ভিসা-নীতির প্রভাব শেয়ার বাজারে
রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:১৯; আপডেট: ১ মে ২০২৫ ২২:০৭

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতি প্রয়োগ নিয়ে নানা গুজব ও অপপ্রচারের কারণে গতকাল রবিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের শেয়ার বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। লেনদেন কমার পাশাপাশি এদিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর প্রথম দেড় ঘণ্টা সূচক ওঠানামার মধ্যে থাকলেও পরে বিক্রয় চাপে সূচকের বড় পতন হয়। দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) আগের কার্যদিবসের চেয়ে ২৮.৮১ পয়েন্ট কমে যায়। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৬৮ পয়েন্টের বেশি। সূচকের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ২০০ কোটি টাকার বেশি। গতকাল ডিএসইতে ৫০০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭৩৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতি প্রয়োগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে নানা ধরনের গুজব ও অপপ্রচার চলছে। গতকাল ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই ভিসা-নীতি। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারে।
প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ভিসা-নীতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা কাজ করেছে। তবে শেয়ার বাজারে নানা ধরনের খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তাৎক্ষণিক একটা প্রভাব পড়ে। সেটা দু’এক দিনের মধ্যে কেটেও যায়। তিনি বলেন, দরপতনের আরেকটি কারণ, গত কিছু দিনে বিমা খাতের কোম্পানির শেয়ারদর অনেক বেড়েছিল। কোনো কোনো বিনিয়োগকারী মুনাফা তুলে নিয়েছে। এজন্যও বাজারে সূচক কমেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের তিনি কোনো ধরনের গুজবের পেছনে না ছোটার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারের কারণে গতকাল বাজারে বড় ধরনের পতন হয়েছে।
এর সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির কোয়ার্টার এন্ডিং-এর একটা চাপ আছে। বিএমবিএ সভাপতি বলেন, যেসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, এর সঙ্গে বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত আমাদের বিনিয়োগকারীরা একটি ভালো শেয়ার, দাম কম আছে, ভালো ডিভিডেন্ড দিচ্ছে সেটা কিনবে না। কিন্তু দাম অনেক বেড়ে গেছে, সবাই ছুটছে তার পেছনে, তখন সেই শেয়ার কিনবে। এতে লোকসান তো হবেই। তিনি বিনিয়োগকারীদের জেনে-বুঝে শেয়ার কেনার পরামর্শ দেন।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও এ প্রসঙ্গে ইত্তেফাককে বলেন, ভিসা-নীতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক কাজ করছে। তবে এটা দু’এক দিনের মধ্যে কেটে যাবে। বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাজারে ৬০ শতাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ফ্লোরপ্রাইসে আটকে আছে। এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না বললেই চলে। ফলে বাজারে যখন কোনো বিষয় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তখন বাজারে বড় ধরনের পতন হয়। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, শেয়ার বাজারে বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ কমে মোট লেনদেনের ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহে এ খাতের সম্মিলিত লেনদেন মোট লেনদেনের প্রায় ৬০ শতাংশ ছিল। ফলে বিমা খাতের লেনদেন কমারও একটা প্রভাব পড়েছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনকৃত মোট ৩২০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে ১২টির, কমেছে ১৪৮টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫০টির দর। দেশের প্রধান এই শেয়ার বাজারে গতকাল টাকার অঙ্কে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো—ফু-ওয়াং ফুড, ইস্টার্ন হাউজিং, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স পিপি, জেমিনি সি ফুড, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স ও ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেনকৃত মোট ১৪৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১৩টির। আর কমেছে ৮০টি কোম্পানির শেয়ারের দর।
বাজারে দরপতনের এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের করণীয় সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, বাজারের এ পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরা ছাড়া বিকল্প নেই। পোর্টফোলিওতে ভালো শেয়ার থাকলে তা ধরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: