10758

05/02/2024 নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি : অপুষ্টির ঝুঁকিতে শিশুরা

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি : অপুষ্টির ঝুঁকিতে শিশুরা

রাজটাইমস ডেস্ক

১৮ আগস্ট ২০২২ ১৭:৩৮

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে শিশুর খরচও। ফলে অপুষ্টিতে ভুগছে শিশুরা। এই অবস্থা আরো শোচনীয় হতে পারে৷ খবর টিবিএসের।

শিশুখাদ্যের দাম বাড়ায় অপুষ্টির ঝুঁকিতে শিশুরা
“দুই বাচ্চার দুধের জন্য এখন মাসে প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। শুধু দুধ নয় বাচ্চাদের সব ধরণের খাবারের দাম বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এখন বাচ্চাদের খাবারেও কাটছাট করতে হচ্ছে।”

"আমি আমার মেয়েকে এখন দিনে দুইটার পরিবর্তে একটা ডিম খাওয়াচ্ছি। বাচ্চাকে ডিম-দুধ খাওয়াতে নিজেরা ডিম, মাছ খাওয়া বাদ দিয়েছি। তারপরও বেবিফুডের যে দাম বেড়েছে এখন, তাতে বাচ্চাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে", কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী খালিদ হাসান (আসল নাম নয়)।

মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত বেশিরভাগ পরিবার সন্তানদের পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। শিশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের পুষ্টি ঘাটতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা।

খালিদ হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমার মেয়ের বয়স ১৮ মাস, সে অনুযায়ী তার ওজন ১৮ কেজি হওয়া উচিৎ। কিন্তু আমার মেয়ে ওজন ১০ কেজিরও কম। বয়স অনুযায়ী ওজন কম হওয়ায়, ডাক্তার তাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে বলেছে। বুকের দুধের পাশাপাশি তাকে সেরেলাক, সুজি, বাদাম ও খেজুর খাওয়াই। কিন্তু সবকিছুর দাম এতো বেড়েছে যে, এখন পরিমাণে কম খাওয়াতে হচ্ছে। ফলে মেয়েটার ওজন ঠিকমত বাড়ছে না।"

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দেশে সব ধরণের দ্রব্যমূল্য বাড়ছে অব্যাহতভাবে। বাড়তি খরচ মেটাতে খালিদ হাসানের মত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা সংসার খরচে নানা ধরণের কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে। তারপরও সংসার খরচ সামলাতে পারছেন না তারা।

খালিদ হাসান বলেন, মেয়ের খাবারের জন্য মাসে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয় এখন। ৩৫ হাজার টাকার বেতন দিয়ে মেয়ের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করে, বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত, সংসার খরচ মেটানো কঠিন হয়ে যায়।

"আগে আমি বিকেলে অফিসে ৩০-৪০ টাকার হালকা নাস্তা খেতাম, এখন সেটা বাদ দিয়েছি। এই মাসে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে ফলোআপে নেয়ার কথা ছিল, কিন্তু টাকার সমস্যার কারণে যেতে পারিনি। সব সামাজিকতা বাদ দিয়েছি। খরচের ভয়ে গত সপ্তাহে এক নিকট আত্মীয়ের বিয়ের দাওয়াতে যাইনি।"

জন্মের পর থেকে বুকের দুধ পায়নি মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মৌসুমি মৌয়ের এক বছর বয়সী- দুই জমজ মেয়ে। আগে তাদের ৮০০ টাকা দামের এনএএন দুধ খাওয়ানো হতো। তবে এখন এর দাম বেড়ে ৯০০ টাকা হওয়ায় ও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাচ্চাদের ৫২০ টাকা দামের ল্যাকটোজেন-২ খাওয়াচ্ছেন মৌ। ল্যাকটোজেনের দামও আগের তুলনায় ২০ টাকা বেড়েছে।

"দুই বাচ্চার দুধের জন্য এখন মাসে প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। শুধু দুধ নয় বাচ্চাদের সব ধরণের খাবারের দাম বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এখন বাচ্চাদের খাবারেও কাটছাট করতে হচ্ছে।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও পুষ্টিবিদ খুরশিদ জাহান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডেকে বলেন, "কর্তৃপক্ষকে শিশু খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে; তা না হলে পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পরবে।

"ডিম একটা ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন যা বাচ্চাদের শরীরের বৃদ্ধি ও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো যোগাতে পারে। কিন্তু সেই ডিমের দাম এখন অনেক বেশি। দুধ বাচ্চাদের একটি প্রয়োজনীয় খাবার। বাচ্চার ক্যালসিয়াম থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক মাইক্রোনিউট্রেন্ পূরণ করে দুধ।"

"এর ফলে স্ট্যান্টিং বেড়ে যাবে, বাচ্চার শারিরীক বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্রেন ডেভলভমেন্টও বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে বাচ্চা বড় হলেও ঠিকমত কাজ করতে পারবে না, পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়বে", যোগ করেন তিনি।

গত তিন মাসের মধ্যে সব ধরনের দুধের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।

৩৫০ গ্রাম ল্যাকটোজেন ১,২,৩ দুধের প্যাকেটের দাম এখন ৫২০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৫০০ টাকা। নেসলের নিডো ওয়ান প্লাস গ্রোয়িং আপ মিল্ক পাওডার ৩৫০ গ্রামের দাম এখন ৪০০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৭৫ টাকা। বায়োমিল ১ মিল্ক পাওয়ারের (৩৫০ গ্রাম) দাম ৪৯০ টাকা। এনএএন ১ দুধের (৪০০ গ্রাম) দাম ৮৬০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৯০০ টাকা। মান অনুযায়ী সেরেলাকের দাম ২৫০ টাকা থেকে ৪৭৫ টাকার মধ্যে, আগে ছিল ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্ব রামপুরায় লাইভ ফার্মেসির এক কর্মকর্তা বলেন, গত দুই তিন মাসে প্রতিটি ব্র্যান্ডের দুধের দাম বেড়ে গেছে। দাম বাড়ায় এখন বড় টিনের পরিবর্তে ৩৫০ গ্রামের প্যাকেটের দুধ বেশি কিনছে ক্রেতারা।

বিশ্বে অপুষ্টির হারের তালিকায় সামনের দিকে আছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাক বিদ্যালয়ের ৫৪ শতাংশেরও (৯৫ লাখ) বেশি শিশু স্টান্টেড, ৫৬ শতাংশের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম।

মূল খবরের লিঙ্ক

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]