18295

05/06/2025 দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ৫ জনের একজন

দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ৫ জনের একজন

রাজটাইমস ডেস্ক:

২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৮

দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অর্থাৎ দেশের প্রায় প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজনের খাদ্য গ্রহণে অনিশ্চয়তা রয়েছে। চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন প্রতি ১০০ জনের মধ্যে একজন। সিলেট বিভাগের মানুষের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি, আর সবচেয়ে কম খুলনা বিভাগে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২-এ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল বুধবার জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মো. কাউছার আহমেদ। বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।

বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়লেও দেশের মানুষের ক্যালরি গ্রহণের হার বেড়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অপুষ্টিতে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

বিবিএসের জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২১ দশমিক ১১ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ১ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষ। দেশের ৭৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ মানুষের খাদ্য নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৭৯ জনেরই খাদ্য গ্রহণ নিয়ে কোনো শঙ্কায় নেই।

এদিকে দেশের অধিকাংশ খাবার উৎপাদন হয় গ্রামে। অথচ গ্রামের মানুষের মধ্যেই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাম এলাকাগুলোতে ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে, বিপরীতে শহর এলাকায় এ হার ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এমনকি চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা অধিকাংশ মানুষও গ্রামেই থাকেন। গ্রামে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ১ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ, শহরে এ হার শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে। এ বিভাগের ২৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এর পরই রয়েছে রংপুর বিভাগ। রংপুরের ২৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের বসবাসের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে সিলেট এবং রংপুর বিভাগ। জরিপের তথ্যানুযায়ী, রংপুরে মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও সিলেট বিভাগে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ মানুষ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে।

জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকলেও খুলনা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে কম। খুলনা বিভাগে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ১৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ মানুষ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী। এ বিভাগের ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।

দেশে বৈষম্য উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা ৭০-৮০ এর দশকে দারিদ্র্য বৃদ্ধি নিয়ে যে উদ্বেগে ছিলাম, এ উদ্বেগ এখন অন্যদিকে দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে বৈষম্য বাড়ছে। দেশের মোট আয়ের ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ উচ্চ আয়ের মানুষের হাতে আবদ্ধ হয়ে আছে। যেখানে নিম্ন আয়ের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মাত্র ১৮ শতাংশ আয়। তাই বৈষম্য এখন দারিদ্র্যের চেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, জরিপে বৈষম্যের এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনা অঞ্চল। অথচ সেখানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে কম। তিনি বলেন, দেশের দারিদ্র্যসীমায় থাকা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষের বাইরেও ঝুঁকিতে রয়েছে বহু মানুষ। দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষকে দ্রুত হিসাবে আনা উচিত। দেশে প্রতি পাঁচজনে একজন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকার বিষয়টি অবশ্যই চিন্তার বিষয়।

তিনি বলেন, দারিদ্র্য কমানোর প্রক্রিয়ায় দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা বেশি জরুরি। কারণ, হঠাৎ যে কোনো ধরনের আঘাতে তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। তাদের সুরক্ষা দিতে পারলে দারিদ্র্যবিমোচন টেকসই হবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]