05/10/2025 আগ্রাসি ডেঙ্গু সামাল দিতে নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা
রাজ টাইমস ডেস্ক :
৩ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৫৮
আগ্রাসী ডেঙ্গু থামাতে নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই- এই প্রবাদের মতো অবস্থা হয়েছে মশা মারার কার্যক্রমের। এ কারণে মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে। সন্ধ্যা থেকে রাত, এমনকি দিনেও নিস্তার নেই মশার কামড় থেকে। ফুটপাত থেকে বাসাবাড়ি-সব জায়গায় এখন মশার উপদ্রব। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ দেশবাসী।
চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এমন আশঙ্কা ছিল বছরের শুরু থেকেই। সেই আশঙ্কাকে বাস্তবতায় রূপ দিয়ে দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি।
এদিকে এ বছর জুলাই মাসেই অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী আরও ২৩ বছরে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী জুলাই মাস পর্যন্ত এতো বেশি সংখ্যক রোগীর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তথ্যও এর আগে পাওয়া যায়নি কোনো বছর।
২০২২ সালে দেশে সর্বোচ্চ ২৮১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য জানানো হলেও চলতি বছরের শুধুমাত্র জুলাই মাসেই মারা গেছেন ২০৪ জন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেড দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েও রোগী সামাল দিতে পারছে না। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ বেড বাড়ানো হয়েছে। অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে বেড দ্বিগুণ বাড়লেও ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ অন্যান্য জনবল বাড়েনি। এ কারণে চিকিৎসক-নার্সরা রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত চাপে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
লম্বা লম্বা কথা না বলে, ছবক না দিয়ে সমন্বিতভাবে মশক নিধন কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, এখনো সময় আছে মশক নিধন কার্যক্রম নিয়মিত চালাতে হবে। নইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। ডেঙ্গু সামাল দিতে গিয়ে অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেকের জরুরি অপারেশন প্রয়োজন, কিন্তু করতে পারছে না। ডেঙ্গু সামাল দিয়ে গিয়ে চোখের সামনে রোগী মারা যাচ্ছে-এটা ডাক্তার-নার্সদের জন্য অনেক কষ্টের।
দেশে গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৭১১ রোগী; এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ১২ জনের। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৭ হাজার ১২৭ জনে। তাদের মধ্যে ২৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে মশাবাহিত এ রোগে। গত একদিনে যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৫৮১ জনই ঢাকার বাইরের। আর ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ১১৩০ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ৩২৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৮৬৯ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৪ হাজার ৪৫৬ জন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, এখনই ডেঙ্গুর মহামারি চলছে। আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর হলো ডেঙ্গুর মৌসুম। তাই এখন থেকে মশক নিধন কার্যক্রম সত্যিকার অর্থে চালাতে হবে। নইলে মহামারী ভয়াবহ রূপ নেবে। ঘরের ভিতরে, আঙ্গিনায় ও ভবনের ছাদে মশা বাসিন্দাদের মারার ব্যবস্থা করতে হবে। আর ঘরের বাইরের মশা সিটি কর্পোরেশনকে মারতে হবে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন শুধুমাত্র ছবক দেয়, মশা মারে না।
আগে মশা মারার কার্যক্রম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। তখন কার্যকরভাবে মশা মারা হতো। এখন দায়িত্ব পড়েছে সিটি কর্পোরেশনের উপর। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন মশা মারতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মশা মারার কার্যক্রম দেওয়া উচিত বলে কীটতত্ববিদরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, মশা মারুন, মানুষকে বাঁচান। চিহ্নিত শত্রু মশা। তাকে মারতে তো সমস্যা হওয়ার কথা না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এমিরেটস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, কেউ সচেতন না। সিটি কর্পোরেশন ও জনসাধারণ সবারই সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশা নির্মুল করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, জ্বর হলে বিলম্ব না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। প্যারাসিটামল ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডাবসহ প্রচুর পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, মশা মারতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। মশা নিধনে গতানুগতিক কাজ করা হচ্ছে। এতে মশা নিধন হবে না। কন্ট্রোল রুম রাখতে হবে। তিনি বলেন, মশা মারা ও ডেঙ্গুর চিকিৎসা দুটিই আমাদের জানা আছে। হাসপাতালগুলোতে মশারির নেট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মশা মারতে না পারলে অচিরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এই মশা চিহ্নিত। কার্যকরভাবে মশা না মারার কারণে একদিনে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়তি চাপ পড়ছে চিকিৎসকদের উপরে। ইতিমধ্যে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তারপরও ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা বিরামহীনভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ডাক্তারদের বিশ্রাম নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, সকল মসজিদের ইমামরা যেন প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের খুতবার সময় মশা মারার ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করেন। গত শুক্রবার থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
নিপসনের কীটতত্ত্ববিদ ড. গোলাম ছরোয়ার বলেন, আসলে মূল জায়গায় আঘাত করতে হবে। অর্থাৎ মশা মারতে হবে। যে পরিমাণ ওষুধ দিয়ে মশা মারা প্রয়োজন তা করা হচ্ছে না। এডিস মশার লার্ভাও ধ্বংস করা হচ্ছে না। এ কারণে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। মশা মারার কার্যক্রমে পুরো কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে হবে।