11719

05/10/2025 করহারের পরিবর্তে পরিধি বাড়াতে চায় এনবিআর

করহারের পরিবর্তে পরিধি বাড়াতে চায় এনবিআর

রাজটাইমস ডেস্ক

৩১ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৪৩

বাংলাদেশে সফররত আছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি দল। খবর বণিক বার্তার।

অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজস্ব প্রশাসনের শীর্ষ সংস্থাটিকে বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে আইএমএফ। তবে এর মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে মতানৈক্যও ছিল। করের হার বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে থাকা কর-সুবিধা তুলে দেয়ার পরামর্শ আসে আইএমএফের পক্ষ থেকে। এনবিআর অবশ্য তাতে দ্বিমত পোষণ করে জানিয়ে দেয়, করের হার বাড়িয়ে তারা করদাতাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে চায় না। বরং বিভিন্ন কৌশল অনুসরণ করে কর ফাঁকি কমানোর পাশাপাশি ট্যাক্সনেট বাড়িয়ে রাজস্বের আকার বৃদ্ধি করতে চায় এনবিআর। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গিয়েছে। আলোচনায় আইএমএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ এবং এনবিআরের পক্ষে সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম।

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ নতুন করে ট্যাক্সনেট বাড়িয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে করদাতাদের কাছ থেকে বেশি করে কর আদায়ের পরামর্শ দেয়। তবে এনবিআরের পক্ষ থেকে এক্ষেত্রে বলা হয়, মুদ্রাস্ফীতির সার্বিক দিক বিবেচনা করে তারা প্রান্তিক করদাতাদের ওপর করের বোঝা বাড়াতে চায় না। তখন আইএমএফের পক্ষ থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর প্রক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে এনবিআর জানায়, করদাতারা যাতে সহজে এবং আস্থার সঙ্গে কর দিতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করতে চায় এনবিআর। তখন এমনিতেই কর আদায় বাড়বে। এছাড়া বিভিন্ন সেক্টরে যারা কর ফাঁকি দিচ্ছে, সেটা যথাসম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। এক্ষেত্রে সংস্থাটির নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও তার সফলতা আইএমএফের কাছে তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে সমাজে যাদের কর দেয়ার সামর্থ্য আছে কিন্তু দেয় না, তাদের করের আওতায় আনতে বিভিন্ন কৌশল অনুসরণ করছে এনবিআর। এসব কৌশলে রাজস্ব বোর্ড কোনো সফলতা পাচ্ছে কিনা, আইএমএফের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়। তখন এনবিআর জানায়, এ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তারা যে পরিমাণ করা আদায় করতে পেরেছে, তাতে সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ। অথচ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। ফলে এনবিআর মনে করছে তারা সঠিক পথেই আছে।

এনবিআরের সার্বিক বিষয়ে উপস্থাপনা ও তাদের বিভিন্ন পলিসি দেখে আইএমএফ খুশি হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে। তাই ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের জন্য এনবিআরের কোনো সহায়তা লাগবে কিনা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। রাজস্ব বোর্ড জানিয়েছে, সহায়তা পেলে তাদের জন্য ভালো হবে, কারণ রাজস্ব আদায় একটা লার্নিং প্রসেস। আন্তর্জাতিকভাবে কোলাবরেশন ও ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন এবং ট্যাক্স আদায়ের ডিসেন্ট্রালাইজেশন হলে তাদের জন্য অবশ্যই উপকার হবে।

তামাক খাতে করহার বাড়ানোর বিষয়ে বৈঠকে এনবিআর জানায়, এসব পণ্যে ৪০-৬৫ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি ও এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ সারচার্জ রয়েছে। তাই এখানে নতুন করে করহার বাড়ানোর তেমন সুযোগ নেই।

তাছাড়া এ খাতে গত বছর থেকে প্রতি মাসেই গড়ে ২ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব এসেছে। ২০২৩ অর্থবছরেও প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা করে রাজস্ব আসছে। ভ্যাট আদায়ে সবচেয়ে বেশি অবদানও টোব্যাকো সেক্টরের, যা প্রায় ৩৩ শতাংশ বলে জানায় এনবিআর। একই সঙ্গে কর আওতা বাড়াতে অটোমেশন পদ্ধতি বিস্তারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয় আইএমএফের কাছে। এজন্য ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিনের আওতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এনবিআর জানিয়েছে, বর্তমান প্রায় ৮৪ শতাংশ ভ্যাট রিটার্ন ইলেকট্রনিক্যালি জমা দেয়া হয়। বৃহৎ করদাতাদের ক্ষেত্রে এ হার ৯৯ শতাংশ। এনবিআরের কর্মকর্তারা আইএমএফকে জানিয়েছেন, ইএফডি পদ্ধতিতে রাজস্ব বৃদ্ধি, জবাবদিহি এবং আয় ও শুল্কের পরিমাণ মূল্যায়নেও সহায়তা করবে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার এক বছরের বেশি সময় ধরে অস্থিতিশীল। তীব্র হওয়া ডলার সংকট মেটাতে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। তবে ঋণ দেয়ার আগে আন্তর্জাতিক এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি আবেদনকারী দেশকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন শর্ত দিয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশের অর্থ খাতেও বিভিন্ন সংস্কার আনার জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করছে ১৫ দিনের সফরে আসা আইএমএফের প্রতিনিধি দলটি। তারা এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ছয়টি বৈঠক করেছে। আজও তাদের বৈঠক রয়েছে, আলোচনা হবে ২ ও ৮ নভেম্বর। এসব আলোচনা শেষে দুই সপ্তাহের মধ্যে জানা যাবে, আইএমএফের ঋণ বাংলাদেশ পাচ্ছে কিনা। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে সংস্থাটি দেড় বিলিয়ন করে তিন দফায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে।

#এসকে

নিউজের লিঙ্ক

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]