4566

04/20/2024 করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আবারো ২৫০০ টাকা করে দেয়ার উদ্যোগ

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আবারো ২৫০০ টাকা করে দেয়ার উদ্যোগ

রাজটাইমস ডেক্স

১৫ এপ্রিল ২০২১ ১৬:০৪

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এই ঢেউ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ‘লকডাউন’ দেয়া হয়েছে। গতকাল শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন। এই লকডাউনের ফলে সমাজের দরিদ্র লোকেরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে আবারো ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই সহায়তা দেয়ার জন্য এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য এর আগে গত বছর মে ও জুন মাসে প্রথমবারের মতো করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদসহায়তা দেয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত বছর মে মাসে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারকে এ ধরনের সহায়তা দেয়া শুরু হয়েছিল। এখন আবার করোনা দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। দেশ কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এই লকডাউনের মেয়াদ সাত দিন বলা হলেও পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ১৪ দিন করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ সাধারণ মানুষ চলাচলেও বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই লকডাউনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সমাজের দরিদ্র মানুষ। কারণ এই সময় তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। এই মানুষদেরই কিছু সাশ্রয় দিতে গতবারের মতো এবার আড়াই হাজার করে নগদ সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গতবার যারা এই সহায়তা পেয়েছে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তারা এবারো এই সহায়তা পাবে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ৩৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে এই সহায়তা প্রদান করব।


সূত্র জানায়, আর্থিক সহায়তা পাওয়ার তালিকা রয়েছে, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নানা পেশার মানুষ।

জানা গেছে, পরিবারগুলোকে টাকা দেয়া হবে মূলত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে বিকাশ, রকেট, নগদের মাধ্যমে এই অর্থ দেয়া হবে। অর্থাৎ নগদ সহায়তা হলেও কাউকে নগদে টাকা দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে এমএফএসগুলো বড় আকারের ভর্তুকি দেবে সরকারকে। টাকা পৌঁছানোর জন্য এমএফএসগুলো পাবে প্রতি হাজারে মাত্র ৬ টাকা। হাজারে ৬ টাকা হিসাবেই পৌঁছানোর মোট খরচ দাঁড়ায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। এ টাকা সরকার বহন করবে। পরিবারগুলোর কোনো টাকা দিতে হবে না। তারা পুরো আড়াই হাজার টাকাই পাবে।


উল্লেখ্য, গত বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ৫০ লাখ দুস্থ মানুষের তালিকা চাওয়া হয়। কিন্তু তাদের পাঠানো ৫০ লাখ দুস্থ মানুষের মধ্যে ২৮ লাখ মানুষের তালিকাই ছিল ভুলে ভরা ও ভুয়া। ফলে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রথম ধাপে ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৫৬ পরিবারে নগদসহায়তা পাঠাতে সক্ষম হয়। এতে সরকারের খরচ হয়েছে ৪০৪ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ভুল তালিকার জন্য বাকি ৩৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৪ পরিবারে নগদ সহায়তা পাঠানো স্থগিত রাখা হয়েছিল।
এর আগে দুস্থ সেজে প্রায় ৫ লাখ লোক সরকারের এই কর্মসূচি থেকে ১২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে এই অর্থ লোপাট বন্ধ করা সম্ভব হয়। ভুয়া তথ্য দিয়ে এই ৫ লাখ মোবাইল নম্বরধারী সরকারের সোয়া ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। অর্থ বিভাগের এক অবস্থানপত্রে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। জানা গেছে, এই ভুয়া তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধি জড়িত ছিলেন।


অবস্থানপত্রে দেখা যায়, ভুয়া তালিকায় নাম এসেছে সরকারি চাকুরে, অন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, পেশা হিসেবে দেখানো হয়েছে বেদে, গৃহিণী, হিজড়া, পথশিশু, প্রতিবন্ধী, ইমাম, চা শ্রমিক, চা দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, বেকার ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে এমন ব্যক্তির নামও ছিল এই তালিকায়। ছিল পেনশনভোগীর নামও।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে নগদ সাহায্য দেয়ার এই প্রক্রিয়াটি কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো তালিকায় নানা গরমিল রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এসব তথ্যের সঠিকতা যাচাই করতে বিভিন্ন তথ্যভান্রেডার সাথে মিলিয়ে দেখে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষাসহ তদন্ত করে। এতে চার লাখ ৯৩ হাজার ২০০ জনের ভুয়া তথ্য পাওয়া যায়। তালিকায় দুই হাজার ৮৫৫ জন সরকারি কর্মচারীর নাম ছিল। পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের মালিককেও দুস্থ দেখানো হয়। এমন মানুষের সংখ্যা ছিল ৫৫৭ জন। ছয় হাজার ৭৮৬ জন সরকারি পেনশনভোগীর নামও ছিল তালিকায়। দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯১৯ জনের ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির নাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার লেখা হয়।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]