8721

03/29/2024 ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে বিতর্ক

ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে বিতর্ক

রাজটাইমস ডেস্ক

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:১৭

১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’, ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। এ দিনটিকে বিশ্বব্যাপী ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী, মা-সন্তান, ছাত্র-শিক্ষক সহ বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ মানুষেরা এই দিনে একে অন্যকে ভালোবাসা জানায়। বর্তমানে বিশ্বে এই দিনটিকে খুবই আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো পরিপূর্ণ থাকে। এই দিনে প্রিয়জনকে সবাই ফুল ও বিভিন্ন উপহার দিয়ে থাকে। বিশ্ব ভালবাসা দিবসে আগে পাশ্চাত্য সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে এই দিবসটি দেশে দেশে আনন্দ উন্মাদনার সঙ্গে পালন হয়। আমরাও এই দিবসটি পালন করে থাকি তবে হয়তো অনেকেই জানিনা দিবসটি কিভাবে বা কোথা থেকে আসলো।

প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। জুনোকে নারী ও প্রেমের দেবী বলে লোকে বিশ্বাস করতো। কারো করো মতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হওয়ার কারণ ছিল এটিই। আবার কেউ বলেন, রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে দেশে বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, কোনও যুবক বিয়ে করতে পারবে না। তার মতে, যুবকরা যদি বিয়ে করে তবে যুদ্ধ করবে কারা? সম্রাট ক্লডিয়াসের এ অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। নাম ভ্যালেন্টাইন। অসীম সাহসী এ যুবকের প্রতিবাদে খেপে উঠেছিলেন সম্রাট।রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই দিনটিকে পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে।

কারও কারও মতে, প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন চিকিৎসক ছিলেন। অসুস্থ মানুষের ওষুধ খেতে কষ্ট হয় বলে তিনি তেঁতো ওষুধ ওয়াইন, দুধ বা মধুতে মিশিয়ে খেতে দিতেন। সেই ডাক্তার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীন রোমে খ্রিস্টধর্ম তখন মোটেও জনপ্রিয় ছিল না। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শাস্তি দেওয়া হতো।একদিন রোমের এক কারা প্রধান তার অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। ভ্যালেন্টাইন কথা দিয়েছিলেন তিনি তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করবেন। মেয়েটির চিকিৎসা চলছিল এমন সময় হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা এসে ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে যায়। ভ্যালেন্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন, খ্রিস্টান হওয়ার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হবে। ২৬৯ বা ২৭০খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার আগে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। তাকে হত্যার পর কারা প্রধান চিরকুটটি দিয়েছিলেন মেয়েটিকে। তাতে লেখা ছিল, ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’। মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল। কারণ, ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধ দু’চোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল।

আরও অনেক গল্প প্রচলিত আছে এই দিনটিকে নিয়ে। যেমন, একজন বিখ্যাত সেইন্ট বা ধর্ম যাজকের নাম থেকে দিনটি এমন নাম পেয়েছে। তবে তিনি কে ছিলেন, এ নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন গল্প। তবে যে গল্পটি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করা হয় তা হলো সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে রোমের একজন পুরোহিত ছিলেন।

আরেকটি ভিন্নমত রয়েছে। এই মতের লোকেরা বলেন, প্রাচীনকালে মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১৪ ফেব্রুয়ারি হলো পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়তে বসে। আবার কেউ বলেন,মধ্যযুগের শেষদিকে মানুষ বিশ্বাস করতো পাখিরা সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। পাখিদের দেখাদেখি মানুষও তাই সঙ্গী নির্বাচন করে এ দিনে।

আবার অনেকের দাবি, রোমান উৎসব থেকে এই দিবসের উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। রোমানদের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে লুপারকালিয়া নামে একটি উৎসব ছিল। এটি ছিল তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বসন্ত মৌসুম শুরু হওয়ার সময়। এই উদযাপনের জন্য সে সময় ছেলেরা একটি বাক্স থেকে মেয়েদের নাম লেখা চিরকুট তুলতেন। যে ছেলের হাতে যেই মেয়ের নাম উঠতো, তারা দু’জন ওই উৎসব চলাকালীন সময়ে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড থাকতেন। অনেক সময় ওই জুটিই বিয়েও সেরে ফেলতেন। পরবর্তী সময়ে, গির্জা এই উৎসবটিকে খ্রিস্টান উৎসবে রূপ দিতে চেয়েছিল। অন্যদিকে সেইন্টকে স্মরণেও ফেব্রুয়ারিতে এই দিবস চালু হয়।

পিছনের ঘটনা যাই হোক না কেন, ভালবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন এ বিষয়ে তেমন কোন মতপার্ক্য নেই।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভালোবাসা দিবস বেশ ঘটা করে পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এদিন পার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, রেস্টুরেন্টগুলো ভালোবাসার মানুষে পরিপূর্ণ থাকে। প্রিয়জনকে সবাই ফুল, চকলেট ও বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে থাকেন। বেশ কয়েক বছর আগেও এই দিবসটি নিয়ে মানুষের মধ্যে এতো আকর্ষণ ছিল না। দিন যতই যাচ্ছে এই দিবস নিয়ে বিভিন্ন দেশে উন্মাদনা বাড়ছে। দিবসটি এতোদিন শুধু পশ্চিমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তবে এখন বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই দিবস।

পঞ্চদশ শতকে ভালোবাসা দিবস জনপ্রিয় হতে শুরু করে। সে সময় একজন আরেকজনকে ভালোবাসার বার্তা জানাতো। এর পর সপ্তদশ শতকে এই দিনে ভালোবাসা প্রকাশ করে কার্ড পাঠানোর রীতি শুরু হয়।

বাংলাদেশে ১৯৮০ এর দশক থেকে এ দিনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলে এই সময়েই শুরু হয় বসন্ত ঋতু। বসন্ত ফুল ফোটার সময়, সেই সাথে বসন্ত প্রেমের সময় বলেও প্রচলিত আছে।

তবে এখানে ভ্যালেন্টাইন্স ডে কেন্দ্রিক বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না । বাংলাদেশের সমাজে অনেকেই মনে করেন এ দিনটি উদযাপন করা সংস্কৃতি এবং ইসলাম ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। আবার অনেকে দেখছেন এটিকে পশ্চিমা সংস্কৃতির অংশ হিসেবে।

ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো: শাহজালাল খান মনে করেন বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন বন্ধ হওয়া উচিত। যুক্তি হিসেবে তিনি বলছেন, এ ধরনের দিবস পালন ইসলাম মোটেও সমর্থন করেনা।

মি: খান বলেন, "এ দিনকে কেন্দ্র করে অনেকে যেভাবে ইসলামকে সম্পূর্ণ অবমাননা করছে, আমাদের এখানেই সবচেয়ে আপত্তি।"

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]