6099

04/26/2024 অস্বাভাবিক বন্যা জলোচ্ছ্বাস ভূমিকম্প ও দাবানলের কারণ

অস্বাভাবিক বন্যা জলোচ্ছ্বাস ভূমিকম্প ও দাবানলের কারণ

রাজ টাইমস

৭ আগস্ট ২০২১ ০৩:৪৭

গোটা সৃষ্টিজগত আল্লাহর ইচ্ছা ও হুকুমে চলে। প্রকৃতির ভেতর যত শক্তি রয়েছে সবই আল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, পৃথিবী ও সৌরজগতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর মালিকানা ও কর্তৃত্বাধীন। তোমাদের মনে যা আছে যদি তা প্রকাশ কর অথবা তা গোপনই রাখ, এসবই আল্লাহর হিসাবের আওতায় রয়েছে। তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহ তোমাদের হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন আর যাকে চান শাস্তি দেবেন। আর আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সূরা বাকারা : ২৮৪)।


আল্লাহর বান্দা হিসেবে লক্ষ কোটি ফেরেশতা সৃষ্টি জগতের গতিকে সচল রাখেন। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র, সৌরজগত, পৃথিবী, পাহাড়, সাগর আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে। তারা তাদের অবস্থান গতি ও সেবা অব্যাহত রাখার অনুমতি পাওয়ার জন্য আল্লাহর প্রতি মনোযোগী থাকে। প্রতি মুহূর্তে তারা আল্লাহর তসবিহ পাঠ করে। আল্লাহ বলেন, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কোনো বস্তু নেই যে আল্লাহর প্রশংসার তসবিহ করছে না। কিন্তু তোমরা তাদের তসবিহ বুঝতে সক্ষম নও। (সূরা বনী ইসরাঈল : ৪৪)।


মানুষ আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘন করলে প্রকৃতির ওপর এর প্রভাব পড়ে। গোনাহ বৃদ্ধি পেলে আল্লাহর গজব নাজিল হয়। আবার ঈমান তাওবা নেক আমল এবং দান সদকার কারণে আজাব গজব বালা মুসিবত ফিরেও যায়। হাদীস শরীফে আছে, যখন অশ্লীলতা ব্যাপক আকার ধারণ করে, গান বাদ্য মাদক সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ নির্লজ্জতাকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নানারকম আজাব নেমে আসে। এমনসব রোগ ব্যাধি দেখা দেয় যার সাথে মানুষ আগে পরিচিত ছিল না। (মাজমাউল আহাদীস)।


পবিত্র হাদীস শরীফে কিয়ামতের আলামত সংক্রান্ত আলোচনা অংশে এমন শত শত বর্ণনা রয়েছে যা থেকে বর্তমান বিশ্বের অস্বাভাবিক বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধস, দাবানল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিধ্বংসী রূপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, কিয়ামত সন্নিকটবর্তী হলে পৃথিবীতে নানারকম বালা মুসিবত ও ফিতনা দেখা দেবে। গলার মালা ছিঁড়ে গেলে যেমন একটির পর একটি দানা পড়তেই থাকে, বালা ও ফিতনা এভাবেই মানুষের ওপর ঝরে পড়তে শুরু করবে। ঝড় জলোচ্ছ্বাস বৃদ্ধি পাবে। ভূমিকম্প ভূমিধস ব্যাপক হয়ে পড়বে। নানা প্রান্তে আগুন দাবানল জ্বলতে শুরু করবে। (মিশকাতুল মাসাবিহ; একাধিক হাদীসের মর্ম)।


এসবই মানুষের কৃত জুলুম অত্যাচার, নির্বিচারে দেশে দেশে নিরীহ মানুষ খুন, নারী শিশু রুগ্ন বৃদ্ধ ও নিরপরাধ মানুষ হত্যা, অন্যায় প্রতারণা ও পাপাচারের ফল। অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, মাতলামি ও প্রকৃতির ওপর নানাভাবে সংঘটিত সীমালঙ্ঘনের ফসল। কুফর, শিরক, মোনাফিকি, অশ্লীলতা, জুলুম এবং বৃক্ষলতা, নদ নদী, খাল বিল, নগর সভ্যতার বিরাট বিবর্তন এর নিয়ামক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফলে মানুষ অধিক খনিজ সম্পদ উত্তোলন, প্রকৃতির পাহাড় বন ধংস, বিষাক্ত বাতাস নিঃসরণ, জ্বালানি ব্যবহারজনিত পলিউশন ইত্যাদির বস্তুগত আঘাতও আল্লাহর দেওয়া স্বাভাবিকত্বের ওপর আক্রমণ চালায় এবং প্রকৃতির সুরক্ষা দেওয়াল ধ্বংস করে। যেমন গোনাহের কারণে নেয়ামতের বরকত চলে যায়।


কিয়ামতের আগে সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়ার কথা হাদীস শরীফে এসেছে। এরপর আর ঈমান আনা বা তাওবার সুযোগ থাকবে না। তাওবা ও ঈমানের দরজা সেদিন বন্ধ হয়ে যাবে। এর আগে বর্তমানে আমরা ছোট্ট কিছু আলামত সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে ধারণা পাচ্ছি। চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসছে। এর প্রভাবে বিশ্বের নানা স্থানে অস্বাভাবিক বন্যা দেখা দিয়েছে। সূর্যের চুল্লি অধিক আগুন বর্ষণ করছে। অধিক বেগুনী রশ্মী পৃথিবীকে উষ্ণ করে তুলছে।


পোলারের বরফ গলছে। বাড়ছে সমুদ্রের উচ্চতা। অনেক স্থলভাগ ও সভ্যতা হুমকির মুখে পড়ছে। জমাট বরফ গলে বহু হাজার বছর আগের মৃত পশুর দেহ থেকে প্রাচীন ভাইরাস বিশ্বের মানুষকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণে গ্রিনহাউজ ইফেক্ট বিশ্বের তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট করছে। দেশে দেশে অনিয়ন্ত্রণযোগ্য দাবানল দেখা দিচ্ছে। অভিনব ভূমিকম্পের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভয়াবহ ভ‚মিধসে বহুদেশ পর্যুদস্ত। যেসব বিষয়ে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলেস্থলে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ ও সমুদ্রে ফাসাদ বা বিপর্যয় প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের সামান্য কিছু কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যেন তারা (অপকর্ম ছেড়ে সঠিক পথে) ফিরে আসে। (সূরা রূম : ৪১)।

সূত্র: ইনকিলাব/এএস

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]