8439

04/30/2025 স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ

স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ

রাজটাইমস ডেস্ক

৩০ জানুয়ারী ২০২২ ১১:৪৬

নাটোরে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে এলে হোসনেয়ারা বেগম (৩৫) নামে গৃহবধুকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে তালাকনামায় স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই গৃহবধুকে আদালত থেকে ফেরার সময় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকা থেকে জোর করে প্রথমে একটি সিএনজি এবং পরে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে সদর উপজেলার লক্ষিপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে তালাকের কাগজে জোর স্বাক্ষর করে নেয়া হয়।

এ সময় দেনমোহর বাবদ দেড় লাখ টাকা তার হাতে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এসময় ভিডিও ধারণ করা হয়।

পরে ওই গৃহবধু ইউপি কার্যালয় থেকে বের হলে হারুন অর রশীদ ও তার লোকেরা পথের মধ্যে থেকে তার কাছে থেকে ওই দেড় লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। ইউপি কার্যালয় চত্বরে খোলা তালাক করান স্থানীয় এক কাজী।

এদিকে জবরদস্তি ও মারপিট করায় আহত হোসনেয়ারা বেগমকে বুধবার সন্ধ্যায় নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে হোসনেয়ারা তার আইনজীবি মকলেছুর রহমান মিলন ও তার খালা ছকিনা বেগমসহ নাটোর সদর থানায় হাজির হয়ে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেন।

এই এজাহার দায়েরের পর পুলিশ ঘটনার প্রধান আসামী হারুন অর রশীদকে আটক করেছে।

হোসেনেয়রা বেগমের আইনজীবি মকলেছুর রহমান মিলন জানান, বড়াইগ্রাম উপজেলার মালীপাড়া গ্রামের ইয়ার আলীর মেয়ে হোসনে আরার সাথে ২০১৭ সালে নাটোর সদর উপজেলার লক্ষিপুর খোলাবাড়িা ইউনিয়নের বড়বড়িয়া গ্রামের আব্দুল আলীর ছেলে ঘৃতকাঞ্চন (ঔষধী ভেষজ) ব্যবসায়ী হারুনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় দেনমোহর হিসেবে ৫ লাখ টাকা ধার্য করা হয়।

বিয়ের পর হারুন তার স্ত্রী হোসনে আরার কাছে থেকে কয়েক দফায় ৭ লাখ টাকা নিয়েছে। সেই টাকা ফেরত চাইলে অস্বীকৃতি জানানোর পাশাপাশি স্ত্রীকে নির্যাতন করতে থাকে। যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে হোসনে আরা তার স্বামী হারুনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিতে বুধবার সকালে নাটোর আদালত চত্বরে আমার সেরেস্তায় আসেন। সেখানে মামলার যাবতীয় প্রস্তুতি শেষে বৃহস্পতিবার মামলাটি আদালতে দাখিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে হোসনে আরা বুধবার দুপুর ২টার দিকে তার খালা সকিনা বেগমকে নিয়ে বনপাড়ায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথে মাদরাসা মোড় এলাকায় গিয়ে বনপাড়াগামী বাসে ওঠে।

এসময় তার স্বামী হারুন সহ ১৩ জন তাকে ওই বাস থেকে জোর করে নামিয়ে নিয়ে প্রথমে একটি সিএনজিতে এবং পরে একটি মাইক্রেবাসে উঠিয়ে লক্ষিপুর খোলাবাড়িা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যায়। সেখানে জোর পুর্বক তালাকের কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে হাতে দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়। তালাকের কাগজে স্বাক্ষর করা সহ টাকা বুঝিয়ে দেওয়া অবধি ভিডিও ধারন করা হয়। পরে তাকে সেখান থেকে গ্রাম্য পুলিশের মাধ্যমে একটি সিএনজিতে তুলে দেওয়া হয়। তবে পথের মধ্যে হারুন ও তার সহযোগীরা হোসনেয়ারার কাছে থেকে ওই দেড় লাখ টাকা কেড়ে নিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী হোসনেয়ারা বেগম বলেন,২০১৭ সালে হারুনের সাথে ঢাকায় কলেমা পড়ে বিয়ে হয়। পরে বনপাড়াতে এসে রেজিষ্ট্রি কাবিন করা হয়। বিয়ের পর থেকে ব্যবসার কথা বলে যৌতুক দাবী করতে থাকে হারুন। ধার হিসেবে সে আমার কাছে থেকে প্রথম দফায় ৫ লাখ এবং দ্বিতীয় দফায় ২ লাখ টাকা নেয় এসময় হারুন তার ব্যবসায় আরো পুজি লাগবে বলে আমার কাছে আবারো ৪ লাখ টাকা দাবী করে। এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শুরু হয় প্রাণনাশের হুমকি সহ নানা নির্যাতন।

স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে বুধবার নাটোর আদালতে গিয়ে স্বামী হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হারুন ও তার সহযোগীরা তাকে অপহরণ করে। তারা আমাকে অপহরণ করে লক্ষিপুর খোলাবাড়িা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায় । সেখানে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তালাকনামায় স্বাক্ষর নেয়া হয়। কেউ আমার আকুতির কর্ণপাত করেনি। তালাকনামায় স্বাক্ষর না করলে আমাকে প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। আমাকে মারপিট করা হলে আমি অসুস্থ হয়ে পরি।

হোসনেয়ারার খালা সখিনা বেগম জানান , তারা বাসে ওঠার পর পরই তাদের বাস থেকে টেনে নামানো হয়েছে। মাদ্রাসা মোড় এলাকায় প্রকাশ্যে ঘটা এই ঘটনা অনেকেই দেখেছেন।
সদর থানার ওসি মুনসুর রহমান বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত হারুনকে আটক করা হয়েছে।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]