478

04/30/2025 বন্যায় মৎসশিল্পে ক্ষতি ৩৮২ কোটি টাকা

বন্যায় মৎসশিল্পে ক্ষতি ৩৮২ কোটি টাকা

রাজটাইমস ডেস্ক

১৪ আগস্ট ২০২০ ১৭:৪১

দেশের দীর্ঘস্থায়ী প্রাকৃতিক দুর্যোগে রূপ নিয়েছে বন্যা। দেশের অর্ধেকেরও বেশী জেলা দীর্ঘদিন পানিতে নিমজ্জিত। তবে ক্রমান্বয়ে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এর প্রকোপে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশী।

মৎস শিল্পে বন্যার থাবা অনেক ভয়ানক। বন্যায় ১৩ হাজার ২০১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাভূমির মাছ ভেসে গেছে।

বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক রয়েছে মাত্র দুটি জেলায়। বাকি ৩১ জেলায় এখন স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। প্রায় দেড় মাস পানির নিচে থাকা এসব জেলায় ক্ষয়ক্ষতি এখন স্পষ্ট হচ্ছে। বাড়িঘর, সড়ক ও ফসলি জমির পাশাপাশি এই বন্যায় মাছের ঘের ও পুকুরের বড় ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর অতিবৃষ্টি ও সবশেষ বন্যায় মোট ক্ষতির পরিমাণ ৭৮৫ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, দীর্ঘ এক মাসের বন্যায় মৎস্যসম্পদের ক্ষতি হয়েছে ৩৮২ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষির সংখ্যা ৪৭ হাজার ৬৬২। আর ১৩ হাজার ২০১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাভূমির মাছ ভেসে গেছে।

তাদের দেয়া হিসাব, সুনামগঞ্জ জেলা সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবারের বন্যায়। সেখানে মোট ৫২ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সাতক্ষীরা ও যশোর এলাকার ঘেরের বিপুল পরিমাণ মাছ ভেসে যায়।

তবে ভিন্ন আরেকটি হিসাব বেরিয়েছে বেসরকারি সংস্থা বিসেফ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। তাদের হিসাব মতে, চলমান বন্যায় মৎস্যচাষিদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আরেক হিসাবে দেখা গেছে, বন্যায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মৎস্যজীবী এ ক্ষতির শিকার হন। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবিরা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও দারিদ্র্যের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে সংস্থাটির গবেষকেরা মনে করছেন।

বন্যায় ক্ষতি পোষাতে মৎস্যচাষিদের জন্য কোনো সহায়তার উদ্যোগ না নেওয়ার বিষয়টিই তুলে আনেন দেশের মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। দেশের ধান, সবজি ও পাটচাষিদের বন্যার ক্ষতি পোষাতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর আমনের বীজ যাতে কৃষকদের দেওয়া যায়, সে জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি উঁচু স্থানে আমন ও সবজির বীজতলা তৈরি করে রাখা হয়েছে।

মৎস্যচাষিদের পুনর্বাসন শিগগিরই শুরু করা হবে এমনটাই জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবী ও চাষিদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। কোনো ভুল যাতে না হয়, সে জন্য আবার তা খতিয়ে দেখছি। এই চাষিদের সহায়তা দিতে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে আমাদের কথাও হয়েছে। আশা করি, তাঁদের কাছ থেকে আমরা সহায়তা নিয়ে ।’

টানা দুই দুর্যোগের ধকলে দেশের মাছচাষিদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে। সারা বছর মাছ লালনপালনের জন্য সাধারণত মার্চে পোনা সংগ্রহ করা হয়। ওই সময়ে লকডাউন ও যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় বন্ধ থাকায় অনেক চাষি পোনা সংগ্রহ করতে পারেননি। ফলে তাঁরাও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

মাছের পোনা ছাড়ানোর সরকারী বরাদ্দ ও সরকারী অতিরিক্ত সহায়তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বিনা মূল্যে পোনা দেওয়ার সুপারিশ করেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আরিফ আজাদ। তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ফসলচাষিদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা ছাড়ার জন্য একটি বরাদ্দ থাকে। বন্যার এই সময়ে উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা ছাড়লে, তা আবারও ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, আরেক দফা বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, দেশে প্রায় ২৫ লাখ পুকুর আছে। গ্রামের মানুষের ৮০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মৎস্য চাষের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১৬ লাখ মানুষ সাগর ও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

খবর-প্রথম আলো

এসএইচ

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]