10/11/2024 রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শব্দকলা প্রসঙ্গ
রাজটাইমস ডেস্ক
৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:৫৯
শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার এক উন্মুক্ত উঠোন ‘শব্দকলা’। তরুণ লিখিয়েদের চোখেমুখে স্বপ্নের পরশ বুলিয়ে দেয়াই এর কাজ। সে লক্ষেই ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শব্দকলার পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় ‘শব্দকলা আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব’। বাংলাদেশ ও ভারতের একশো সত্তরজন লেখক এতে অংশগ্রহণ করেন। এ উৎসবসংখ্যা হিসেবেই শব্দকলা প্রকাশ পায়। সম্পাদক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ সম্পাদকীয়তে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন “এটি একটি পরীক্ষামূলক উদ্দ্যোগ বৈকি। অন্ধকারের মিছিল যখন সাহিত্যের অঙ্গণকে গ্রাস করতে উদ্ধত তখন আমরা নতুন করে আলোর সন্ধানে নেমেছি। ‘সাহিত্যে নান্দনিকতা ও মূল্যবোধ’ প্রতিপাদ্য শ্লোগান ধরেই এবারের এ আয়োজন। লিখিয়েদের দায়বদ্ধতার জায়গায় একটুখানি খোঁচা দিয়ে সজাগ করার সুযোগ নিয়ে স্বার্থকতার ভার লেখকদের কাঁধেই ঝুলিয়ে দিলাম।” শব্দকলা মূলত শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ছোটকাগজ।
শিল্পী সাইফ আলির নান্দনিক প্রচ্ছদের এ কাগজে সম্পাদকীয় ছাড়াও এ সংখ্যায় ছাপা হয়েছে সেমিনার প্রবন্ধ হিসেবে ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ’র সাহিত্যে নান্দনিকতা ও মূল্যবোধ। এ ছাড়াও প্রবন্ধ রয়েছে আরো আটিটি। নাজিব ওয়াদুদ’র মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষা ও জাতীয় সংস্কৃতির বিনির্মাণ, জিয়াউল হক’র মূল্যবোধ ও নান্দনিকতার সাহিত্য, ড. ফজলুল হক তুহিন’র ঐতিহ্যবাদী সংস্কৃতি চর্চা ও মনের বিকাশ, ড. সুমী শারমিন’র প্রাচীন বাংলার উৎসব, ড. সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান’র একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা, ড. মো আবদুল ওহাব’র কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য মানবিকতা ও সাম্যবাদী চেতনা, সফিউদ্দীন মোল্লা ভাসানী’র ভালো মানুষ এবং সাকী মাহবুব’র অবহেলা পেয়েও যাঁরা বিশ্ব সাহিত্যের সেরা লেখক।
পাঠের সুবিধার জন্য কবিতাগুলো দুইপর্বে সাজানো হয়েছে। প্রথম পর্বে কবি মনজু রহমান, জালাল উদ্দীন সিদ্দিকী, জাইদুর রহমান, মুকুল কেশরী, জামাল দ্বীন সুমন, রাববানী সরকার, জি. এম. শফি, আমিন মোহাম্মদ, তনিমা মুখার্জী, আশিস কুমার নন্দী, সাবের রাহী, কামরুল আজাদ, খাজা আবদুর রহমান, সোহেল মাহবুব, আব্দুল্লাহ-আল-মামুর, মুহা. জোহরুল ইসলাম, করবী রুবায়েত বিথী, মিনুয়ারা খাতুন, নাজমা মমতাজ, শাহানা ইয়াসমীন মুক্তা, মুকুল চক্রবর্তী, কবীর বাদশাহ, নাসরিন সুলতানা, শফিকুল ইসলাম শফিক, সুরাইয়া বিনতে সোলায়মান, অঞ্জলী রানী দেবী, পারভীন আকতার, ফেরদৌস আরা বেগম, জসিম উদ্দিন বিজয়, মো. হামিদুল ইসলাম, মারজানা সাবিহা শুচি, সন্ধ্যা রানী কুন্ডু, হাম্মাদ নূর, সাইয়্যেদ হাসানুল বান্না, ইমরান সাজিদ, সোহেল রানা জীবন, শাহাদাৎ হোসেন শাকিল, আল মারুফ, মনোয়ারা ইসলাম নিপা, আকরাম হোসেন শুভ, মুহাম্মদ ছালেকুর রহমান।
পরের অংশে সজ্জিত কবিগণ হচ্ছেন, আব্দুল কাইউম, তমসুর হোসেন, শাহনাজ পারভীন, সৈয়দা কামরুন নাহার শিল্পী, এ কে আজাদ, চিত্তরঞ্জন মাইতি, আব্দুর রহমান সিদ্দিকী, মঈন শেখ, অপর্ণা হালদার, আমীর উল রুমী, ববি লায়লা, মমতাজ মহল বুলবুলি, প্রতীক ওমর, জুবাইদা পারভীন লিপি, সুতপা মুখোপাধ্যায়, মনজুরুল আলম, পিনাকী বসু, আলমগীর কবীর হৃদয়, আরিফ মুহাম্মদ, সিরাজুল ইসলাম মুন্টু, তাপস সাহা, পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায়, পম্পা দেব, মোহাম্মদ খয়রুজ্জামান খসরু, শাহাদাৎ সরকার, হামিদা আক্তার শিল্পী, ফারহানা শরমীন জেনী, ইসমায়ারা লাকী, আক্তারী সুলতানা, হাসান ওয়াহিদ, সেলিনা পারভীন রুমা, শাহীন সৈকত, আরাফাত শাহীন, স্নেহাশিস পাল, নয়ন কুমার সাহা, শোয়েব আলী, রুবেল হক নাসির, জয়িতা মাইতি, শ্রাবন্তী মায়া, শাহিনুর রহমান।
পাঁচটি গল্প ছাপা হয়েছে শব্দকলায়। আবু নোমান’র চিঠির পরে, আসাদুল্লাহ মামুন’র সময়ের শোধ, মাতিউর রাহমান’র রাতের আম বাগান, আসাদুজ্জামান জুয়েল’র লিভ টুগেদার, আরিফ মিলন’র একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু। নামফলক কবিতা লিখেছেন মঞ্জিলা শরীফ এবং হাসানুজ্জামান বুলবুল।
ছড়ার পাল্লাও বেশ সমৃদ্ধ। লিখেছেন, অভি মন্ডল, সরদার আবুল হাসান, এরফান আলী এনাফ, কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান আকন্দ, মোস্তফা মোঘল, তৌহিদ সরকার, শরীফ জামিল, নাহিদা আকতার নদী, রেজা ফারুকী, ছন্দা দাশ, এইচ এস সরোয়ারদী, জীবন কুমার সরকার, আবদুল হাই ইদ্রিছী, ইয়াছিন মনির, আমিনা খাতুন লাইলী, ইসাহাক আলী, জাহাঙ্গীর আলম আজাদ, জাহিদ খন্দকার, হাসিনা বিশ্বাস, হাসান আবাবিল, বিউটি বানু, সুলতান মাহমুদ রুপশ, নূরুল হুদা সিদ্দিকী, মুমতারিন জিন্নাত, আসিফ আহমেদ, রোকেয়া রহিম, রবিউল হাসান রবি, মুজাহিদুল ইসলাম সৌরভ, ইমরান আজিম, হোসাইন নজরুল হক, মোস্তফা ফেরদৌস হাজরা। এছাড়াও আলম সিদ্দিকীর একগুচ্ছ হাইকু এবং আমিনুল ইসলাম’র পৃষ্ঠাভরা ‘এক ফোঁটা’ ছাপা হয়েছে। শব্দকলার ইতোপূর্বে অনুষ্ঠানসমূহের খন্ডচিত্র তুলে ধরেছেন ‘শব্দকলা বার্তা’ শিরোনামে। সবশেষে ‘শব্দকলা আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব-২০১৯’ এর কর্মসূচি এবং শব্দকলা সাহিত্য পদকে ভুষিত ২২জন লেখকের তালিকাও দেয়া হয়েছে।
সম্পাদক মাহফুজুর রহমান আখন্দ শব্দকলার সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলেছেন, “বিশ্বায়নের সুবাদে ইতিবাচক উপযোগের চেয়ে নেতিবাচক উপযোগের প্রতিই বেশি ঝুঁকে পড়ছেন আমাদের নতুন প্রজন্ম। পরিণত বয়সের মানুষেরা এ আশংকায় আতঙ্কিত থাকলেও তারাও মনের অজান্তেই সেই বিষাক্ত পথে পা বাড়াচ্ছেন অবলিলায়। এমন সংকট ঘনিভুত হচ্ছে ক্রমশ। সেই প্রেক্ষাপটে সময়ের পথপ্রদর্শক হিসেবে লেখকদের দায়বদ্ধতা আগের চেয়ে বেশি বলেই অনুমিত।” সেই দায়বদ্ধতার প্রতি সুবিচার করার কাজ যথার্থ ভাবেই সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই মনে হয়েছে।
- সালেক সামন্ত