18482

04/30/2025 তিন দিকে নজর বিদেশিদের

তিন দিকে নজর বিদেশিদের

রাজটাইমস ডেস্ক:

৪ জানুয়ারী ২০২৪ ১০:৫২

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দুদিন বাকি। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিদেশি কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগীরা এবারের নির্বাচনের বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সরকার ও ইসি অঙ্গীকার অনুযায়ী সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে কি না, সেদিকে গভীর দৃষ্টি রাখছে তারা।

বিএনপিসহ বেশ কিছু দল বর্জনের পরও নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ও ভোটের হার কেমন হয়, সেদিকেও চোখ রাখবে পশ্চিমারা। বিএনপি ও তাদের মিত্রদের নির্বাচনবিরোধী কর্মসূচির ওপরও তীক্ষ্ণ নজর রাখছে বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোসহ পুরো বিশ্বের গভীর নজরে রয়েছে ভোট গ্রহণের দিনটি। নির্বাচনের দিন পরিবেশ কতটা শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত থাকে এবং নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কতটা থাকবে, তাও দেখবেন বিদেশিরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার শুরু থেকেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করছে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির অনড় অবস্থানের পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর পশ্চিমা কূটনীতিকরাও নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেছেন।

তবে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কূটনীতিকরা ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করেন। তারা বিএনপির আন্দোলন ও বর্জনের চেয়ে নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রতি গুরুত্ব দিতে থাকেন। তপশিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম যত এগিয়েছে, বিদেশি কূটনীতিকরাও ততই নির্বাচনের দিকে তাদের দৃষ্টি প্রসারিত করেছেন।

এবারের নির্বাচনে ১ হাজার ৮৯৫ প্রার্থীর মধ্যে ৩৮২ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর অংশগ্রহণ এই নির্বাচন সম্পর্কে বিদেশিদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সহায়ক হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিও বিদেশি কূটনীতিকরা আমলে নিয়েছেন। এখন তারা দেখতে চান ভোটের পরিবেশ ও ভোটার উপস্থিতি।

জানা গেছে, নির্বাচন ঘিরে প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। ইসি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন তারা। প্রতিদিনই বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজ নিজ দেশের সরকারকে অবহিত করছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটদান। পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। ভোট বর্জনের সংস্কৃতির কারণে বরাবরই ভোটের হার ওঠানামা করেছে। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোটের হার ছিল ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও সেবার ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছিল, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিতর্কিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল সবচেয়ে কম ২৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এবারের নির্বাচনে ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিনটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ফোকাসে থাকবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে কি না— সেটি দেখবে বিদেশিরা। অতীতের নির্বাচনে বিতর্কিত ইস্যুগুলো মোকাবিলা করতে পারলে বিদেশিদের কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।’

ভোট গ্রহণের সময় মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যারা নির্বাচন বর্জন করেছে তারা নানাভাবে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও ছবি দিয়ে তারা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করতে পারে। এ ছাড়া প্রভাবশালী প্রার্থী হেরে গেলেও তার কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচন বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইসি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সচেতন থাকতে হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদেশি কূটনীতিক বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের আন্তঃদলীয় কোন্দলের কারণে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনাগুলোতেও তারা উদ্বিগ্ন। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও প্রভাবশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর

কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে তারা সরকার ও ইসির কাছেও উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ইসিও সুষ্ঠু ও অবাধের পাশাপাশি সহিংসতামুক্ত ও ভোটারদের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে গুরুত্ব দিয়ে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ভোট গ্রহণের আগে-পরে পর্যবেক্ষণ করার জন্য ১৮৬ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মী। ইসি মনে করে, সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার পাশাপাশি এবারের নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালও সম্প্রতি বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ হতে হবে। দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট মাথায় রাখতে হবে। বিদেশি প্রতিনিধিরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বারবার দেখা করেছেন, তাদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।’

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের নির্বাচন পর্যবেক্ষক সেল বিদেশি সংস্থা ও বিদেশি সাংবাদিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট তথ্য ও সহযোগিতা দিচ্ছে। বিদেশি বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে।

এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশি কূটনীতিকদের এবং সন্ধ্যায় বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতিসহ নানা বিষয় তুলে ধরার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকার ও ইসির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হবে।

তথ্যসূত্র : দৈনিক কালবেলা 

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]