বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: গুচ্ছ না ক্যাট?

এইচএসসি পরীক্ষায় অটো পাসের পর এখন আলোচনার মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি গুচ্ছ না কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা (ক্যাট) পদ্ধতিতে নেয়া হবে সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা ক্যাট প্রবর্তন করতে চাচ্ছেন।

অন্যদিকে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত কোনটি গ্রহণ করা হবে সেটা নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

মহামারী প্রাদুর্ভাবে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হবেই। এটা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাদের মতে, অপরিহার্য পরীক্ষা বাতিল করা হল, অথচ একই পরিস্থিতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় কোন পরীক্ষাটি অপরিহার্য তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

আগামী বছরের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর কথা বলা হলেও করোনার কারণে পরীক্ষা পেছাতে পারে। সেক্ষেত্রে শীতের শেষে ফেব্রুয়ারি বা মার্চে পরীক্ষাটি নেয়া হতে পারে।

এ সংক্রান্ত আলোচনার লক্ষ্যে আগামী ১৫ অক্টোবর বৈঠক ডেকেছে ইউজিসি। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

যদি ও শিক্ষামন্ত্রী সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কথা বুধবার (০৭ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রীর জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায়। সমন্বিতভাবে এ পরীক্ষা নেয়া হবে। জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

মহামারী পরিস্থিতি কখন শেষ হবে সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা নেই। পরিস্থিতির আলোকে পরীক্ষার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে।

ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি প্রস্তাব এসেছে। প্রথমে গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তির চিন্তা নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে ইউজিসি বৈঠকে বসেছিল গত বছরের শেষদিকে। প্রথম বৈঠকে এ পদ্ধতি বাদ দিয়ে সমন্বিত এবং পরে ক্যাট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও করা হয়। ওই কমিটিই ভর্তিতে ক্যাট পদ্ধতির প্রস্তাব করে।

কথা হয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমাদের একটা কমিটি আছে। গত ২৩ মার্চ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে একটি সভা ছিল।

তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টি অনিশ্চতায় থাকায় বাকি সব বিষয় আটকে আছে। করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে আসছে শীতকাল। বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনলাইনে সভা করে সব সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।

ড. মিজান বলেন, সরকার যেহেতু এইচএসসির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন আমাদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে। পরিস্থিতি ভালো হলে অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে, এর বিকল্প নেই।

দেশের স্ব-শাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং বুয়েট বাদে দেশের বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে। গত বছর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে।

দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনীহার কারণে আটকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় না আসায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। সব ক’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একসঙ্গে নিয়ে আসতে না পারায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বা ক্যাটের আয়োজন কিছুটা ধাক্কা খাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভর্তিমুখী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রত্যাশা, স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভর্তি পরীক্ষার অধীনে চলে আসবে।

এদিকে অ্যাডমিশন কমিটি, ডিনস কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। শিগগিরই এসব আলোচনা শুরু হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেবে কিনা ও করোনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দিতে হবে কিনা জানতে চাইলে ভিসি বলেন, এর প্রতিটি বিষয়ই ওইসব কাউন্সিল ও কমিটিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তিনটি পদ্ধতিতে গুচ্ছভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কথা বলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাব। এক্ষেত্রে তিনটি গুচ্ছ হবে। এগুলো হচ্ছে- কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

কৃষি ও প্রকৌশল-প্রযুক্তির জন্য দুইটি পরীক্ষায় হলে ও শেষেরটির জন্য বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজনেস স্টাডিজে তিনটি পরীক্ষা হবে। তিনি বলেন, আলোচনা অনুযায়ী বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।

ভর্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে সে বিষয়ে ১৫ অক্টোবর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে একটি বৈঠক আছে। সেখানে বিষয়টি আলোচনা হবে বলে আশা রাখছি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে কথা হয় ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহর সাথে। তিনি বলেছেন, এ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় না এলেও বাকিদের নিয়ে আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকেই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গুচ্ছ বলি আর ক্যাট বলি- সমন্বিতভাবে পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তি এখন সময়ের দাবি। গোটা ভারতে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সেখানে আমাদেরও পারার কথা।

দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বুয়েট এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা ক্যাটে আসবে না। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি। এর দু’দিন পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিল।

অটো পাসে এই বছর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্য বেড়েছে জানিয়ে ইউজিসি কর্মকর্তারা বলেন, প্রতি বছর গড়ে ৯ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। তবে এ বছর সবাইকে পাস করিয়ে দেয়ায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৬৫৭৮৯ জন। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রথম বর্ষে ৬০ হাজারের মতো আসন আছে।

প্রতিবছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেন ৫-৬ লাখ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা পরীক্ষার আয়োজন করায় এসব শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি পোহায়।

এদিকে এবার এইসএসসিতে অটোপাসের সুযোগ নিয়ে এ বছর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে মেডিকেল ও কৃষিতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে। খবর-যুগান্তর

• এসএইচ