15513

05/08/2024 কচুরিপানা এসেছিল অভিশাপ হয়ে, নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল নিধনের প্রতিশ্রুতি

কচুরিপানা এসেছিল অভিশাপ হয়ে, নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল নিধনের প্রতিশ্রুতি

রাজ টাইমস ডেস্ক :

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:১১

বাংলাদেশের জলাশয়ে এখন যে কচুরিপানা ভাসতে দেখা যায়, দেড় শ’ বছর আগেও এর কোনো অস্তিত্ব এ অঞ্চলে ছিল না। বাংলায় এই উদ্ভিদটির আগমন ঘটেছিল অভিশাপ হয়ে। যা সামলাতে তৎকালীন প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়েছিল।

বাংলাদেশে খাল, বিল, নদী বা যেকোন আকারের জলাশয়ে সবুজ পাতার মাঝে হালকা বেগুনি কচুরি ফুল খুব সাধারণ দৃশ্য।

আর নানাজনের নানা কাজে লাগে কচুরিপানা- অল্প বয়সীরা হয়ত এর ফুল দিয়ে খেলে, কিন্তু আবার কচুরিপানা থেকে তৈরি হস্তশিল্প রফতানি করে বাংলাদেশ বছরে আয় করে কোটি টাকা।

প্রায় দেড় শ’ বছর আগেও এই কচুরিপানা এ অঞ্চলে কেউ চিনতো না- এটি এখানে জন্মাতো না।

কিন্তু আগমনের পরই কচুরিপানা নানাভাবে নাস্তানাবুদ করেছিল প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের, এমনকি নির্বাচনী ইশতেহারে কচুরিপানা নিধনের প্রতিশ্রুতিও অন্তর্ভুক্ত করতে হয়েছিল এক সময়।

কচুরিপানা নামের এই উদ্ভিদ বাংলাদেশে এলো কিভাবে?

কচুরিপানার বাংলায় আগমন

কচুরিপানার বাংলায় আগমন ঘটেছিল ১৮৮৪ সালে। তবে এই আগমনের ইতিহাস নিয়ে নানা রকম তথ্য পাওয়া যায়।

জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, ১৮০০ শতকের শেষভাগে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল থেকে কচুরিপানা নিয়ে আসা হয়েছিল।

মূলত আমাজন জঙ্গলের জলাশয়ে থাকা উদ্ভিদ এটি।

কচুরিপানার হালকা বেগুনি রঙের অর্কিড-সদৃশ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে জর্জ মরগান নামে এক স্কটিশ ব্যবসায়ী ব্রাজিল থেকে বাংলায় কচুরিপানা নিয়ে আসেন।

অন্য আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের একজন পাট ব্যবসায়ী অস্ট্রেলিয়া থেকে এই কচুরিপানা বাংলায় এনেছিলেন।

আবার কলকাতা বোটানিক গার্ডেনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কচুরিপানা ব্রাজিল থেকে প্রথম বাংলায় এসেছিল ১৮৯০-এর দশকের আশেপাশে কোনো সময়ে।

কচুরিপানা প্রকৃতগতভাবে খুবই সহনশীল এবং দ্রুত বর্ধনশীল এক উদ্ভিদ। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এই একটিমাত্র উদ্ভিদ যা মাত্র ৫০ দিনে তিন হাজারের বেশি সংখ্যায় বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে যেতে পারে।

এ উদ্ভিদ পানিতে ঘণ্টায় তিন মাইল গতিতে ভ্রমণ করতে পারে। বিভিন্ন প্রজাতির জলচর পাখি এদের বিস্তারে সাহায্য করে।

বিস্ময়কর এসব বৈশিষ্ট্যের সাথে সাথে, বাংলায় আগমনের পর কচুরিপানা এ অঞ্চলে বহু ভোগান্তি আর যন্ত্রনাও জন্ম দিয়েছে।

'বিউটিফুল ব্লু ডেভিল'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার ইকবাল কচুরিপানার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছেন।

তার ‘ফাইটিং উইথ আ উইড: ওয়াটার হায়াসিন্থ অ্যান্ড দ্য স্টেট ইন কলোনিয়াল বেঙ্গল’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কচুরিপানাকে জার্মান পানা বলেও ডাকা হতো।

বাংলার জলাশয়ে মুক্তভাবে ভাসমান এই বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ এত দ্রুত বাড়তে থাকে যে, ১৯২০ সালের মধ্যে প্রায় প্রতিটি নদ-নদী, খাল-বিল কচুরিপানায় ছেয়ে যায়। যা সেসময় কৃষিখাতে দুর্দশা ডেকে আনে।

এতে বড় ধাক্কা লাগে তৎকালীন পূর্ব বাংলার অর্থনীতিতে।

সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার ইকবালের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯২৬ সালের এক কৃষি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর শুধুমাত্র কচুরিপানার কারণে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আমন ধান নষ্ট হয়।

সে সময়ে পণ্য আনা-নেয়া বা বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান রুট ছিল নদী পথ, অথচ কচুরিপানার কারণে অনেক সময়ই জলাশয়ে চলাচলও দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে।

আবার কচুরিপানা পচে পানির নীচে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়তো, এর ফলে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়।

এতে একদিকে পানির নিচের জলজ উদ্ভিদ মরতে শুরু করে, সেইসাথে প্রচুর মাছও মরে যায়।

মানুষের জন্য এই পানি ব্যবহার করা অনিরাপদ হয়ে উঠেছিল।

জেলেরাও কচুরিপানার জন্য জাল ফেলতে পারতেন না।

সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার ইকবাল লিখেছেন, এসব কারণে তখনকার গণমাধ্যমে কচুরিপানাকে 'বিউটিফুল ব্লু ডেভিল' এবং 'বেঙ্গল টেরর' বলে আখ্যা দেয়া হয়েছিল।

বিস্তার ঠেকাতে ইংরেজ প্রশাসকদের কাছে নালিশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার ইকবালের গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কচুরিপানার লাগামহীন বিস্তারে অতিষ্ঠ হয়ে ১৯১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন চেম্বার অফ কমার্স ইংরেজ প্রশাসকদের কাছে নালিশ করেছিল।

লিখিতপত্রে তাদের বক্তব্য ছিল যে, এ উদ্ভিদের বিস্তার ঠেকানো না গেলে রাজস্বে টান পড়বে।

এরপর ইংরেজ প্রশাসকেরা অর্থনীতি বাঁচাতে কচুরিপানা নিধনের উপায় খুঁজে বের করতে গবেষকদের কাজ করার আহ্বান জানান।

সে সময় পূর্ব বাংলার কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক এবং ওয়াটার হায়াসিন্থ কমিটির সেক্রেটারি কেনেথ ম্যাকলিন ঢাকা এগ্রিকালচারাল ফার্মে, কচুরিপানার রাসায়নিক উপাদানের উপর ১৯১৬ সালে একটি গবেষণা করেন।

তিনি তাতে দেখতে পান, এতে উচ্চ মাত্রার পটাশ, নাইট্রোজেন এবং ফসফরিক অ্যাসিড রয়েছে।

যা উন্নত মানের জৈব সারের প্রধান উপাদান।

তখন ম্যাকলিন সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, কচুরিপানা বাণিজ্যিকভাবে জৈব সার, পশু খাদ্য বা রাসায়নিক উপাদান তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

রাসায়নিক সারের পরিবর্তে কচুরিপানার জৈব সার মাটির জন্য উপকারী। এই সার প্রয়োগে বেশি পরিমাণে উন্নত মানের ফসল উৎপাদন সম্ভব।

কচুরিপানার এই গুণের কদর সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দেয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কারণে বিশ্ববাজারে যখন পটাশের সংকট চলছিল, তখন মেসার্স শ’ অ্যান্ড ওয়ালেস অ্যান্ড কো নামের একটি কোম্পানি ১৯১৮ সালে ভারত সরকারকে কচুরিপানা শুকিয়ে কিংবা ছাই আকারে তাদের কাছে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়।

এজন্য মন প্রতি তারা ৮৪ থেকে ১১২ রুপি পর্যন্ত দিতে রাজি হয়।

তবে সেই সারে পটাশের মাত্রা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট ছিল না।

পরে ভারত সরকার লম্বা ও পরিণত ভালো মানের কচুরিপানা উত্তোলনের নির্দেশ দেয়, যেখানে পটাশের পরিমাণ ভালো থাকবে।

কিন্তু কচুরিপানা বেছে বেছে তোলার পরও এর বিস্তার কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছিল না।

কচুরিপানা নির্মূলে কমিটি গঠন

উনিশ শতকের কুড়ি এবং ত্রিশের দশকে ৪০০০ বর্গমাইল জলাশয়, বিশেষ করে ব-দ্বীপ এলাকা কচুরিপানায় ছেয়ে যায়।

'বেঙ্গল হায়াসিন্থ বিল ১৯৩৩'-এর তথ্য অনুযায়ী- কচুরিপানার কারণে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল তৎকালীন অর্থমূল্যে ছয় কোটি টাকারও বেশি।

কচুরিপানা এই অঞ্চলে মহা-দুর্ভিক্ষের কারণ বলেও মনে করা হয়, যার কারণে ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার ইকবালের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কচুরিপানা বিস্তারের কারণে ময়মনসিংহ, খুলনার বিল এলাকা, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জের আড়িয়াল বিলসহ বিভিন্ন এলাকা, বিশেষত নিচু জমিতে, ফসল উৎপাদন করতে পারছিলেন না কৃষকেরা।

বিভিন্ন এলাকা থেকে সে সময় সরকারের কাছে অভিযোগ যেত যে চাষের জমিতে কচুরিপানা উঠে আসায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

কচুরিপানা নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম তার শেষ সওগাত কাব্যগ্রন্থে ২২ লাইনের একটি কবিতা লিখেছিলেন, যার প্রথম কয়েকটি লাইন ছিল এরকম -

‘ধ্বংস কর এই কচুরিপানা,

(এরা) লতা নয়,

পরদেশী অসুরছানা।

এদের সবংশে করো করো নাশ,

এদের দগ্ধ করে করো ছাই পাঁশ।

(এরা) জীবনের দুশমন, গলার ফাঁস,

(এরা) দৈত্যের দাঁত, রাক্ষসের ডানা।

ধ্বংস করো এই কচুরিপানা।’

এমন পরিস্থিতি তৎকালীন প্রশাসন দ্বিধায় পড়ে যায় যে, তারা এই উদ্ভিদ নির্মূলে কাজ করবে না এর লাভজনক ব্যবহারের বৈজ্ঞানিক উপায়ের ওপর জোর দেবে।

এ নিয়ে ১৯২১ সালে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

ওই কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিজ্ঞানী ও উদ্ভিদবিদ স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। পরের এক বছরে তারা ‌সাত দফা বৈঠক করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব বাংলায় কচুরিপানা মানুষের জন্য হুমকিতে পরিণত হয়েছে। এজন্য তারা কচুরিপানার ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা অব্যাহত রাখা এবং এর অর্থনৈতিক ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

কিন্তু কচুরিপানার বিস্তার ঠেকাতে কী করা হবে সে বিষয়ে তারা সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।

এজন্য তারা প্রাদেশিক সরকারের হাতে সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেন।

জনস্বাস্থ্য এবং কচুরিপানা বিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার ইকবালের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা, কলেরার মতো বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ এবং ম্যালেরিয়ার প্রকোপের পেছনে কচুরিপানার পরোক্ষ ভূমিকাকে দায়ী করা হয়েছিল।

সে সময় বেঙ্গলের ম্যালেরিয়া রিসার্চ ইউনিটের মাঠ পর্যায়ের জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা এসএন সুর বলেছিলেন, কচুরিপানা ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী অ্যানোফিলিস মশার জন্য অনুকূল আবাস তৈরি করে।

এছাড়াও, কচুরিপানা ছড়ানো জলাশয় মল দ্বারা দূষিত থাকে যা কলেরা বিস্তারের জন্য দায়ী।

এছাড়া মাছ ধরতে না পারায় মানুষের পুষ্টি হুমকির মুখে পড়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এছাড়া কচুরিপানার কারণে জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি পশু স্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়েছিল।

পশুরা কচুরিপানা খাওয়ায় কারণে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতো। যার প্রভাব পড়েছিল চাষাবাদের ওপর।

এমন অবস্থায় কচুরিপানার বৈজ্ঞানিক গবেষণার পরিবর্তে এর নির্মূলের ধারণাটি গুরুত্ব পায়।

এরপর ১৯৩৬ সালে 'কচুরিপানা-বিধি' জারি করে তৎকালীন সরকার।

কচুরিপানা-বিধি অনুযায়ী, নিজ জমি বা দখলি এলাকায় কচুরিপানা রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানে সবার অংশ নেয়া বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জেলা প্রশাসকরা স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে কচুরিপানা দমন কর্মসূচি হাতে নেন।

সে সময় দেশপ্রেম ও উৎসাহ নিয়ে সাধারণ মানুষ এই কাজে যোগ দেয়। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কচুরিপানা উৎখাত শুরু হয়।

নির্বাচনী ইশতেহারে কচুরিপানা

এদিকে, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে সবগুলো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাকে কচুরিপানা মুক্ত করার অঙ্গীকার ছিল।

নির্বাচনে বিজয়ের পর শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক তার সরকার গঠন করেন এবং প্রথমেই 'কচুরিপানা উৎখাত কর্মসূচি' হাতে নেন।

এরপর ১৯৩৯ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তিনি 'কচুরিপানা সপ্তাহ' পালন করেন।

নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের জন্য কচুরিপানার বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান চালিয়েছিলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।

কচুরিপানার সমস্যা ১৯৪৭ সালের দিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি।

পরের দশকে দেশের অনেক নদীনালা আবার নাব্য হয়ে ওঠে অর্থাৎ পানি প্রবাহ বেড়ে যায়, যা জলাশয় কেন্দ্রিক অর্থনীতিতে গতি ফিরেয়ে আনে।

অভিশাপ থেকে আশীর্বাদ

যে কচুরিপানা একসময় নিধন করতে মানুষ মাঠে নেমেছিল, প্রায় শতবর্ষ পরে এখন তা অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এটি সার হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয়। আজকাল কচুরিপানা থেকে বায়োমাস তৈরি করে ফারমেন্টেশনের মাধ্যমে বায়ো-ফার্টিলাইজার প্রস্তুত করা হচ্ছে।

যেহেতু এই উদ্ভিদে প্রচুর নাইট্রোজেন উপাদান রয়েছে তাই এটি বায়োগ্যাস উৎপাদনেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোয় এই কচুরিপানা স্তূপ করে ভাসমান বেড বানিয়ে সবজি চাষ হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গবাদিপশুর খাবারে টাটকা কচুরিপানা যোগ করা হয়। এছাড়া শুকনো কচুরিপানা জ্বালানির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

বাংলাপেডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, কচুরিপানা হাওর অঞ্চল এবং সংলগ্ন এলাকাতে ঢেউয়ের আঘাত থেকে ভিটে-মাটি রক্ষায় ব্যবহৃত হয়।

কচুরিপানা খুবই সহনশীল একটি উদ্ভিদ।

এর পাতা আর মূলের মাঝে ফাঁপা কাণ্ডসদৃশ অংশটি দূষিত পানি থেকে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, কোবাল্ট, নিকেল, সীসা এবং পারদসহ বিভিন্ন ভারী ধাতুসমূহ শোষণ করে নিতে পারে যা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ইতিমধ্যে প্রমাণিত।

যে কারণে এরা শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থ মিশ্রিত পানিকে জৈব পদ্ধতিতে দূষণ মুক্ত করতে পারে।

তবে এই মূহুর্তে কচুরিপানা সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কুটিরশিল্পে।

এর ডাটা শুকিয়ে ঝুড়ি, আসবাবপত্র, হ্যান্ডব্যাগ, দড়ি, ফুলের টব, কাগজ, মাদুরসহ নানা ধরণের গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি হচ্ছে, যা পরিবেশবান্ধব ও প্লাস্টিক সামগ্রীর বিকল্প হতে পারে।

বাহারি এসব পণ্যের সিংহভাগ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। অর্থাৎ এক সময়কার জলজ অভিশাপ এখন পরিণত হয়েছে জলজ সম্পদে।

সূত্র : বিবিসি

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]