28705

09/13/2025 রাজশাহীতে যৌতুকের দাবিতে স্বামী-শ্বশুরের বিরুদ্ধে গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ

রাজশাহীতে যৌতুকের দাবিতে স্বামী-শ্বশুরের বিরুদ্ধে গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:১০

রাজশাহীর পবা উপজেলার দামকুড়া থানাধীন ঝিনাইপুকুর এলাকায় যৌতুকের জন্য স্বামী-শ্বশুর কর্তৃক গৃহবধূকে নির্যাতন ও তার বাবাকে মারধর এবং চাকু দিয়ে আঘাতের অভিযোগ উঠেছে। দামকুড়া থানায় মামলা না গ্রহণ করায় স্বামী ও শ্বশুর পরিবারের লোকজনের বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ লিজা খাতুন।

গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর রানিবাজার এলাকায় অবস্থিত একটি রেস্টুরেন্টের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ আরএমপির দামকুড়া থানাধীন ঝিনাইপুকুর গ্রামের বরজাহান আলীর মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গৃহবধূ লিজা খাতুন জানান, গত ৪ বছর পূর্বে দামকুড়া থানাধীন শিতলাই বাথানবাড়ি এলাকার রবিউল ইসলাম সেন্টুর ছেলে তাসলিম আহমেদ ওরফে তানিম (২৮) এর সাথে তার বিয়ে হয়। তানিম জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তার স্বামী যৌতুকের জন্য তাকে নির্যাতন শুরু করে। টাকার জন্য তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। এরমধ্যেই গত ৩ বছর আগে তাদের একটি সন্তানের জন্ম হয়। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে গৃহবধূ লিজার বাবা বরজাহান আলী মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে গত ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর তার স্বামীকে দুই লাখ টাকা প্রদান করে। দুই লাখ টাকা পাওয়ার পর কিছুদিন তার প্রতি নির্যাতন বন্ধ ছিল।

এর কয়েক মাসর পর আবার তার স্বামী ও শ^শুরসহ পুরো পরিবার তাকে নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সইতে না পেরে ওই গৃহবধূ চলতি বছরের ৪ আগস্ট বাবার বাড়িতে চলে যান। ১৮ আগস্ট বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তার বাবার সাথে তিনি ডাক্তার দেখানোর জন্য দামকুড়া বাজারে গেলে ইলিয়াস মন্টুসহ কয়েকজন জনসম্মুখেই তাদের গালাগালি দিতে শুরু করে এবং ভাবনা তাকে চড় থাপ্পড় মারা শুরু করে এবং মন্টু তার বাবাকে মারধর শুরু করে। প্রাণ ভয়ে তারা বাড়িতে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পর তারা লোখমুখে জানতে পারেন যে, তাদেরকে মারধর করার জন্য তার স্বামীসহ শ^শুর বাড়ির লোকজন বাড়ি আসছে। বিষয়টি জানার পর তারা দামকুড়া থানায় অভিযোগ দেওয়ার জন্য যান। তাদের অনুপস্থিতে সাড়ে ৬টার দিকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার বাবার বাড়িতে ঢুকে ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো করে এবং স্বর্ণের চেইন ও ৫০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

বাড়ি লুটপাটের খবর পেয়ে তারা দ্রুত বাড়িতে যাওয়ার জন্য দামকুড়া থানাধীন মধুপুর গ্রামে পৌঁছালে পূর্ব থেকে সেখানে অবস্থান করা তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদের দেখতে পেয়ে গালিগালাজ শুরু করে এবং গালি দিতে নিষেধ করলে তার বাবা বরজাহান আলীর কাঁধে চাকু দিয়ে আঘাত করে। এ ছাড়াও তারা যে যেভাবে পেরেছে তাদের কিল-ঘুষি ও চড় থাপ্পড় মারে। ঘটনার তারা স্থানীয়দের সহযোগীতায় চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। সেখানে তারা চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

চিকিৎসা শেষে তার বাবা বাদী হয়ে দামকুড়া থানায় মামলা করতে যান কিন্ত অজ্ঞাত কারণে থানার ওসি সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে শুধু অভিযোগ গ্রহণ করে। কিন্ত অভিযোগেরও কোনো সুরাহা বা দৃশ্যশান তদন্ত করেননি। তাদের অভিযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয় দামকুড়া থানার এসআই আওয়ালকে। এসআই আওয়াল তার বাবাকে বলেন, ওরা খুব খারাপ লোক। মামলা করে কি করবেন? রাস্তাঘাটে চাকু মেরে দিবে। তার থেকে এসব না করাই ভালো। এই মামলা দায়ের করার জন্য থানায় একাধিকবার গেলেও ওসি ও এসআই কেউ তাদের পাত্তা দিচ্ছেন না। তারা পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও দাবি করা হয়।

লিজা সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করে বলেন, আমার ননদ মিম প্রিয়া নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়। মিম প্রিয়া হুমকি ও দম্ভোক্তি দেখান যে, আমি সাংবাদিক আমাদের কেউ কিছুই করতে পারবে না। ডিসি-পুলিশ সবাই আমার পকেটে থাকে।

এ অবস্থায় আমরা খুবই অসহায় বোধ করছি। আমি আমার অবুঝ শিশুকে নিয়ে খুব কষ্ট ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনযাপন করছি। তাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের মাধ্যমে সুষ্ঠ অপরাধীদের সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি। যাতে আমরা ন্যায্য বিচার পাই। সংবাদ সম্মেলনে , গৃহবধূ লিজার বাবা বরজাহান আলী, মা ও বোনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি জানতে গৃহবধূর স্বামী তাসলিম আহমেদ ওরফে তানিমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে আরএমপির দামকুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, গৃহবধূ লিজার পরিবার থানায় দুটি অভিযোগ দিয়েছে। ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকেও থানায় অভিযোগ আছে। শুধু মারধরের অভিযোগের বিষয় হলে এজাহার নেওয়া যাবে। চুরির বিষয়ে মামলা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এসআই আওয়ালের ব্যাপারে বলেন, এসআই এ ধরণের কথা বলার কথা নয়। তারপরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]