27827

07/04/2025 গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনি ১৫৮০ ডাক্তারকে হত্যা করল ইসরাইল

গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনি ১৫৮০ ডাক্তারকে হত্যা করল ইসরাইল

রাজটাইমস ডেস্ক

৩ জুলাই ২০২৫ ২৩:৫০

গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৫৮০ ফিলিস্তিনি ডাক্তারকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গণহত্যা শুরুর পর থেকে ইসরাইল গাজায় ১ হাজার ৫৮০ ডাক্তারকে হত্যা করেছে।

ইসরাইলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় ডাক্তার ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে, তা নির্মূল যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা ও লক্ষ্যবস্তুকরণ বর্বরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এসব হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন।

ইসরাইল যখন কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়াকে গ্রেফতার করে, তখন তারা ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. মারওয়ান সুলতানকে তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানসহ হত্যা করে। চিকিৎসা ও মানবিক অঙ্গনের এই নেতাদের ওপর হামলা ইসরাইলের অপরাধের তালিকায় আরেকটি রক্তাক্ত অধ্যায় যোগ করেছে।

এই ঘটনাগুলো কর্মী ও ব্লগারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ডাক্তারদের হত্যা কেবল তাদের কণ্ঠ রোধ করতেই নয়। বরং অবরুদ্ধ গাজার জীবন, জ্ঞান ও মানবতার চেতনাকে নিঃশেষ করতেই এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. মুনির আল-বারাশ দুই শহীদ চিকিৎসকের প্রতি শোক প্রকাশ করে বলেন, ’আমি তাদের জন্য কাঁদি, চোখের পানি দিয়ে নয়, আত্মার অশ্রু দিয়ে। আমরা কাঁদি রক্ত দিয়ে। কারণ, তারা কেবল সহকর্মী নয়। ছিলেন হৃদয়ের আলো, অন্ধকার সময়ের সঙ্গী।’

ডা. আল-বারাশ এক ছবির কথা উল্লেখ করেন, যেখানে দুই শহীদ ডা. আদনান আল-বারাশ ও ডা. মারওয়ান সুলতান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন, যেমন তারা সর্বদা চিকিৎসা ও মর্যাদার ক্ষেত্রে থেকেছেন। তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে লুকিয়ে থাকা জীবন রক্ষার শপথে দৃঢ় থেকেছেন, ক্ষত-বিক্ষত জাতির দেহের ব্যান্ডেজ হয়ে উঠেছেন।

তিনি বলেন, ’তারা শহীদ হয়েছেন বীরদের মতো—গৌরবের পাতায় নয়, বরং নরকের মতো পরিবেশে, যেখানে শুধু আহতদের আর্তনাদ ও শিশুদের কান্না শোনা যায়।’

কর্মীরা এই গণহত্যার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ লিখেছেন, ’ইসরাইল প্রথমে এক হাসপাতাল পরিচালকের হাতকড়া পরায়। এরপর আরেকজনকে তার পরিবারসহ হত্যা করে। এটা স্পষ্ট বার্তা- তাদের কাছে ডাক্তার, প্রতিরোধ যোদ্ধা বা সাধারণ বেসামরিক নাগরিকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’

একজন ব্লগার লিখেছেন, ’গাজার একজন ডাক্তারও খুনির নিশানা, যেমন একজন প্রতিরোধ যোদ্ধা, কিংবা যিনি আটার বস্তা বহন করেন। এক হাসপাতাল পরিচালক জেলে, আরেকজন তার ঘরে নিহত; হত্যাকারীরা সব আইনের ঊর্ধ্বে।’

অনেকে বলেছেন, জীবন রক্ষায় আত্মনিবেদিত একজন ডাক্তারকে হত্যার পেছনে ইসরাইলের কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে চলমান গণহত্যার শিকার মানবিক পেশাজীবীদের তালিকায় আরেকটি নাম হিসেবে।

অনেক ব্লগার নিহত ডাক্তারদের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ’এটি কোনো সাময়িক দৃশ্য নয়। বরং একটি জীবন্ত দলিল। গাজার চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকে নিশানা করে চালানো এক ভয়াবহ গণহত্যার প্রমাণ।’

তারা ব্যাখ্যা করেন, ছবিটি ছিল গাজার মেডিসিন অনুষদের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানের, যেখানে চিকিৎসা ও জ্ঞানের চার স্তম্ভ দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত ভবিষ্যৎ চিকিৎসককে অনুপ্রাণিত করে, যারা আজ ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যেও মানুষের পাশে থেকেছেন। আজ তারাই ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর হাতে শহীদ।

টুইটার ব্যবহারকারীরা উল্লেখ করেছেন, এই হত্যাকাণ্ড শুধু কণ্ঠরোধ নয়। এটি ভবিষ্যৎ ধ্বংস, যা আহতের সেবা থেকে সমাজকে বঞ্চিত করে, শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থীকে ছিন্ন করে এবং ফিলিস্তিনি মননকে নিঃশেষ করে, যে মন বরাবরই জ্ঞান ও দৃঢ়তা দিয়ে প্রতিরোধ করেছে।

একজন কর্মী লিখেছেন, ’এটি শুধু গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়। বরং জীবন, জ্ঞান, মর্যাদা ও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ—যারা অস্ত্রের বদলে ক্ষতের চিকিৎসা করাকে বেছে নিয়েছে।’

ব্লগারদের মতে, গাজার ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের ওপর হামলা ইসরাইলের সুপরিকল্পিত গণহত্যার অংশ, যেখানে আন্তর্জাতিক নীরবতা এক লজ্জাজনক বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে।

সূত্র: আল জাজিরা

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]