10336

05/19/2024 গুজরাটে আইপিএলের নকল কারখানা!

গুজরাটে আইপিএলের নকল কারখানা!

রাজটাইমস ডেস্ক

১৩ জুলাই ২০২২ ০৬:৩৩

গুজরাটের প্রত্যন্ত এক গ্রামে চলছিল রমরমা ‘আইপিএল’! এই আইপিএলে ছদ্মবেশী ক্রিকেটার, ভুয়া আম্পায়ার এবং ধারাভাষ্যকার, ভুয়া দর্শক- সব মিলিয়ে একটি ‘প্যাকেজ’ গড়ে তোলা হয়েছিল।

বিস্ময়কর হলেও সত্য, সেই ভুয়া আইপিএল দেখতে রাশিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে চলতো রমরমা জুয়ার ব্যবসা। শেষ পর্যন্ত, ভুয়া আইপিএলের মাঝপথেই খবর চলে গেলো পুলিশের কানে এবং বেরসিক পুলিশ হানা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে সেই আইপিএল এবং নকল আইপিএল আয়োজকদের গ্রেফতারও করেছে।

তবে যে পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে আয়োজক চক্রটি প্রতিযোগিতাটি চালাচ্ছিলেন, তা দেখে চোখ কপালে উঠেছে পুলিশ কর্মকর্তাদের।

গুজরাটের মেহসানা জেলার মোলিপুর গ্রামের একটি প্রত্যন্ত অংশে চলছিল এই ‘আইপিএল’। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ’।

রাশিয়ার ভিয়ের, ভোরোনেঝ, এমনকি মস্কোর মতো শহর থেকেও টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছিল। একটি জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে চলত জুয়াখেলা। গত দু’সপ্তাহ ধরে এই কাণ্ড চলার পর পুলিশ মূল চক্রকে খুঁজে পেয়েছে।

কী ভাবে আয়োজন করা হচ্ছিল এই ভুয়া প্রতিযোগিতা?
পুলিশ জানিয়েছে, আয়োজক শোয়েব দাবদা আট মাস রাশিয়ার একটি পানশালায় কাজ করেন। কাছ থেকে দেখেছেন সেখানে কিভাবে বিভিন্ন ম্যাচে টাকা বাজিতে লাগানো হয়। সে সময় আসিফ মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। আসিফই রাশিয়ার কিছু জুয়াড়ির সঙ্গে কথা বলে ক্রিকেট ম্যাচে জুয়ার টাকা বিনিয়োগের টোপ দেন। রাশিয়ার জুয়াড়িরা রাজি হয়ে যান।

এরপর শুরু হয় আসল কাজ। দেশে ফিরে মোলিপুর গ্রামে একটি খামার ইজারা নেওয়া হলো; খামারে ক্রিকেট পিচ তৈরি হলো; বিজ্ঞাপনযুক্ত বাউন্ডারি লাইন ও হ্যালোজেন লাইট দিয়ে তার চারপাশ ঘেরা হলো; হাই-রেজুলেশন ক্যামেরা স্থাপন করা হলো; খামারের ২১জন শ্রমিক এবং আশপাশের কিছু বেকার ছেলেকে ভাড়া করা হলো। তাদেরকে জার্সি পরিয়ে পুরোদস্তুর খেলোয়াড় সাজিয়ে ‘আইপিএল’ টুর্নামেন্ট চালানো হলো। তাদের ম্যাচপিছু ৪০০ টাকা করে দেওয়া হত। বাজার থেকে চেন্নাই সুপার কিংস, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স এবং গুজরাট টাইটান্সের জার্সি কিনে আনা হয়।

টুর্নামেন্টের লাইভ স্ট্রিমিং স্ক্রিনে স্কোর প্রদর্শনের জন্য কম্পিউটার জেনারেটেড গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হলো; ইন্টারনেট থেকে ক্রাউড-নয়েজ সাউন্ড ইফেক্ট ডাউনলোড করা হয়েছিল এবং মিরাট থেকে আসল আইপিএলেরর একজন ইন্ডিয়ান ধারাভাষ্যকারকে অনুকরণ করে নিখুঁত বিবরণী দেওয়া হচ্ছিল।

স্থানীয় লোকদেরই বানানো হয় আম্পায়ার। তারা আবার ওয়াকি-টকিতে কথা বলার অভিনয় করতেন। পাঁচটি উচ্চমানের ক্যামেরা ভাড়া করা হয়, যার সাহায্যে ম্যাচ দেখানো হত ইউটিউব চ্যানেলে। ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা হয়েছিল দর্শকদের আওয়াজ, যা শোনানো হত ম্যাচের সময়।

শুধু তাই নয়, মিরাট থেকে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ধারাভাষ্য দেওয়ানো হত, যিনি ভারতের এক নামী ধারাভাষ্যকারের গলা নকল করতেন। এক আম্পায়ারও ধারাভাষ্য দেওয়ার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ম্যাচের সময় ওয়াকিটকিতে আম্পায়ারদের নির্দেশ দেওয়া হতো পরের বলে চার অথবা ছক্কা দেওয়ার জন্য।

আম্পায়াররা সেই নির্দেশ ব্যাটার এবং বোলারকে দিয়ে দিতেন। অবধারিত ভাবে নির্দেশ পালন করা হত। রাশিয়ার জুয়াড়িরা এতে আরও উৎসাহিত হয়ে পড়তেন। পুরোদমে খেলা চালিয়ে টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার-ফাইনাল পর্যন্ত এসে গেল। কিন্তু বিধিবাম, এখানেই তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়লো।

এই খেলার বাজিতে বাজি ধরা যেত একমাত্র রাশিয়ান রুবল মুদ্রায়। অর্থাৎ আপনাকে অনলাইনে রুবল কিনতে হবে, তারপর সেই রুবল দিয়ে বাজি ধরতে হবে। আপনি কি এতটা ভেবেছিলেন?

পুলিশের ধারণা, আসল আইপিএল সম্পর্কে রাশিয়ার এই জুয়াড়িদের ধারণা প্রায় ছিলই না। তাই আসল এবং নকল আইপিএলের পার্থক্য তারা ধরতে পারেননি। পুলিশ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে। কিভাবে এই জুয়াড়িদের থেকে টাকা আদায় করা হত, তা খতিয়ে দেখা চলছে।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]