যের ধারাতেই আছে। খবর টিবিএসের।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ বছরে জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, চীন ও কোরিয়ার মতো দেশ থেকে প্রায় ৪৩টি বিদেশি কোম্পানি ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে দেশের সমৃদ্ধ আবাসন খাতে প্রবেশ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা কম হওয়ায় আবাসনের যে চাহিদা রয়েছে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছে বিভিন্ন বিদেশি আবাসন কোম্পানি। এ খাতে আরও প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ পাইপলাইনে রয়েছে। আগমাী বছর এ বিনিয়োগ আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে অর্থনীতি প্রায় স্থবির হয়ে যাওয়ার পর আবাসন খাতে বিদেশি বিনিয়োগের গতি কমে যায়। তবে, বিডার পরিসংখ্যান বলছে, পরের বছরই এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ প্রাক্‌-মহামারি পর্যায়ে ফিরে যায়। ২০২১ সালে বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশের আবাসন খাতে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।

শুধু তাই নয়, সিঙ্গাপুরের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে একটি প্রকল্পে কাজ করছে। সিঙ্গাপুরেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ঢাকার এই প্রকল্প দুটিতে বিনিয়োগ পরিমাণ ২৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এদিকে বিদেশি পুঁজির প্রবাহ গৃহ ক্রেতাদের জন্য আবাসনকে সাশ্রয়ী করে তুলছে বলে মনে করা হলেও স্থানীয় রিয়েল এস্টেট খাতে আশঙ্কা, এতে তাদের ব্যবসায় অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে।

আবাসন ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে প্রথম বড় বিনিয়োগ করে জাপান তাগুচি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড, ২০০৬ সালে। প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর মোহাম্মাদপুরে বড় অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স জাপান-গার্ডেন সিটি নির্মাণে ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।

২০১৫ সালে বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে আরেক জাপানি প্রতিষ্ঠান ক্রিড এশিয়া কোম্পানি লিমিটেড বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।

২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিন বছরে মধ্যপ্রাচ্যের রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে মিরপুরে ৫০ বিঘা জমিতে ২ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করে।

কোম্পানিটি এখন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে রাকিন ট্রাঙ্কুইল টাউন নামে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

এছাড়া স্থানীয় রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করেছে আরও অনেক অন্যান্য বিদেশি কোম্পানি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—জেসিএক্স ডেভেলপমেন্ট, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ রিটায়ারমেন্ট হোমস, চায়না গার্ডেন সিটি ডেভেলপারস লিমিটেড, এশিয়া জাপান রিয়েল এস্টেট, দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি হিয়োসুং কর্পোরেশন ও ডেলিম কর্পোরেশন এবং টোকিও ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা গেছে, জাপানি কোম্পানিগুলো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে।

বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি থেকে আরও বিনিয়োগ আসছে। যেমন, সম্প্রতি আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সঙ্গে যৌথ ব্যবসায় এসেছে সিঙ্গাপুরের র‍্যাফলস ইনফ্রাস্ট্রাকচার হোল্ডিংস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথভাবে ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার বৃহত্তম আবাসন প্রকল্পগুলোর একটি বাস্তবায়ন করবে।

আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমে মিরপুর ডিওএইচএস এবং উত্তরা-সংলগ্ন সমন্বিত আবাসিক শহর 'ট্রাস্ট গ্রিন সিটি' গড়ে তোলার জন্য নির্ধারিত বাউনিয়ায় ৫১.৯৩ একর প্রকল্প জমির মালিক।

সেখানে ৫ হাজারের বেশি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাট ৬০০ থেকে ৪ হাজার বর্গফুটের হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্পটি সম্পর্কে অবগত সূত্রগুলো।

এছাড়া ২০১৪ সালে ঢাকার অদূরে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য সিঙ্গাপুরের আরেক প্রতিষ্ঠান প্লাটিনাম হোল্ডিংস লিমিটেড গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করে।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার টিবিএসকে বলেন, কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুরের কোম্পানিটির সঙ্গে তাদের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। সে অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরের রিয়েল এস্টেট কোম্পানিটি পূর্বাচল নতুন শহরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

পূর্বাচল প্রকল্প উন্নয়নের কিছু কাজ বাকি রয়েছে, সেসব কাজ সম্পন্ন হলে আগামী বছর নাগাদ সরকারের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের কোম্পানিটি কাজ শুরু করবে বলে জানান উজ্জ্বল কুমার।

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর টিবিএসকে বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এলে সেটি দেশের জনগণ ও অর্থনীতি উভয়ের জন্যই ভালো। এতে করে আবাসন ব্যবস্থার সহজীকরণ হয়ে জনসংখ্যার বড় একটি অংশের আবাসন ব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি সরকারও বড় অঙ্কের রাজস্ব পাবে।

এছাড়া এসব আবাসন প্রকল্পে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে আবাসন খাতে বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করছে দেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।

রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ দেশি-বিদেশি কোম্পানির মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারে।

নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top