29095

11/01/2025 ববি ক্যাম্পাসে ছাতিমের ঘ্রাণে ভরে ওঠে হেমন্তের আকাশ

ববি ক্যাম্পাসে ছাতিমের ঘ্রাণে ভরে ওঠে হেমন্তের আকাশ

রিফাত হোসেন, ববি প্রতিনিধি:

১ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:২৪

মানুষের অনুভূতির জগতে ফুলের প্রতি ভালোবাসা যেন এক চিরন্তন সুর। তবে সেই সুরের মধ্যে ছাতিম ফুলের ঘ্রাণের নিজস্ব এক জাদু আছে—যা প্রকৃতির কোমল হাতছোঁয়ায় জন্ম নেয়। হেমন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে যখন ছাতিম ফুল গাছে গাছে ফোটে, তখন তার মিষ্টি ও মোহনীয় সুবাসে চারদিকের বাতাসও যেন নতুন প্রাণে ভরে ওঠে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত আঙিনায়- ছড়িয়ে পড়েছে এক অনির্বচনীয় স্নিগ্ধতা। পথচারী থেকে শুরু করে প্রকৃতিপ্রেমী, সবাই যেন থমকে যায় এই মায়াময় ঘ্রাণের টানে।

ছাতিমকে বলা হয় হেমন্তের অগ্রদূত। প্রতিবছরই শহর থেকে শুরু করে বন্দর, মফস্বল কিংবা পাড়াগাঁয়ে এর সরব উপস্থিতি দেখা যায়।  এই ফুলের ঘ্রাণের ব্যাপ্তি এতই বেশি যে তাকে এড়ানোর সুযোগ নেই। 

গাছজুড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ হালকা ঘিয়ে রঙের ফুল ফোটে। হেমন্তের শুরুতে ছাতিম গাছে ফুল আসে এবং হেমন্তের সন্ধ্যায় এর তীব্র সুবাস চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, যা এই ঋতুকে চিহ্নিত করে।এর সুবাস এতটাই তীব্র যে তা সহজেই পথচারী এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে। 

হেমন্তের সন্ধ্যার আবেশ ছাতিম ফুল ছাড়া প্রায় অপূর্ণ মনে হয়। রতের বেলায় চাঁদের আলোয় এর সুগন্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। তবে এরকম অনেকে আছেন যারা ফুলের গন্ধে অস্বস্তি বোধ করেন। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য ছাতিম ফুল অনেক সময় ক্ষতিকর হয় পরে।

ছাতিম একটি চিরসবুজ, সপুষ্পক ও বহুবর্ষজীবী বৃক্ষ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Alstonia scholaris। এটি অ্যাপোসাইনেসি (Apocynaceae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উষ্ণ অঞ্চলে এর স্বাভাবিক বিস্তার দেখা যায়। ইংরেজিতে একে ‘Blackboard Tree’ বা ‘Devil’s Tree’ শয়তান গাছ নামে ও ডাকা হয়। গাছটি সাধারণত ২০ থেকে ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে ওঠে।

এর পাতাগুলো মোটা, চকচকে ও সবুজাভ—উপরের অংশে মসৃণ উজ্জ্বলতা এবং নিচের দিকে হালকা ধূসর আভা বিদ্যমান। পাতা সাধারণত ১০–১৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়। ছোট ও হালকা ঘিয়ে রঙের ফুলগুলো গুচ্ছবদ্ধভাবে ফোটে, যেগুলো থেকে ছড়ায় মিষ্টি স্নিগ্ধ ঘ্রাণ, যা বাতাসে এনে দেয় এক অনন্য প্রশান্তি।

এর ঔষধি গুণের মধ্যে রয়েছে হাঁপানি, জ্বর, একজিমা, আমাশয়, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ক্ষত সারাতে সাহায্য করা। এছাড়া ছাতিম গাছের কষ ও বাকলও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি আয়ুর্বেদিক ঔষধেও ব্যবহৃত হয়। 

ছাতিম ফুলের নীরব সুবাসে লুকিয়ে আছে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। সাদা পাপড়ির মতো নির্মল এই ফুল যেন প্রকৃতির শান্ত মুখচ্ছবি। দিনের কোলাহল শেষে ছাতিমের ঘ্রাণ যখন বাতাসে মিশে যায়, তখন মনে হয়—প্রকৃতির সৌন্দর্য আসলে সরলতায়, আর সেই সরলতারই নাম ছাতিম।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]