Jay Russell

Tuck Everlasting(2002)

লাবণ্য শাহিদা | প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী ২০২১ ১৫:১৫; আপডেট: ১৮ জানুয়ারী ২০২১ ১৫:১৮

Tuck Everlasting(2002)
Genre: Drama/Fantasy
Director: Jay Russell
IMDb: 6.6
Rotten Tomatoes : 60%
"আজি হতে শতবর্ষ পরে, কে তুমি পড়িছ বসি, আমার৷ কবিতাখানি কৌতূহল ভরি"
লাইনগুলো পড়তে গেলেই সবসময় মনে হতো, ইশ্ শতবর্ষ পরেও যদি থাকতে পারতাম অথবা দেখতাম একি স্বরে এ লাইনগুলো শতবর্ষের পরেও একজন কীভাবে পড়ে?
ছোটবেলায় চাচা চৌধূরীর কমিক্স ভীষণ রকমের প্রিয় ছিল, এখনো আছে। চাচা চৌধূরীর কমিক্স পড়তে পড়তে রাকার কথা ভাবতাম যে বৈদ্যরাজ আর্চায্যের অমৃত খেয়ে অমরত্ব লাভ করেছিল। খুনি ডাকু রাকাকে আগুন, তলোয়ার, ঘুর্ণি কিছুই যেন বিনাশ করতে পারত না। ভাবতে ভাবতে এক অন্যরকমের শিহরণের ঢেউ ভেতরে খেলে যেত। ইশ্, যদি পেতাম সেই বদ্যিরাজকে!
অমরত্বের চাবিকাঠি যদি এই পৃথিবীতেই থাকত, স্বর্গে নয়। তাহলে কেমন হত? পৃথিবীর সমস্ত ভয়কে উজাড় করে যেন এক দিগন্তের সূচনা হত। এরিস্টটলের পোয়েটস থেকে শুরু করে সমস্ত বই যেন কব্জা করে ফেলতাম অথবা ভাবুন সমস্ত দুনিয়ার বিস্ময়ের আবিষ্কার করতাম। আমি থেকে যেতাম বটবৃক্ষের মত সেই আদিম আর নবীন সমস্ত ধূলোকে জড়িয়ে আর পৃথিবী এগিয়ে যেত গুটিগুটি পায়ে। আচ্ছা, এমন অজস্র শতবর্ষ পার হয়ে যাওয়ার পরেও কি সে থাকত বেঁচে থাকার? নাকি বিস্বাদের তিক্ততায় ম্লান হয়ে যেতে যাবতীয় সুখ! কিন্তু, পৃথিবীর জানার পরিধির ব্যাপ্তিতো বিশাল! তাহলে বিস্বাদের ভারে কেন ম্লান হবে বহু পার্থিব এ যাপন। সৌরজগতের শেষ রহস্য থেকে শুরু করে সমস্ত অজানার ব্যাকুল হবে আর সাক্ষী হতাম মাস, বছর পেরিয়ে প্রতিটি সময়ের, এক অবিরাম যাত্রাপথে। অমরত্ব মানেতো এমনি কিছু হওয়া চাই।
কিন্তু, এভাবে পেরোতে পেরোতে চারপাশের জগত ছোট হয়ে যাবে কি? মানুষের বিচিত্র আবিষ্কার 'সমাজ' থেকে বেঁচে কতদুর যাওয়া যাবে! একাকিত্ব কি গ্রাস করবে কোনো এক নির্বাক দিনে? তখনো কি চান্দিপসর রাতে গেয়ে উঠতাম, "ও কারিগর দয়ার সাগর, ওগো দয়াময়, চাঁদনি পশর রাইতে যেনো আমার মরণ হয়"!
উপরে অনেক ভাবনার জগত ঘুরে এলাম ছোটবেলার রথে চড়ে চড়ে। যদিও এই রথের শুরুটা হয়েছে একটা কল্পনার মিশেলে বাস্তবতার চিত্রকে ঘিরে। কল্পনার এই বাস্তবতা ফুটে উঠেছে এভাবে, আজ থেকে শতবর্ষ আগে ছিল এক পরিবার। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল, পৃথিবী পুর্নগঠন হলো আরো একবার। সময় এগিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব গতিতে। কিন্তু এর মাঝেও ব্যাতিক্রমী কিছু একটা ঘটেছে এই পরিবারে। প্রেক্ষাপটে পিছনে গেলে
কোন এক বসন্তে পুরো টাক পরিবার একটি গাছের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানি পান করে, একসময় তারা বুঝতে পারে তারা কিছু একটা অস্বাভাবিকতা যেন ঘিরে ধরেছে তাদের। কিন্তু কথা হচ্ছে কী সেই অস্বাভাবিকতা! সময়ের স্রোতে একসময় এ পরিবারটি উইনি নামের পনের বছরের একটি মেয়ের সান্নিধ্যে আসে। মেয়েটির সাথে ভালোবাসার বন্ধনে পরে পরিবারটির ছোট ছেলেটি। কিন্তু উইনি কী পারবে জানতে সেই অস্বাভাবিকতা নাকি বরণ করে নেবে সেই অস্বাভাবিকতার মুকুট?
এই মুভিটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটুকু হচ্ছে বেঁচে থাকার মাধুর্য, প্রবাহিত যাপনের আনন্দের কথা। এ ছবি যেন আরো একবার দেখিয়ে দেয় চোখ তুলে প্রতিটি ক্ষনের সমাজের এক নিবিড় চিত্র। এ মুভির কিছু ডায়লগ জীবনবোধের আকারকে নতুনভাবে তুলে আনে সামনে।
Do not fear death,
but rather the unlived life.
মুভির শেষ অংশটুকু আমার অনেক বেশি প্রিয়। যাপিত জীবনের দর্পণ যেন ভেসে আসে টাক ইভারলাস্টিং মুভিতে।
মুভিটি নির্মাণ করা হয়েছে মুলতঃ একটি শিশুতোষ নভেল থেকে যার লেখক নাতালি ব্যাব্বিট। সময় থাকলে বইটিও পড়ার আমন্ত্রণ রইলো। বইটির অনুবাদ করেছেন ইরাজ উদ্দৌলা দিবাকর, অনুবাদক উপন্যাসটি সম্পর্কে বলে, "বিন্দুর মধ্যে সিন্ধু"। বইয়ের পাতা থেকে পরপর দুইবার সিনেপ্লেক্সের পর্দায় উঠে আসা এই মুভিটি বরাবরই দর্শকনন্দিত। প্রথমবার আসে ১৯৮১ সালে, এটিও আমার দেখা হয়েছে যদিও এর শুরুটা এবং গঠন দ্বিতীয়টি (২০০২) থেকে ব্যাতিক্রম। প্রথমটি ইউটিউবে সার্চ করলে এখনো ভেসে আসে সাদা-কালোর ফ্রেম জুড়ে। যদিও আমাকে কাছে দ্বিতীয়টির নির্মানই আকর্ষণ করেছে বেশি।
মাই ডগ স্কিপ এর পরিচালক থেকে আরো এক ক্লাসিক 'টাক ইভারলাস্টিং'! পরিচালক জেই রাসেল বাচ্চাদের ক্লাসিক থেকে নেওয়া একটি চিরন্তন সুন্দর সময়ের রোম্যান্স অথবা অ্যাডভেঞ্চারকে ক্যাপচার করে এমন অমৃত দিয়েছে যা সমস্ত বয়সের মানুষই উপভোগ করবে এবং এর সাথে সম্পর্কিত হবে। জেই রাসেল কারিগরি দিক দিয়েও বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে আরো একবার। এই মুভি সম্পর্কে জেই রাসেল তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মুভির কবরস্থানের দৃশ্যটি বইটিতে ছিল না। তবে তিনি এটি নিজে থেকে মুভিতে যুক্ত করেছেন কারণ তিনি চিরন্তন জীবনের "স্বর্গীয় দৃষ্টিভঙ্গি" নিয়ে "মন্দ এবং ভাল" এর মধ্যে ভাবনার দৃষ্টি দেখতে চেয়েছেন। পরিচালক এই দৃশ্যটিকে সিনেমায় তার অন্যতম প্রিয় দৃশ্য বলে শেষ করেন!
ছবির অন্যতম চরিত্র উইনি রূপে ব্লেডেল ("দ্য গিলমোর গার্লস") কল্পনার উইনির মতোই উজ্জ্বল ছিল পুরো ছবিতে। তিনি এবং জ্যাকসন কেবল একসঙ্গে দুর্দান্ত পর্দার রসায়নই রাখেননি বরং তাদের নিষ্পাপ অনুভূতিগুলো আপনাকে জীবনের সেই "প্রথম প্রেম" অনুভূতি স্মরণ করাতে বাধ্য। সবচেয়ে নজরকাড়া ছিল ভিলেন চরিত্রে কিংসলের অভিনয়। "হলুদ স্যুট ইন দ্য ম্যান"এর একজন ভয়ঙ্কর ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় যিনি মুহুর্ত মাতিয়ে দিচ্ছিলেন শাণিত চোখের প্রখরে আর ফুটে উঠেছেন দুষ্ট ছায়াময় রূপক হিসেবে।
এই মুভিটি ঠিক রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের মতই যেন আক্ষেপ রেখে দেয় মনে, অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ!


বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top