বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আজ

বাধা পেরিয়ে রংপুরমুখী নেতাকর্মীদের ঢল

রাজটাইমস ডেস্ক:  | প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২২ ২২:০৩; আপডেট: ৩ মে ২০২৫ ২১:৩৭

ছবি: সংগৃহিত

কোনো বাধাই আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। বাস বন্ধ তা নিয়েও বিচলিত নন দলটির নেতাকর্মীরা। যে কোনো মূল্যে গণসমাবেশে যেতে হবে এটাই তাদের শেষ কথা। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসাবে ট্রাক, পিকআপ, মোটরসাইকেল, ট্রেনে, নৌপথে কিংবা হেঁটে তারা রংপুর শহরে পৌঁছেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সেখানেই তারা রাত্রিযাপন করেন। আজ শহরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে গণসমাবেশ।

এদিকে বাস বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পরিবহণ না থাকায় হেঁটে কিংবা নসিমন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তারা গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেন। ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়তি টাকাও গুনতে হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা যায়। অনেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতদিন দেখে আসছি বিরোধী দল হরতাল, অবরোধ ও ধর্মঘটের ডাক দেয়। কিন্তু এখন দেখছি সরকার অবরোধ ডাকছে।

গণসমাবেশ ঘিরে কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কথার উত্তেজনা থাকলেও এখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শুক্রবার শহরের কোথাও ক্ষমতাসীনদের তৎপরতা ছিল না। দিনভর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থান দেখা যায়নি। মোড়ে মোড়ে পুলিশ দেখা গেছে। কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ছাত্রাবাস, সন্দেহজনক বাসাবাড়ি, নেতাদের বাসা ও আবাসিক হোটেলে পুলিশি তল্লাশি চালিয়ে আসছে।

সমাবেশ ঘিরে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার ছক সম্পর্কে পুলিশের আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক এবং দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। এদিকে সমাবেশ ঘিরে প্রশাসন সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। নিরাপত্তার কৌশল নিয়ে শুক্রবার পুলিশের উচ্চপর্যায়ে কর্মকর্তারা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন।

সমাবেশকে সফল করতে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে মাইকে প্রচার চালাতে দেখা যায়। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সড়কে শোভা যাচ্ছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার ফেস্টুন।

এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার সমাবেশেও বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামের সমাবেশে যোগ দেওয়ার পথে বিক্ষিপ্ত হামলা ও বাধা আসে। খুলনায় শুধু বাধা আসেনি, সংঘর্ষও হয়েছে। রংপুরেও বাধা আসবে তা অনুমেয় ছিল। এমনটা ধরে নিয়ে আগেভাগেই নেতাকর্মীরা বিকল্পপন্থায় আসার সিদ্ধান্ত নেন। দুদিন আগ থেকেই রংপুর বিভাগের ৮ জেলার নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থল অভিমুখে আসতে শুরু করেন। থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় শহরতলির বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভবন ও ফাঁকা মাঠে শামিয়ানা টানিয়ে অবস্থান করেন নেতাকর্মীরা।

বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা শহরের নানা জায়গায় অবস্থান নেন। সন্ধ্যার পর তারা একত্রিত হয়ে ব্যানারসহকারে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যান।

এর আগে সকালে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনো মঞ্চের কাজ চলছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তা দেখভাল করছেন। সেখানে রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক এবং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের প্রতি সম্মান জানিয়ে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে মঞ্চ তৈরিসহ অন্যান্য প্রস্তুতির কাজ চালাচ্ছি। গণসমাবেশ সফল করতে এক মাস ধরে রংপুর বিভাগের সব জেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রংপুরের গণসমাবেশ হবে একটি পরিচ্ছন্ন সমাবেশ। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়, তৃণমূল, নগর, শহর এবং বন্দরের সাধারণ মানুষরাও সমাবেশে যোগ দেবেন।’

প্রায় একশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রৌমারী থেকে এসেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান। গত সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন তিনি। আজিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত দুটায় প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে রওয়ানা দিয়ে কয়েকটি নৌকাযোগে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে দুপুরে সমাবেশস্থলে এসেছেন। পরিবহণ ধর্মঘট থাকায় পুলিশি হয়রানি এড়াতে তারা নদী পাড়ি দিয়ে হেঁটে অটোবাইকে করে সমাবেশে এসেছেন। সকালের নাস্তা করেছেন পথের মাঝে। একইরকম তথ্য দিয়েছেন রৌমারী উপজেলা কমিটির যুবদলের সদস্য সচিব মশিয়ার রহমান পলাশ। তিনি জানান, গভীর রাতে নৌকাযোগে নদীপথ পাড়ি দিয়ে তারা এসেছেন। তাদের উপজেলা থেকে প্রায় চার হাজার কর্মী সমাবেশে যোগ দেবেন। পুলিশের হয়রানি এড়াতে তারা বিভিন্ন পথ ঘুরে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে রংপুরে এসেছেন।

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন থেকে পঙ্গু আজিজার রহমান এসেছেন সমাবেশে। ক্রাসে ভর দিয়ে হেঁটে আবার কখনো অটোবাইকে রংপুরে এসেছেন। তার সঙ্গে আরও ২০ জন দিনমজুর এসেছেন। তিনি বর্তমান নিয়মিত সরকারের পঙ্গুভাতা পেয়ে আসছেন। তারপরও আড়াইশ টাকা খরচ করে রংপুরে এসেছেন। কেন এ অবস্থায় দীর্ঘপথ সমাবেশে এসেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার আমলে জিনিসপত্রের দাম ক্রয় ক্ষমতার সীমার বাইরে চলে গেছে। গত নির্বাচনে তিনি নিজে ভোট দিতে পারেননি। এই ক্ষোভ থেকে সমাবেশে আসা।’



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top