12/08/2025 ত্রয়োদশ নির্বাচনকে ঘিরে রাজশাহীতে ভোটের মাঠ সরগরম
মহিব্বুল আরেফিন
৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:০৭
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর ভোটের মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। রাজশাহীর সংসদীয় ৬ টি আসনেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-জামায়াত। বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই ৪ টি আসনে তীব্র হয়েছে দলীয় কোন্দল। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে স্থানীয় বিএনপির ৪টি আসনের নেতা-কর্মীরা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ এমন কি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন। এনিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্থ অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। আর সাংগঠনিক ভাবে শক্ত অবস্থানে থেকে নির্বাচনী প্রচার ও প্রস্তুতিতে সার্বিকভাবে এগিয়ে রয়েছে জামায়াত। রাজশাহী জুড়ে প্রার্থীরা জনসংযোগ, ব্যানার, ফেসটুনসহ পোষ্টারের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গণসংযোগকালে তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ভোট ও সমর্থন প্রার্থনা করছেন।
রাজশাহী বিএনপি এবং জামায়াতের ঘাঁটি বলে পরিচিত। তবে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ৯ম সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনের সবকটিতে জয় পান আ’লীগসহ ১৪ দলীয় জোট প্রার্থীরা। আর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের নির্বাচনে পাঁচটি আসনের সবকটিতেই জয় পায় বিএনপি ও চার দলীয় জোট। এর আগে ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতে বিএনপি, একটিতে আ’লীগ ও একটিতে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) জয় পান। এছাড়া ২০১৪ ও ২০২৪ সালের দশম ও দ্বাদশ নির্বাচন বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ প্রধান বিরোধী দলগুলোর বর্জন এবং ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে করে একতরফা জয় পায় আ’লীগ ও তার সমর্থিত প্রার্থীরা। তবে এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন রাজশাহীর সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়া খেলাফত মজলিস রাজশাহী-১ আসন বাদে পাঁচটি আসনে, বাসদ তিনটি আসনে, গণসংহতি আন্দোলন দুটি আসনে ও গণঅধিকার পরিষদ একটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজশাহী-১, রাজশাহী-২ ও রাজশাহী-৬ আসনে প্রার্থী ঠিক করে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদিকে গত ৩ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। ঘোষণা অনুযায়ী, রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে দুইটিতে এসেছে নতুন মুখ, আর ৪ টিতে পুরোনো প্রার্থীরাই টিকিট পান। জেলার ছয়টি আসনে প্রার্থী হয়েছেন, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে মো. শফিক উদ্দিন, রাজশাহী-২ (সদর) আসনে মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী-৩ আসনে শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী-৪ আসনে ডি.এম.ডি. জিয়াউর রহমান, রাজশাহী-৫ আসনে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এবং রাজশাহী-৬ আসনে আবু সাঈদ চাঁদ। এর মধ্যে স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে রাজশাহী-২ (সদর) ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) বাদে বাকি চারটি আসনেই প্রার্থী বদলের দাবি উঠেছে। পাশাপাশি প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিএনপি কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ এসমনকি সংঘর্ষে জড়িয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর রাজশাহীর ৬টি আসনে বিএনপি প্রার্থীরা ঘোষনা করা হয়। এরপর থেকে বিএনপি প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। আর বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থ হবার পর থেকে বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা এক রকম স্থগিত হয়ে আছে। আর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গত ফেব্রুয়ারিতে প্রার্থী ঘোষণার পরপরই জোরে সোরে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। অপর দিকে রাজশাহী-২ আসনে এনসিপি ছাড়া অন্য ৫টি আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), খেলাফত মজলিস, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের কোন প্রচার-প্রচারণা নেই।
গণসংযোগকালে দেখা গেছে বিএনপি এবং জামায়াতের প্রার্থীরা পথচারী, রিকশাচালক, দোকানদারসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লার পক্ষে দোয়া ও ভোট চাইছেন। এসময় সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা নিজ নিজ প্রতীকের লিফলেট বিতরণ করেন। এসময় উভয় দলের নেতৃবৃন্দ, “জনগণের অধিকার, নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচার, সার্বিক উন্নয়ন, যুব-সমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করছেন।
রাজশাহীর ৬টি আসনের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির কোন্দল তীব্রভাবে প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবির আন্দোলনে বিএনপি চরম বিপর্যস্থ অবস্থায় রয়েছে। আর গত ফেব্রুয়ারিতে প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও প্রস্তুতিতে সার্বিকভাবে এগিয়ে আছে জামায়াত। তবে নগরবাসী বলছেন, চুড়ান্ত জনপ্রিয়তা ও ফলাফল উঠে আসবে জনগনের ভোটাধিকারের মধ্য দিয়ে। আর নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার রক্ষায় নির্বাচিত এমপিগণ যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।