হাসিনার গুলির নির্দেশের ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং যেভাবে যাচাই করেছে বিবিসি

রাজ টাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০২৫ ১১:৫০; আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫ ২৩:০৭

- ছবি - ইন্টারনেট

বাংলাদেশে গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন—এমন তথ্য উঠে এসেছে তার একটি কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংয়ে।

গত মার্চে অনলাইনে ফাঁস হওয়া ওই রেকর্ডিংটি বিবিসি যাচাই করেছে। এতে দেখা যায়, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। নির্দেশনায় বলা হয়, আন্দোলনকারীদের ‘যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে।’

অজ্ঞাত একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের এই অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা তার সরাসরি নির্দেশনার বিষয়টি তুলে ধরে।

জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের মতে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে হওয়া ওই আন্দোলন ও সহিংসতায় অন্তত ১,৪০০ জন মানুষ প্রাণ হারান। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশে যে বিচার শুরু হয়েছে, সেখানে প্রসিকিউশন এই রেকর্ডিংকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের পরিকল্পনা করছে।

তবে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘টেপটি আসল কি না, তা নিশ্চিত নয়।’ ফাঁস হওয়া অডিওটি শেখ হাসিনার কোনো বেআইনি উদ্দেশ্য প্রতিফলিত করে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিবিসিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ১৮ জুলাই রাতে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ওই ফোনালাপটি করেন শেখ হাসিনা। তবে কে এই রেকর্ডিংটি ফাঁস করেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার বিভিন্ন কলের অনেক অডিও ক্লিপ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে, যার অনেকগুলোর সত্যতা যাচাই করা হয়নি। তবে ১৮ জুলাইয়ের রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠস্বরকে শেখ হাসিনার কণ্ঠের সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বিবিসি আলাদাভাবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক অডিও ফরেনসিক সংস্থা ইয়ারশটের মাধ্যমে রেকর্ডিংটির সত্যতা যাচাই করে। সংস্থাটি জানায়, অডিওটিতে কোনো ধরনের সম্পাদনার প্রমাণ মেলেনি। এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে- এমন সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ। ইয়ারশট মূলত মানবাধিকার ও পরিবেশ বিষয়ক অডিও তদন্তে বিশেষজ্ঞ একটি অলাভজনক সংস্থা।

তাদের বিশ্লেষণে জানা যায়, রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছে যেখানে ফোন কলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি ও ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ ছিল। তারা পুরো রেকর্ডিংজুড়ে ‘ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি’ (ইএনএফ) শনাক্ত করে, যা সাধারণত কোনো অডিওতে এডিট না করা হলে উপস্থিত থাকে। এ ছাড়া কণ্ঠস্বরের স্বর, ছন্দ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং নয়েজ স্তরের বিশ্লেষণ করেও তারা নিশ্চিত হন যে অডিওটিতে কোনো রকম পরিবর্তন আনা হয়নি।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেন, ‘এই রেকর্ডিংগুলো শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রমাণ হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো পরিষ্কার, প্রমাণিত এবং অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।’

তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন পরামর্শক, যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। ট্রাইব্যুনালটি এখন পর্যন্ত ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে, যাদের মধ্যে ৭৩ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। আন্দোলনের সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিচার চলছে।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top