27556

06/06/2025 এক রক্ত বালক রাজু

এক রক্ত বালক রাজু

মোহাম্মদ সাদ, ইবি

৩ জুন ২০২৫ ১৯:৩০

রবিউল ইসলাম রাজু। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ের ব্যস্ততার ফাঁকে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন তিনি।

তবে মানবসেবার বিনিময়ে গ্রহণ করেন না কোনো সুবিধা। মানুষের উপকার ও মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতেই যেন সুখ খুঁজে পান এ যুবক।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার অনেক মানুষের কাছে আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছেন এ রাজু। বিপদ-আপদে সর্বদা মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে দ্বিধাবোধ করেন না তিনি। বিশেষ করে রক্ত লাগলেই এলাকার মানুষজন ছুটে আসেন তার কাছে। কখনোই রক্ত দিতে মানা নেই তার। এ পর্যন্ত ১৫ জনকে রক্ত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। শুধু দেয়া নয় সকাল কিংবা বিকেল যে কোনো সময়েই ম্যানেজও করে দেন রক্ত।

এ রক্ত দেয়াকে তিনি ‘লাল ভালোবাসা’ বলে আখ্যায়িত করেন। আর এ ভালোবাসায় রাজু খুঁজে নেন নিজের সুখ। তাই তাকে অনেকেই ডাকেন ‘রক্ত বালক’ বলে।

এদিকে তার গ্রামে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্কুল-মাদরাসা ও মসজিদে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের মত কাজও করে আসছেন তিনি।

এছাড়া টাকার অভাবে চিকিৎসা না করাতে পারা সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষজন এবং অর্থাভাবে পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদেরও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন এ যুবক।

রাজুর বন্ধু ইমন হোসেন জানান, ‘রাজু মানুষের যে কোনো বিপদে বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়াতে পারলেই যেন সুখ খুঁজে পায়। নিজেকে সে সৌভাগ্যবান মনে করে। অনেকেই তাকে রক্ত বালক বলে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এছাড়া সে তার ব্যবসার ক্ষতি বিবেচনা না করে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখে। মাঝেমধ্যেই নিজের দোকান বন্ধ করে মানুষের জন্য ছুটে চলেন অবিরাম।’

তিনি আরো জানান, ‘অসচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা ও পড়ালেখার খরচ না চালাতে পারা এমন অনেক মানুষের পাশে সে দাঁড়িয়েছে। এজন্য সে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা নিয়ে থাকে। রাজু সর্বদা সমাজের দর্পণ হয়ে কাজ করতে চায়।’

এদিকে মানুষের জন্মের মধ্যেই সাহায্যের হাত সীমাবদ্ধ করেননি এ যুবক। মৃত মানুষের পাশেও দাঁড়িয়ে পড়েন। কেউ মারা গেলে তার কবর খননের দায়িত্বটাও কাঁধে তুলে নেন তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম রাজু অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘রক্ত দেয়াকে আমি মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচনা করি। এটি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকমূলক এসব কাজের পাশাপাশি আমি এলাকায় যুবকদের নিয়ে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজনও করে থাকি। এসব কাজ আমাকে মানসিক প্রশান্তি দেয়।’

এ যুবক আরো বলেন, আমার ইচ্ছা হয় মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পাশে থাকার। এমনকি মানুষের মৃত্যুর পর তার গোরস্তানের কবর খননকে আমি মহৎ কাজ হিসেবে দেখি। আমি চাই সমাজের সকল সমস্যায় যুবকেরা এগিয়ে আসুক। এতে দেশটা সুন্দর হয়ে উঠবে। পরে যেন প্রতিটি মানুষের মনে এ মাটিতে হাজারো বছর বেঁচে থাকার আকুতি জন্মায়।’

রাজুর মতো সমাজে বেড়ে উঠুক আরো হাজারো রাজু...!

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]