12140

04/29/2024 চরম অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ

চরম অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ

রাজটাইমস ডেস্ক

১৮ নভেম্বর ২০২২ ২২:১৭

চরম অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশ। খাদ্য নিরাপত্তা, চড়া মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, প্রবাসী আয়ে টান এবং রপ্তানি কমে যাওয়ায় বহুমুখী এই সংকট দেখা দিয়েছে। খবর যুগান্তরের।

এছাড়া আছে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, হুন্ডির মাধ্যমে দ্বিমুখী ক্ষতি (অর্থাৎ একদিকে রেমিট্যান্সের ডলার দেশে না আসা, অপরদিকে এদেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাওয়া)-সহ নানা সমস্যাও। এসব সমাধানে নীতি প্যারালাইসিস, রাজস্ব আয় কমসহ কার্যকর উদ্যোগের অভাবকেও দায়ী করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ভাচুর্য়ালি এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। বক্তব্য দেন সানেমের চেয়ারম্যান ড. বজলুল হক খন্দকার।

সেলিম রায়হান বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে স্বল্প আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। তাদের খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিতে হচ্ছে। তবে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার হলে মাছ-মাংস ‘বিলাসী পণ্য’ হয় কীভাবে-এটাই একটা বড় প্রশ্ন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে বড় শঙ্কার জায়গা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি। গত ফেব্রুয়ারি থেকে মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বাস্তবে মূল্যস্ফীতি আরও বেশি, তবে কমিয়ে দেখানো হচ্ছে-এমন বিতর্কও আছে। অথচ ভিয়েতনাম, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশের চেয়ে কম। গত অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ভারতে ৬ দশমিক ৭৭, ইন্দোনেশিয়ায় ৫ দশমিক ৭১ এবং ভিয়েতনামে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ওপর ধারাবাহিক জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সেলিম রায়হান বলেন, পোশাক শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তার সূচক নিম্নমুখী। এর মানে, পোশাক শ্রমিক ও তার সন্তানরা আগের চেয়ে কম খাবার খাচ্ছেন। শ্রমিকদের মাসিক মজুরিও কমেছে। ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার কারণে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা কমেছে। একদিকে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, অপরদিকে আয় কমেছে। পোশাক শ্রমিকদের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন, তাদের অবস্থা সহজেই বোঝা যায়। এ অবস্থায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ১১ মাসে রিজার্ভ গড়ে ১০০ কোটি ডলার কমেছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয়েও সামনের দিনে সুখবর নেই। তবে পণ্য আমদানির ঋণপত্র কমেছে। এর মধ্যে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমবে। বিদেশি ঋণের কাঠামোও পরিবর্তন হচ্ছে। সামনের দিনগুলোয় রপ্তানি ও প্রবাসী আয় না বাড়লে কয়েক বছর পর এই ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি হবে। বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে স্বল্প মেয়াদে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আওতা বাড়াতে হবে। কারণ, অনেকেই নতুন করে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়বে। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে হবে। আর মধ্য মেয়াদে রাজস্ব ও ব্যাংক খাতে সংস্কার আনতে সরকারের সদিচ্ছা লাগবে। তাছাড়া বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি করা দরকার। সেই কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে দুর্ভিক্ষের কথা বারবার বললে আতঙ্ক তৈরি হয়। এতে একটি গোষ্ঠী সুযোগ নিতে পারে। দুর্ভিক্ষ না হলেও সাময়িক সময়ের জন্য কোনো কোনো জায়গায় খাদ্যসংকট হতে পারে। এমন আশঙ্কা থাকলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সঠিক ও হালনাগাদ তথ্যপ্রাপ্তির ওপর জোর দিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেছেন, আমাদের খাদ্য উৎপাদন এবং চাহিদার সঠিক কোনো তথ্য নেই। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হাতেও আছে পুরোনো তথ্য। বেকার নিয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়, সেটিও পুরোনো এবং গ্রহণযোগ্যতা কম। এছাড়া দেশের মানুষ কত, সেটিও জানা দরকার। কেননা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে চাহিদা ও সরবরাহের সঠিক তথ্য অবশ্যই প্রয়োজন। সেটি না হলে গ্যাপ বোঝা সম্ভব হবে না। একসময় হয়তো টাকা হাতে থাকবে; কিন্তু খাবার কিনতে পাওয়া যাবে না। বিবিএসকে সঠিক ও হালনাগাদ তথ্য দিতে হবে। রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ করা দরকার। আমদানির ক্ষেত্রেও বিকল্প উৎস থাকতে হবে। আইএমএফ-এর যেসব শর্ত এগুলো সরকারের মত। কিন্তু কাজটা হচ্ছে না। ব্যাংকের সুদহার ৯ ও ৬ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পদ্মা সেতুর পর অপর অঞ্চলের জন্য একটি পদ্মা প্লাস কর্মসূচি থাকা দরকার ছিল। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

ড. বজলুল হক খন্দকার বলেন, আগামী ৩ মাসের মধ্যে রিজার্ভ কীভাবে বাড়ানো যায়, এর উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। বিবিএস-এর উাচিত কস্ট অব লিভিং ইনডেক্স তৈরি করা। তাহলে যে কোনো সংকটে কোন শ্রেণির মানুষ কোন অভিঘাতের শিকার হয়, সেটি বোঝা যাবে।

যুগান্তরের প্রতিবেদনটির লিঙ্ক

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]