08/15/2025 ছাত্রশিবিরের জরিপ ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতি চায় না
রাজ টাইমস ডেস্ক
১৫ আগস্ট ২০২৫ ১৮:০৪
বর্তমানে ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতি চায় না। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের অভ্যন্তরীণ এক জরিপে এ পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন—ছাত্ররাজনীতি নিয়ে এই ভীতি দূর করতে ছাত্রশিবির কাজ করছে। বর্তমানে রাজনীতি বিরোধী মত ৮০ ভাগ থেকে ৬০ ভাগে নেমেছে।
বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা সংস্কারে একটি স্বাধীন অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কমিশন গঠন, মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে আলাদা কমিশন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তকরণসহ ৩০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রশিবির।
এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে শিবির সভাপতি বলেন, ফ্যাসিবাদী সংগঠন-ছাত্রলীগের অপরাজনীতি ও জুলুমতন্ত্রের কারণে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে ভীতি তৈরি হয়েছে। এই ভীতি দূর করতে নানাভাবে কাজ করছে শিবির।
ঢাবির হলে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে শিবির সভাপতি বলেন, ছাত্ররাজনীতি সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু কিছু কারণে এই রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন—শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়া যেতে পারে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী যদি হলে রাজনীতি চায় তাহলে ছাত্রশিবিরও দ্রুত কমিটি দেবে। তার আগে শিক্ষার্থীদের মতামত নিতে হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে শিবির সভাপতি বলেন, ছাত্রসংসদ নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলে যে কেউ চাইলে জোট করতে পারেন। আগ্রহ দেখালে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্যানেলে নারী ও অন্য ধর্মের প্রার্থীও থাকবে। নির্বাচন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না-মর্মে ছাত্রদল সভাপতির বক্তব্য ফ্যাসিবাদী। ছাত্রলীগও এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেনি। বন্ধু ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম আবার ভীতি জন্ম দিচ্ছে মন্তব্য করে এই অবস্থান থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের ব্যর্থতা ও সমালোচনা করে শিবির সভাপতি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার প্রণীত একপাক্ষিক ও দুরভিসন্ধিমূলক শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষার মূলোৎপাটনের নীল নকশা গৃহীত হয়।
তিনি বলেন—ফ্যাসিবাদের পতনের পর সবার প্রত্যাশা ছিল যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে একটি কার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ণের উদ্যোগ নেবে। কিন্তু সরকার তা না করে উলটো ফ্যাসিবাদের তৈরি শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। পরে তীব্র জনরোষের মুখে তা স্থগিত করে এবং অতি বিতর্কিত অংশগুলো বাদ দিয়ে অস্থায়ী পাঠ্যসূচি প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
শিবির সভাপতি বলেন, সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিটি করলেও শিক্ষা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। এতে চরম হতাশা প্রকাশ করছি।
অবিলম্বে শিক্ষা সংস্কারের ৩০ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন—ইসলামী মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সমন্বয়ে আধুনিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে। বহুমাত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শিক্ষায় অগ্রাধিকার প্রদান, শিক্ষা বাজেট অগ্রাধিকার, শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক স্কুলিং পদক্ষেপ, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক শিক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
অন্যান্য প্রস্তাবনা হলো—স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন গঠন, নারী শিক্ষার প্রসারে উপর্যুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসন নিশ্চিত ও ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষাঙ্গণ বাস্তবায়ন, যোগ্য ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ গঠন, গবেষণামুখী উচ্চশিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করা, কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি, মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কাঠামোর আধুনিকায়ন, শিক্ষক মূল্যায়নের কার্যকর পদ্ধতি প্রবর্তন করা।
এছাড়া চাকরিতে সমান সুযোগ ও ন্যায়ভিত্তিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ, ছাত্ররাজনীতির যথাযথ চর্চা ও নিয়মিত ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মূলধারার শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তকরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বেকারত্ব হ্রাস, উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়ন ও সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবক-অংশগ্রহণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের প্রস্তাব করা হয়।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রশিবির আশা করে, এই ৩০ দফা সংস্কার প্রস্তাব গৃহীত হলে শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক ত্রুটি দূর হবে; যা সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরিতে ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।