11405

04/30/2025 বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদেশী ঋণের খেলাপির শঙ্কা

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদেশী ঋণের খেলাপির শঙ্কা

রাজটাইমস ডেস্ক

১৬ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৪৫

দেশে ডলার সংকটে নানামুখী সমস্যায় ব্যাংক খাত। ঋণ পরিশোধে গড়িমসিতে ঋণ খেলাপীর শঙ্কাও বাড়ছে। খবর বণিক বার্তার।

বেসরকারি খাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের। এর মধ্যে ৪১০ কোটি ডলার নিয়েছেন বিদ্যুৎ খাতের ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ কোম্পানি ছাড়াও রফতানি আয় নেই এমন অনেক শিল্পোদ্যোক্তা বিদেশী বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু ডলারের সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতির অজুহাতে বিদেশী ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করতে চাচ্ছেন। এ অবস্থায় অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে ঋণের অর্থ জোগানদাতা ব্যাংকগুলোও বিপদে পড়েছে। আর বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মাধ্যমে সরাসরি বিদেশী ঋণ নিয়ে আসা কোম্পানিগুলোও যথাসময়ে কিস্তি পরিশোধ করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।

বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ আনার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতার ভূমিকা রেখেছে পূবালী ব্যাংকও। সম্প্রতি বেসরকারি এ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী শফিউল আলম খান চৌধুরী অবসরে গিয়েছেন। জানতে চাইলে অভিজ্ঞ এ ব্যাংকার বলেন, বিদ্যুৎসহ রফতানি আয় নেই এমন খাতের ব্যবসায়ীরা বিদেশী ঋণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন। কিছু ব্যবসায়ী মেয়াদ বাড়িয়ে ঋণ নিয়মিত রাখার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ এক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ করছেন। তবে এভাবে দীর্ঘ সময় বিদেশী ঋণ নিয়মিত রাখা সম্ভব হবে না। বিদেশী ঋণ খেলাপি হলে দেশের পুরো ব্যাংক খাতেরই ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ২ হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার বিদেশী ঋণের মধ্যে ৮১০ কোটি ডলার দীর্ঘমেয়াদি। দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পাশাপাশি ট্রেড ক্রেডিট হিসেবে বিদেশী বিভিন্ন উৎস থেকে এ ঋণ নেয়া হয়েছে। আর বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের ১ হাজার ৭৭৫ কোটি ডলারের মেয়াদ স্বল্প। এ ঋণের মধ্যে ১ হাজার ১৯৬ কোটি ডলারের ধরন হলো ট্রেড ক্রেডিট। বায়ারস ক্রেডিট, ডেফারড পেমেন্ট, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি হিসেবে এসব ঋণ নিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে ৫০৩ কোটি ডলারের ঋণ বিদেশী উৎস থেকে নেয়া হয়েছে।

অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে দেশের বেসরকারি খাতে যেসব বিদেশী ঋণ এসেছে, তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বলে মনে করছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গ্রাহকরা বিদেশী ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলেও তহবিল জোগানদাতা ব্যাংককে সেটি পরিশোধ করে দিতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাবে। এ কারণে বিদেশী তহবিল সংগ্রহ এবং সেটির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। আবার যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রাহকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।


দেশের বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদি যে বিদেশী ঋণ এসেছে তার অর্ধেকই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেল খাতে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী ঋণের পরিমাণ ছিল ৮১৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী ঋণ ৪৩৩ কোটি ডলার। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের উৎপাদনমুখী শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশী ঋণ এসেছে ১৪৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। এছাড়া নির্মাণ খাতে ৩০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, ট্রেড অ্যান্ড কমার্স খাতের জন্য ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলোয় ১৬৫ কোটি, যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ৪০ কোটি এবং সেবা খাতে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের বিদেশী ঋণ এসেছে।

যেকোনো বিদেশী ঋণ যথাসময়ে পরিশোধে ব্যর্থতা দেশের জন্য বিপদের কারণ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বিদেশী ঋণ নেয়া কোম্পানিগুলো পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে পুনঃতফসিল করার চেষ্টা করছে। কিছু প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়েও দিচ্ছে। তবে বিদেশী অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোয় সুদহার এখন ঊর্ধ্বমুখী। কোনো প্রতিষ্ঠান বিদেশী ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সেটি দেশের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতার কারণে গত এক বছর ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। ২০২১ সালের অক্টোবরে দেশে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৫ টাকা। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত দর ছিল ১০৫ টাকা ৬৬ পয়সা। যদিও দেশের খুচরা বাজারে এ দরে ডলার মিলছে না। কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলারের জন্য গুনতে হচ্ছে ১১৫ টাকারও বেশি। স্বল্প সময়ে টাকার অস্বাভাবিক এ অবমূল্যায়নের ফলে বিদেশী উৎস থেকে ডলারে ঋণ নেয়া ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

নিউজের লিঙ্ক

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]