12/02/2025 আরবী বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে স্বজন প্রীতির অভিযোগ
রাবি প্রতিনিধি:
২ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:০১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আরবি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে স্বজন প্রীতির অভিযোগে করেছেন কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) বেলা ৪টায় বিশ্বিবদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা। এর আগে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, "আরবী বিভাগে নিয়োগ-সংক্রান্ত একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগের সুনাম, একাডেমিক পরিবেশ এবং ন্যায়ভিত্তিক নিয়োগনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কিছু প্রার্থীকে আঞ্চলিকতা, ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা, রাজনৈতিক পরিচয়, অর্থনৈতিক লেনদেন, এমনকি অনৈতিক আচরণের পরও প্রশাসনিক সহানুভূতির সুযোগ নিয়ে বিভাগে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্র ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে যে, প্রভাবশালী ব্যক্তি, অতীত প্রশাসনের নির্দিষ্ট অংশ এবং রাজনৈতিক পরিচয়ধারীরা এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছেন। এমনকি অর্থের বিনিময়ে বিভাগীয় শিক্ষককে প্রভাবিত করার চেষ্টার অডিও ফাঁস হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
পাশাপাশি, ক্যাম্পাসের আদর্শিক পরিবেশের পরিপন্থী কাজ, নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর সক্রিয় তৎপরতা বা ব্যক্তিগত নৈতিক স্খলনের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও কিছু প্রার্থীকে বিশেষ পরিচয়ের ভিত্তিতে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে বলেও অভিযোগ ওঠে।
তারা এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচটি জরুরি দাবি পেশ করেছেন। তাঁদের প্রধান দাবিগুলো হলো—নিয়োগ-সংক্রান্ত এসব অভিযোগের অতি দ্রুত স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত-কমিটি গঠন করা এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বা সুপারিশসমূহ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা।
তদন্ত কমিটিতে যেন অরাজনৈতিক, নীতিসংগত ও অভিজ্ঞ শিক্ষক প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত থাকেন এবং আঞ্চলিকতা, রাজনৈতিক পরিচয়, অর্থনৈতিক লেনদেন বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলে তা যেন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। ভবিষ্যতে যেকোনো নিয়োগে স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা দিতে একটি ট্রান্সপারেন্ট রিক্রুটমেন্ট প্রটোকল (TRP) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
এ সময় এক সাবেক শিক্ষার্থী ড. নুরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা জেলা থেকে ৮টি পদের মধ্যে ৫–৬টি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে স্বজনপ্রীতি হয়েছে। আমরা আরও আশঙ্কা করছি যে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল; নাহলে একটি অঞ্চল থেকেই সব ক্যান্ডিডেট কেন আসবে? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এত মেধাবী শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও তারা কেন নির্বাচিত হলো না?
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি স্পষ্ট যে এখানে স্বজনপ্রীতি অথবা প্রশ্ন ফাঁস—এ দুইয়ের যেকোনো একটি ঘটেছে, বিশেষ করে যখন চেয়ারম্যান ও সিন্ডিকেট সদস্য দুজনেই একই অঞ্চলের। তাই এই নিয়োগ বোর্ডের যথাযথ ও সুষ্ঠু তদন্ত করা জরুরি। আমরা চাই যোগ্য ও মেধাবীরাই এখানে সুযোগ পাক; মেধার সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না।
আরেক সাবেক শিক্ষার্থী ড. মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে আমাদের যে আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল যে স্বচ্ছ, ন্যায়, বৈষম্যহীন ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে। কিন্তু এ নিয়োগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কথাগুলো ছড়িয়েছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে এটা পুরো জাতির সাথে প্রহসন হয়ে যাবে। এখানে শুধু স্পেসিফিক ভাবে একটা জেলা থেকে নিয়োগ হচ্ছে সেটা হচ্ছে পিরোজপুর।
রাবির আরবি বিভাগে ২০১৩ সালের পর থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো নিয়োগ হয়নি।।এইখান থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বের হয়েছে যারা শিক্ষক হওয়ার যোগ্য। কিন্তু তারা কোন অদৃশ্য কারণে নিয়োগ হয়নি, এটা আমাদের জানা নেই। আমাদের দাবি একটাই যতক্ষণ না সুষ্ঠু তদন্ত হবে ততক্ষণ এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে হবে।