12799

05/13/2025 বছরে ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার দাবি ব্রির গবেষকদের

বছরে ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার দাবি ব্রির গবেষকদের

রাজটাইমস ডেস্ক

২ জানুয়ারী ২০২৩ ২১:১৭

গত অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টন চাল। আর চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে সাড়ে ছয় লাখ টন চাল আমদানি করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাল আমদানিতে আগ্রহী করতে কয়েক দফায় দেয়া হয় শুল্কছাড়। খবর বণিক বার্তার। 

এর পরেও আমদানি আশানুরূপ না হওয়ায় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। চাল আমদানির জন্য সরকারিভাবে নানা প্রচেষ্টা চালানো হলেও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে।

ব্রি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। ‘অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অব রাইস প্রাইস হাইক ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গবেষণায় দেখা গেছে, বছরে দেশে চালের চাহিদা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টন। এর মধ্যে মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে বিভিন্নভাবে বছরে প্রয়োজন হয় ২ কোটি ৫১ লাখ ৪২ হাজার টন। আর বাকি ১ কোটি ৩ লাখ ৫৮ হাজার টন অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যবহূত হয়।

মানুষের খাদ্যের জোগানে ব্যবহূত চালের মধ্যে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৭ হাজার টন সরাসরি খাবার হিসেবে মানুষ গ্রহণ করে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য ১ লাখ ৮৩ হাজার টন, মুড়ি হিসেবে ১৫ লাখ ২৮ হাজার, চিড়া হিসেবে ২ লাখ ৬৬ হাজার, খই হিসেবে ৬৪ হাজার ও পিঠার জন্য ১ লাখ ৩ হাজার টন চাল প্রয়োজন হয়।

এছাড়া খাবারের বাইরে বীজ হিসেবে ৪ লাখ ৫ হাজার টন, প্রাণীর খাবার হিসেবে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার, শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের জন্য ১৬ হাজার, ফসল কর্তনে ২০ লাখ ৬৪ হাজার, কর্তন-পরবর্তী ক্ষতি ২৩ লাখ ৬২ হাজার ও প্রসেসিংয়ে ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার টন প্রয়োজন হয়। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৯৭ লাখ টন। ফলে বছরে ৪২ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকে।

তবে উদ্বৃত্তের দাবি করা হলেও প্রতি বছর সরকারি ও বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করতে হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করতে হয়েছে ৯ লাখ ৮৭ হাজার টন। আর চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৫৫ হাজার টন আমদানি করা হয়েছে। আর বর্তমানে দেশে মজুদ রয়েছে ১৪ লাখ ২৬ হাজার ৬৫২ টন।

আমদানির বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থতা, পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানি করতে হয়। এছাড়া আমদানীকৃত চাল মোট চাহিদার ৫ শতাংশেরও কম।

যদিও চলতি বছর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালে দেশে চালের চাহিদা ছিল ৩ কোটি ৫২ লাখ টন। স্বাভাবিক পরিস্থিতি অনুযায়ী জোগান ধরা হয় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টন। ফসল কাটায় ফলনের পার্থক্য বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত পরিস্থিতিতে সেই জোগান নেমে আসে ৩ কোটি ৫৬ লাখ টনে। যদিও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সে বছর চালের জোগান আসে ৩ কোটি ৪৬ লাখ টন। অর্থাৎ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ওই বছর ২৩ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা থাকলেও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে উল্টো ছয় লাখ টন ঘাটতি হয়।

গবেষক দলের সদস্য ও বাকৃবির কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবসময় তো এক রকম উৎপাদন হয় না। আবার ওএমএস ও সরকারের মজুদ রাখার জন্য আমদানি করতে হয়। আবার বাজারের ভারসাম্য রাখার জন্যও কিছু আমদানি করতে হয়। আমদানির পরিমাণ কিন্তু খুবই কম। ২ বা ৩ শতাংশ মাত্র আমদানি করতে হয়।

করোনার পর থেকে দেশে চাল খাওয়ার হার বেড়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে দেশে মাথাপিছু দৈনিক চাল খাওয়ার হার ছিল ৩৮৭ গ্রাম। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪০৭ গ্রাম। এর মধ্যে গ্রামে চাল খাওয়ার হার বেড়েছে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। গ্রামে করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে চাল খাওয়ার হার ছিল ৪৩৫ গ্রাম। করোনার পর এ হার হয়েছে ৪৬২ গ্রাম। আর শহরাঞ্চলে চাল খাওয়ার হার মাথাপিছু ৩৪৯ থেকে করোনার পর ৩৬৫ গ্রামে দাঁড়িয়েছে, যা আগের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি।

এছাড়া চাহিদার চেয়ে চালের প্রাপ্যতা ২০১০-১১ অর্থবছর থেকেই বাড়তির দিকে। ২০১০-১১ অর্থবছরে মাথাপিছু প্রয়োজন ছিল ৫৭০ দশমিক ২ গ্রাম। এর বিপরীতে চালের প্রাপ্যতা ছিল ৬৩৯ দশমিক ৪ গ্রাম। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৪৪ দশমিক ৩ গ্রাম প্রয়োজনীয়তার বিপরীতে চালের প্রাপ্যতা রয়েছে ৬০৮ দশমিক ৫ গ্রাম করে।

এ বিষয়ে সাবেক খাদ্য সচিব মো. আবদুল লতিফ মন্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, ব্রি থেকে সরবরাহকৃত তথ্য হিসেবে যদি ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে তাহলে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা চাল আমদানির জন্য শুল্ক কমিয়ে সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমে চাল আমদানির জন্য বিভিন্ন দেশে ঘুরছেন কেন? এ প্রশ্ন থেকে যায়। বছর খানেক আগেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উৎপাদনের তথ্যের সঙ্গে বিবিএসের তথ্যে প্রায় ২১ লাখ টনের মতো তফাত ছিল। সেজন্য উদ্বৃত্তের তথ্য এখনই পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য হিসেবে ধরা যাচ্ছে না। আবার জনসংখ্যা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) হিসাবে আরো বেড়েছে। ফলে মোট চাহিদাও বেড়ে যাওয়ার কথা। তবে তথ্যের ক্ষেত্রে আরো সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এ তথ্যের ভিত্তিতে সরকার নীতিনির্ধারণ করবে।

এ বিষয়ে ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর বলেন, আমনে বাম্পার ফলন হয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত চালের কোনো সংকট হবে না, বরং ৪২ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকবে। ১৭ কোটি মানুষের চালের চাহিদার পাশাপাশি মানুষের বাইরে (নন-হিউম্যান) ভোগ ২৬ শতাংশকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

গবেষক দলের প্রধান ও ব্রির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, উদ্বৃত্ত ৪২ লাখ টন বা এর বেশি থাকলেও আমদানি করতে হবে। এবার হয়তো ৪২ লাখ টন উদ্বৃত্ত আছে। অন্য বছর আরো কমবেশি হবে। তবে উদ্বৃত্ত খাবার সর্বোচ্চ দুই মাসের চাহিদা পূরণ করতে পারে। দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে সরকারকে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন মাসের খাবার মজুদ রাখতে হয়। উদ্বৃত্ত যা থাকে এটা খরচ হয়ে যায়। যেমন হাওরে যে ধান মানুষ গোলায় রেখেছিল তা কিন্তু নষ্ট হয়ে গেছে। এমন বহু খাবার নষ্ট হয়ে যায়। এটা নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান নেই। বন্যা হলে শুধু মাঠের ফসল নষ্ট হয় না, মানুষের বাড়িতে মজুদ করে রাখা ফসলও নষ্ট হয়। আবার এস্টিমেশন এরর (হিসাবের ভুল) ধরে করা হয়নি। কারণ গড় ফলন হিসাব করে উৎপাদন হিসাব করা হয়। তা যদি ৫ শতাংশ হয় তাহলেও এ উদ্বৃত্ত অর্ধেক কমে যাবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার বণিক বার্তাকে বলেন, উদ্বৃত্ত চাল দেশেই থাকে। এখন ব্যবসায়ীরা চাল মজুদ করেন। চালকল মালিকরা ছাড়াও অনেকে দাম বাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে মজুদ করে রাখেন। আবার সরকারিভাবে চাল সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়। দেশে মানুষের ঘরে খাবার থাকে। তথ্যে অসামঞ্জস্য হওয়ার সুযোগ কম।

বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, এত পরিমাণ চাল উদ্বৃত্ত কী হিসাবে থাকে? বা থাকলে তা কোথায় আছে? এ বিষয়ে জানতে হবে আগে। আবার উদ্বৃত্ত কোন অর্থে? উদ্বৃত্ত থাকলে আমদানি কেন করতে হচ্ছে? এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন রয়েছে।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]