15782

05/01/2025 দশ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্ক

দশ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্ক

রাজ টাইমস

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৯

দশ বছর পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি বিসিক শিল্প পার্ক, সিরাজগঞ্জ প্রকল্প। এতদিনেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। চতুর্থবারের মতো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ পিছিয়ে ব্যয় বাড়িয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। তিনটি কারণ দেখিয়ে এবার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ পেছানো হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটি গ্রহণের পর চতুর্থ বারের মতো আবারও পিছিয়েছে সিরাজগঞ্জের বিসিক শিল্প পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম। প্রকল্প বাস্তবায়নের নতুন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন। একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে প্রকল্প ব্যয়ও। ২০১০ সালে নেওয়া প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৩০ জুন। প্রকল্পটির জন্য ধরা ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। তৃতীয় সংশোধনীসহ প্রকল্পটি গত ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া বিসিক শিল্প পার্ক, সিরাজগঞ্জ প্রকল্পের মেয়াদ ৪র্থ বার বাড়ানো হয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতি, কোভিড-১৯ মহামারির কথা উল্লেখ করে একনেকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

কমিশন জানিয়েছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৪০০ একর বিশিষ্ট শিল্প পার্ক স্থাপন করে শিল্পায়নের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে। একই সঙ্গে শিল্প পার্কে ৮২৯টি শিল্প প্লট তৈরি করা হবে যেখানে স্থাপন করা হবে ৫৭০টি শিল্প। এসব শিল্প কারখানায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে দেশের বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জনসাধারণের আয় বাড়িয়ে তথা দারিদ্র বিমোচন এবং প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো, ফ্যাসিলিটিজ ও উপযোগসমূহ প্রতিষ্ঠা করে শিল্প স্থাপনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এসব উদ্দেশ্যই ছিল প্রকল্পটি গ্রহণের মূল লক্ষ্য। কিন্তু বার বার বাস্তবায়নের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর ফলে সরকারের এমন উদ্যোগ এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে নেওয়া বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল ২০১৪ সালের ৩০ জুন। পরে প্রকল্পটিতে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব আনে শিল্প মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ আর ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৪৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এভাবে পরপর কয়েকটি সংশোধনীতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ একবছর করে পেছাতে পেছাতে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে কয়েকবার। সর্বশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা চূড়ান্ত করে একনেক অনুমোদন দিয়েছে।

কমিশন জানিয়েছে, সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় নির্মিতব্য প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিতে প্রকল্পটি ২৬ কোটি কোটি টাকা (সম্পূর্ণ জিওবি) বরাদ্দসহ তারকা চিহ্নিত আকারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় এই শিল্প নগরী গড়ে তুলতে ৪০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্প এলাকায় ডাইক বাঁধ নির্মাণ (৫৭২৩ মিটার) ও বনায়ন করা হবে। ৬ তলা ভিত্তিসহ ৪ তলা অফিস ভবন নির্মাণ (৩০০০ বর্গমিটার) করা হবে। এর বাইরেও পাম্প হাউসসহ পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার, ডাম্পিং ইয়ার্ড, শিল্প পার্কের মেইন গেইট, কার্পেটিংসহ রাস্তা, ২০ একর আয়তন বিশিষ্ট লেক বা রিজার্ভার, গভীর নলকূপ, পানি সরবরাহ লাইন, গ্যাস লাইন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হবে।

কমিশন আরও জানায়, “বিসিক শিল্প পার্ক, সিরাজগঞ্জ (৩য় সংশোধিত) প্রকল্পটি সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সংগতিপূর্ণ। সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পাট, বস্ত্র ও কৃষি শিল্পখাতের সম্প্রসারণ এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হালকা ও ভারী শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং রফতানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে অবকাঠামো সুবিধাসহ বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে মর্মে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উল্লেখ রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা-৯ এ “অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়নের প্রবর্ধন এবং জাতীয় পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে কর্মসংস্থান ও জিডিপিতে শিল্পখাতের অংশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এই খাতের অবদান দ্বিগুণ করা” হবে মর্মে উল্লেখ রয়েছে। এসব কারণে আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, শিল্পায়ন বৃদ্ধি এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বিধায় প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা-৯ এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ।

একনেকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিরাজগঞ্জ শিল্প পার্কে ৫৭০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইউনিট স্থাপন করা সম্ভব হবে। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দেশের দারিদ্র হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যেহেতু প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ এবং ইতোমধ্যে ৫২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে (যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ) এবং অবশিষ্ট কাজ প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেহেতু প্রকল্পটি সুষ্ঠু বাস্তবায়নের স্বার্থে প্রকল্পের মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে আরও বছর বৃদ্ধি করা যায়।

এমতাবস্থায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিসিক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বিসিক শিল্প পার্ক, সিরাজগঞ্জ (৩য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ ৪র্থ বার ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে বছর অর্থাৎ জুন ২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক-এর অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

প্রকল্পটি প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউই কোনও ধরণের মন্তব্য করতে সম্মত হননি। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, যেহেতু কোভিডের কারণে সারা বিশ্বই থমকে ছিল সেখানে প্রকল্পটির কার্যক্রম থেমে থাকা বড় কোনও ঘটনা নয়। এ ছাড়াও ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতিও এর জন্য দায়ী। তবে আশা করছি আগামীতে নির্ধারিত মেয়াদেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হবে।

তিনি জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেখানে শিল্প কারখানা স্থাপিত হবেএবং এর মধ্য দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]