জেলা পরিষদ নির্বাচনে আলোচনায় আ.লীগের পাঁচ নেতা

সোহরাব হোসেন সৌরভ | প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৩:৩৫; আপডেট: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৩:৩৮

জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই রাজশাহী জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এই নির্বাচন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই বিএনপির। তাঁরা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যেতে চাচ্ছেন না। এর আগে ২০১৮ সালের শেষে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। সেবারও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

রাজশাহীতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন, কাঁকনহাট পৌরসভার তিনবারের সাবেক সফল মেয়র আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ মাস্টার, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রায়হানুল হক রায়হান, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (বর্তমান প্রশাসক) মোহাম্মদ আলী সরকার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও দেওপাড়া ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আখতার।

এর মধ্যে সাংগঠনিক, দলের প্রতি আনুগত্য, স্বচ্ছতা ও নির্ভেজাল হচ্ছেন, ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক ও জনহিতৈশী কাঁকনহাট পৌরসভার তিনবারের সাবেক সফল মেয়র ও কাঁকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সফল সভাপতি ত্যাগি নেতা আব্দুল মজিদ মাস্টার। শুধু তাই নয় গোদাগাড়ী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে স্বচ্ছ ও সুন্দর আওয়ামী লীগের একনিষ্ট কর্মিদের নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের কমিটি গঠনের সমন্বয়ক হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়াও তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।

আব্দুল মজিদ মাস্টার বিগত ১৯ বছর সফলতার সাথে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ২০২০ সালের পৌর নির্বাচনে দল মনোনয়ন না দেয়ার তিনি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আনগত্য ও শ্রদ্ধা দেখিয়ে সমুদ্রের ন্যায় জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন থেকে সরে আসেন। কারন দল অত্র পৌরসভায় সিনিয়র একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে মনোনয়ন দেয়ায় তিনি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে নির্বাচন থেকে সরে আসেন। শুধু তাই নয় সে সময়ে দলের মনোনীত প্রার্থীর হয়ে দিনরাত কাজ করে নৌকাকে বিজয়ী করেন।

আরেকজন হচ্ছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। তিনি দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা হলেও সেভাবে নেই তার জনপ্রিয়তা। এই নির্বাচনে যেহেতু পৌরসভা ও ইউনিয়নের নির্বাচিত সদস্যরা ভোটার সেহেতু জেলার বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়নের সদস্যদের সাথে তাঁর সখ্যতা নাই বললেই চলে বলে একাধিক সুত্র থেকে জানা যায়।

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চারঘাটের বাসিন্দা রায়হানুল হক রায়হান ১৯৯৬ সালের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কাছে হেরে যান। এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বর্তমানে দলের সাথে তাঁর তেমন বনিবনা নাই। তিনি এখন একলা চলো নীতি চলছেন বলে জানা গেছে।

বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী সরকার বিগম নির্বাচনে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। বর্তমানে সরকারের বর্ধিত সময়ে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যেহেতে বিগত নির্বাচনে তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন সেহেতু দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্রোহীরা কোন নির্বাচন ও দলের সিদ্ধান্তে থাকতে পারবেন না। বিধায় তাঁর প্রার্থিতা হওয়ার সম্ভাবনা খুব খুব ক্ষীন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান আখতার প্রার্থী হওয়ার কথা জানান গেছে। জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কিন্তু বিগত নির্বাচনে তিনি দলীয় টিকিট পাননি। এর কারন হিসেবে জানা গেছে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে খারাপ আচরন ও দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে কাজ করা এবং সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। এসব কারনে দল বিগত ইউপি নির্বাচনে তাঁকে মনোনয়ন দেননি। এখানেও মনোনয়ন না পেয়ে তিনি বিরোধী দলের প্রার্থী ও সতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় তাঁর মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে অনেক সংশয় বলে জানা গেছে

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্ভাব্য এই পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে সবদিক বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এবং মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে এখন কাঁকনহাট পৌর সাবেক মেয়র আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ। কারণ দলের সিদ্ধান্ত এবং তানোর-গোদাগাড়ী আসনের সংসদ সদস্যর নিদের্শনার বাহিরে যাননি। এমনকি দলীয় সকল সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়ে একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি দীর্ঘ ১৯ বছর মেয়র থাকায় জেলার সকল জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। সে কারণেই সবাই মনে করছেন জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একমাত্র যোগ্য ও দলের একনিষ্ঠ ও অনুগত ব্যক্তি হিসেবে সবার উপরে রয়েছেন এই ত্যাগি নেতা আব্দুল মজিদ মাস্টার।

নির্বাচন বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, কেবলতো তফসিল ঘোষণা হলো। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সমন্বিত সিদ্ধান্তে প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সমন্বয় করবেন। তারপরই প্রার্থীর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top