রাজশাহী অঞ্চলে সবজি সংরক্ষণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ

কৃষি খাতে মিনি কোল্ড স্টোরেজের ইতিবাচক প্রভাব

মহিব্বুল আরেফিন | প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৯:০৯; আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৫ ০২:৩৭

বাঘায় কৃষি খাতে মিনি কোল্ড স্টোরেজ সুবিধার চালু করেছে কৃষি অধিদপ্তর।

সবজি ও ফল সংরক্ষণে কৃষি অধিদপ্তর যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষি খাতে নিয়ে এসেছে মিনি কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা। এতে শুধু কৃষকদের আয় বাড়ছে না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়ণে বাংলাদেশে প্রথম বারের মত বিভাগের ৮টি জেলায় পাইলট ভিত্তিতে মোট ১১টি মিনি কোল্ড স্টোরেজ বা সংরক্ষাণাগার স্থাপন করা হয়েছে। যার অন্যতম উদ্দেশ্যে হলো কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শাকসবজি চাষাবাদ করে ক্ষতিগ্রস্থ যেন না হন। আবার মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব্যও যেন কমে আসছে। বিশেষ করে সবজি ও ফল সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো কৃষকদের। দ্রুত বাজারজাত না হলে শাকসবজি দর পতন এবং ফলমুল পচে কৃষকরা ব্যপক ক্ষতি গ্রস্থ হতেন। আ এখন কোল্ড স্টোরেজ কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।

মিনি কোল্ড স্টোরেজ স্বত্বাধিকারী বাঘা পৌরসভার পাকুড়িয়া এলাকার শফিকুল ইসলাম সানা জানান,আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আমাকে ১০ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন “কোল্ড স্টোরেজ” স্থাপন করে দেন। এর পর থেকে বাজারে দরপতন হলে আমিসহ এলাকার অন্যন্য কৃষকরাও আম, বরই, টমেটো, শিম, গাজর, ফুলকপিসহ বিভিন্ন মৌসুমের ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণ করি। অথচ এর আগে ফল ও সবজি ক্ষেত থেকে তোলার পর ন্যায্য মুল্য না পাওয়ায় কম দামে সেগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হতাম। অনেক সময় পঁচেও যেতো। এখন কোল্ড স্টোরেজ এ রাখার ফলে অনেক লাভ হচ্ছে। তিনি আরো জানান, গত বছর আম মৌসুমে কোল্ড স্টোরেজ থেকে আমার প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। কৃষকরা এখন তাদের উৎপাদিত শাকসবজি দীর্ঘ সময় ধরে তাজা রাখতে পারছেন, ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব্যও কমে আসছে। একই তথ্য জানান উপজেলার গড়গড়ী ইউনিয়নের কোল্ড স্টোরেজ এর স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম।

খোঁজ নিয়ে জানাজায়, মিনি কোল্ড স্টোরেজে স্থানীয় কৃষকরা আম, বরই, টমেটো, শিম, গাজর, ফুলকপিসহ বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি রেখেছেন। আম, লিচু, টমেটো, ক্যাপসিক্যাম ৩-৪ সপ্তাহ, লেবু, কমলা, গাজর, বাধাকপি ২-৪ মাস সংরক্ষন করা যায়। কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কোল্ড স্টোরেজের ব্যাপক প্রসার ঘটলে অপচয়ের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। এতে একদিকে যেমন কৃষকের ক্ষতি কমবে, অন্যদিকে খাদ্যের অপচয়ও রোধ হবে। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ কেবল কৃষকের জন্যই নয়, ভোক্তাদের জন্যও সুফল বয়ে আনছে। সারা বছর ধরেই এখন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ নির্মান করা হলে বাংলাদেশের কৃষি খাত আরও শক্তিশালী হবে। ফলে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক ড. এস, এম, হাসানুজ্জামান জানান, রাজশাহী বিভাগ আম, ড্রাগন ও বিভিন্ন ধরণের সবজিতে সমৃদ্ধ।কিন্তু ইতঃপূর্বে এগুলো সংরক্ষনের জন্য কোন সংরক্ষাণাগার না থাকায় কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতেন। এখন এ ধরনের মিনি কোল্ড স্টোরেজে আম, টমোটো, গাজর, ড্রাগন ফল ও সবজি সংরক্ষণ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। 



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top