2231

05/19/2024 ভ্যাকসিন প্রয়োজন কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি গুরুত্বপূর্ণ

ভ্যাকসিন প্রয়োজন কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি গুরুত্বপূর্ণ

রাজটাইমস ডেক্স

৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৩১

ভ্যাকসিন আমাদের প্রয়োজন কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিধির ওপরই গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ করোনাভাইরাস সহজে নির্মূল হওয়ার নয়, তবু তা নির্মূলে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন (টিকা) সহায়তা করবে। তবে সামনের দিনগুলোতে আমাদের করোনার সাথেই বসবাস করতে হবে। করোনাভাইরাস ও করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এভাবেই মন্তব্য করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা: এম মোজাহেরুল হক।
গতকাল বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে করোনার ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশের করণীয় এবং কীভাবে বাংলাদেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, করোনার প্রকোপ কমাতে ভ্যাকসিন লাগবে এবং তা হতে হবে মানসম্মত, কার্যকর। একই সাথে বাংলাদেশের পরিবেশে অনেক দিন যেন সংরক্ষণ করা যায় সে ধরনের ভ্যাকসিনই আমাদের লাগবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার (অক্সফোর্ডের ল্যাবে তৈরি) ভ্যাকসিন বাংলাদেশের জন্য খুবই ভালো হতো। কারণ এটা যেমন কমমূল্যে পাওয়া যেতো আবার এটা দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে সংরক্ষণ করা যেতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে রিপোর্ট আমাদের হাতে আছে তা হচ্ছেÑ অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিনটি সবচেয়ে কম কার্যকর (লিস্ট ইফেক্টিভ)। আবার ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন এবং মডার্নার ভ্যাকসিন যথাক্রমে ৯৪.৫ শতাংশ এবং ৯৪ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। অপর দিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কম কার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় তারা নতুন করে ট্রায়াল শুরু করেছে। সে ট্রায়াল কবে শেষ হবে এবং সামনের ট্রায়ালে এটা কতটুকু কার্যকর প্রমাণিত হবে তা নির্ভর করছে তাদের নির্ভুল গবেষণার ওপর।

অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন পেতে সরকার বেক্সিমকোর সাথে একটি চুক্তি করেছে। তড়িঘড়ি করে এ চুক্তিটি সরকার না করলেও পারত। কারণ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির (আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সংগ্রহ জোট) বিনিয়োগেই তৈরি হচ্ছে। এ কারণে দরিদ্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ মানুষের জন্য বিনামূল্যেই ভ্যাকসিনটি পাওয়া যেত। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর এমন একটি ভ্যাকসিন আমাদের দরকার, যা আমাদের পরিবেশে আনা-নেয়া, সংরক্ষণ করার উপযোগী এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবহন করার উপয়োগী এবং তা হতে হবে কার্যকর।

তিনি বলেন, ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার ভ্যাকসিন কার্যকর প্রমাণিত হলেও তা বাংলাদেশের জন্য উপযোগী নয়। কারণ ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মডার্নার ভ্যাকসিন মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের দেশে এত কম তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেই। অন্য দিকে, ফাইজারের ভ্যাকসিন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পাঁচ দিনের মধ্যেই এনে মানুষকে দিয়ে দিতে হবে এবং মডার্নার ভ্যাকসিন ৩০ দিনের মধ্যেই দিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে কার্যকারিতা থাকবে না। আবার সে ধরনের বিমান পরিবহন ও সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণের ড্রাই আইস স্যুটকেসের প্রশ্নও আছে। বিমান পরিবহন ও ড্রাই আইস স্যুটকেসের মূল্যও পরিশোধ করতে হবে। ফলে এই দুটো ভ্যাকসিনের যে মূল্য দাঁড়াবে তা অনেক। তবে তিনি বলেন, ফাইজার অথবা মডার্না কোনো কোম্পানির ভ্যাকসিনই এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রয়োগের জন্য অনুমোদন করেনি; যদিও আগামী সপ্তাহ থেকে ব্রিটেন ফাইজারের ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করতে শুরু করবে। ব্রিটেনের ওষুধ নিয়ন্ত্রকারী সংস্থা ‘ইউকে এমএইচআর’ ফাইজারের ভ্যাকসিনটি অনুমোদন করেছে।

অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, মনে রাখতে হবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কিন্তু ওষুধ নয়। এ কারণে সামনের দিনগুলোতে আমাদের করোনাভাইরাসের সাথেই বসবাস করা শিখতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। জনগণের যে অংশটি স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাচ্ছে না সরকারের উচিত তাদেরকে আইন প্রয়োগ করে মানাতে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে তা হয়েছে মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি সম্বন্ধে শৈথিল্য চলে আসায়। শীতের কারণে হয়তো বৃদ্ধ ও অসুস্থদের মৃত্যু বাড়তে পারে; কিন্তু শীতের কারণে ভাইরাস বেড়ে যাওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, করোনার বিরুদ্ধে মাস্ক খুবই কার্যকর। কিন্তু বাজারে যে মাস্কগুলো আছে সেগুলোর বেশির ভাগই কার্যকর নয়। সরকারের উচিত মানসম্মত মাস্কের মানদণ্ড ঠিক করে দেয়া। একটি ভালো মাস্ক সব সময় ব্যবহার করলে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তিনি এ ব্যাপারে পরামর্শ দেন- মানদণ্ড ঠিক করে দেয়ার পর অন্য সব মাস্ক নিষিদ্ধ করে দেয়া উচিত বৃহত্তর স্বার্থে।

ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফেই চলছে করোনা : দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়েছিল এ বছরের ৮ মার্চ। করোনায় মারা যাওয়ার শুরু তার ১০ দিন পর ১৮ মার্চ থেকেই। এরপর কিছুটা ধীরে চললেও শনাক্ত ও মৃত্যুতে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা যায় মে মাসের দিকে। জুনে সেটি আরো বেড়ে যায়। জুলাইতে গিয়ে এটি স্থিতিশীল পর্যায়ে অবস্থান করে আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনা শনাক্ত নিচের দিকে ধাবিত হয়। স্বস্তির সুবাতাস বইতে থাকে সরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। কিন্তু নভেম্বরের শেষ দিকে শনাক্ত আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়। ডিসেম্বরে এসে তা ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানেই রয়ে যায়। শেষ চার দিনে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন দুই হাজারের ওপর থাকছে, তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও থাকছে ৩০-এর ওপর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৫ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছে ছয় হাজার ৭৪৮ জন। অন্য দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৩১৬ জন। এখন পর্যন্ত চার লাখ ৭১ হাজার ৭৩৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ সময়ে সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৫৯৩ জন, এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ তিন লাখ ৮৮ হাজার ৩৭৯ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার দেয়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর আরো জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮৩৮টি, নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০৭টি। এখন পর্যন্ত ২৮ লাখ ২০ হাজার ৯৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শনাক্ত বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনায় ১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থ হয়েছেন ৮২ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং মারা গেছেন ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

গত ১৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ এবং ১২ জন নারী। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ হাজার ১৬৪ জন পুরুষ এবং এক হাজার ৫৮৪ জন নারী মারা গেছেন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ষাটোর্ধ্ব বয়সী ২৩ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ২১-৩০ বছরের মধ্যে একজন এবং ১১-২০ বছরের মধ্যে একজন মারা গেছেন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল ঢাকা বিভাগে ২২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে তিনজন, রাজশাহীতে একজন, বরিশালে একজন, রংপুরে তিনজন এবং ময়মনসিংহে পাঁচজন মারা গেছেন।

চট্টগ্রামে ২৩১ করোনা রোগী শনাক্ত
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ২৩১ জনের করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। নতুন শনাক্তদের মধ্যে ২০৮ জন নগরীর ও ২৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। গতকাল বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জন ডা: শেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৮০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছে ২৩১ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হয়েছেন ২৫ হাজার ৮২৫ জন। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৫৩৭ জন নগরীর ও ছয় হাজার ২৮৮ জন উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দা। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় মারা গেছেন মোট ৩২০ জন।

সিভিল সার্জন জানান, ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষায় ৫৩ জনের, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩ জনের, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ৫৪ জনের, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ জনের, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ২৮ জনের, শেভরনে ২৮ জনের, মা ও শিশু হাসপাতালে পাঁচজনের এবং আরটিআরএলতে ২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

সূত্র: নয়া দিগন্ত

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]