তরুণ উদ্যোক্তা রাবি শিক্ষার্থী মুহাইমিনুলের গল্প

কে এ এম সাকিব, রাবি | প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২১ ২১:২৪; আপডেট: ১৪ জুন ২০২১ ২১:৫৩

রাজটাইমস ডেস্ক

রাজ টাইমস এর উদ্যোক্তাদের সফলতার গল্পে আজ তুলে আনা হয়েছে একজন তরুণ উদ্যোক্তা মো. মুহাইমিনুল ইসলামের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প। মুহাইমিনুল ইসলাম বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এমএসসিতে অধ্যয়নরত।

রাজ টাইমস: জনাব, মুহাইমিনুল ইসলাম স্বাগতম আপানাকে, আপনার ব্যবসাটা যেভাবে শুরু করলেন।

মুহাইমিনুল ইসলাম: শুভেচ্ছা সবাইকে, প্রথমে আমি এক আমার বড় ভাই সাফি আল আমু ভাই কে অনলাইনে আম দিতে দেখতাম। খুব সুন্দর ভাবে ম্যানেজমেন্ট করত। তবে ভাইয়া রাজশাহীর আম দিত। পরে আমার মাথা চিন্তা আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম নিয়ে কিছু করা যাই কিনা। এরকম চিন্তার মধ্যে ছিলাম, এর মধ্যে আমার কাজিন তারানা আপু আমাকে বলে, “তুই আমার জন্য আম ঢাকা পাঠা“। আপু কে দিয়ে শুরু করলাম আমার আম দেওয়া। আজও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে আম দিচ্ছি।

রাজ টাইমস: এই ব্যবসার আইডিয়া পেলেন কিভাবে?

মুহাইমিনুল ইসলাম: ২০১৬ সালে অনলাইনে আম দেওয়া যায়, এ কথাটি শুধু জানতাম তবে কিভাবে করে সেটা জানতাম না। সাফি ভাইয়ার সাথে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হতাম। উনার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হত, একদিন আম নিয়ে কথা হল আর আমার জম্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জ তাই আম নিয়ে কিছু করা যেতে পারে এটা থেকে ব্যবসার আইডিয়া টি আসে।

রাজ টাইমস: ব্যবসার শুরুর দিকের গল্পটা যদি বলতেন?

মুহাইমিনুল ইসলাম: শুরুর দিকে গল্পটি একটু ভুলের ছিল। প্রথম যে আমটি পাঠিয়ে ছিলাম সেই আমটির একটু সমস্যা হয়েছিল। পরে সমস্যা হওয়ার কারন বের করার চেষ্টা করি। পরে কারন খুঁজে পাওয়ার পর ঐ সমস্যা টি আর হয় নি। তবে ব্যবসা শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ছোট বড় নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিবে , আর সেটা খুব ঠান্ডা মাথায় সমাধান করতে হবে । ব্যবসা থেকে এই শিক্ষা টি পেয়েছি। পড়াশুনা করতে করতে এ রকম ব্যবসা করতে অনেকে উৎসাহিত করেছে আবার অনেকে নেগেটিভ কথা বলেছে, এটি অনেক সমস্যার মধ্যে একটি সমস্যা ছিল।

রাজ টাইমস: কোন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?

মুহাইমিনুল ইসলাম: এখন শুধু আম নিয়ে কাজ করছি, তবে পরবর্তীতে আম দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে।

রাজ টাইমস: কোন ধরনের চিন্তা ভাবনা থেকে আম নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করলেন?

মুহাইমিনুল ইসলাম: আমি বেশির ভাগ শহরে দেখেছি ন্যাচারাল খাবার পাওয়া খুব কষ্টের। মানুষের শরীলের জন্য যে সব কেমিক্যাল ক্ষতিকর (যেমন ফরমালিন, কার্বাইড পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট) ইত্যাদি খাবারে ব্যবহার করা হয়। ফ্রেশ খাবার পাওয়া যায় না। এক কথায় বলা যায় টাকা দিয়ে আমরা বিষ কিনে খায়। অন্য দিকে যাদের আমের বাগান আছে। আমের সময় আম নিয়ে অফলাইনে ব্যবসা করে তারা আমের আসল দামটি আম আড়ৎদারের কাছে পাই না। আবার যারা ক্রেতা তারা আসল আম টি খেতেও পারে না। যে আমটি কাচা অবস্থায় ৩-৪ দিন থাকতে পারে , সেটি শহরে গিয়ে ৭-১০ দিন কাঁচা অবস্থায় পাওয়া যায়। পাশাপাশি ক্রেতা বেশি দাম দিয়ে আম গুলো কিনছে। গাছের আম পেরে পরের দিন ক্রেতার বাসায় পোঁছে দেওয়া ছিল আমার পরিকল্পনা ।

রাজ টাইমস: ব্যবসার শুরুটা কি অনলাইনেই, নাকি অন্য কোনো উপায়ে ছিল?

মুহাইমিনুল ইসলাম: প্রথম দিক থেকে অনলাইনে আম দেওয়া শুরু করি।

রাজ টাইমস: কাজ করতে গিয়ে কখনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?

মুহাইমিনুল ইসলাম: ভাল ও নতুন কাজ করতে গেলেই সমস্যা আসবেই। নতুন কাজের সাথে যেন “সমস্যার” একটি ভাল সম্পর্ক আছে। আশেপাশে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, সাধারণ মানুষের সাথে কমুনিকেশন, ভাল আমের সন্ধান করা, ভালো আমের খোঁজার জন্য দালালের চক্করে পড়া, আমের কুরিয়ার করা, মানুষের নেগেটিভ রিভিউ ইত্যাদি নিয়ে সমস্যায় পরতে হয়েছে। তবে যখন কেউ পজেটিভ রিভিউ দেয় তখন সব কিছু ভুলে যায়। নিজের কাজে সাফল্যের যে আসল মজা, সেটা আম ব্যবসা করতে গিয়ে পেয়েছি।

রাজ টাইমস: নতুন উদ্যোক্তারা এই ধরণের ব্যবসায় আসতে চাইলে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

মুহাইমিনুল ইসলাম: নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বলি, বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডু তাই কেউ যদি নতুন কিছু করে তাহলে তাকে পেছন থেকে টেনে ধরার জন্য অনেকে আপনাদের পেছনে লাগবে। এসব মোকাবেলার জন্য আপনাকে সৎ, সাহসী ও ধৈর্য্যের সাথে আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এক সময় আমরা বিশ্বে পাট খুব রপ্তানি করতাম কিন্তু এখন আমাদের পাট কেউ নেই না। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের সুনাম গোটা বাংলাদেশ জানে তাই আপনাদের কিছু লোভ, প্রতারণায় যেন পাট এর মত আম যেন না হয়ে যায় এটা আমাদের ভাবতে হবে। আম দিয়ে গোটা বিশ্ব কে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে রিপেজেন্ট করুন।

রাজ টাইমস: আউদ্যোক্তা জীবন সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল?

মুহাইমিনুল ইসলাম: সাফল্য একটি আপেক্ষিক বিষয়। তবে আমি আমার কাজের জন্য নিজে সাফল্য মনে করি। কেননা আমি অল্পতে অনেক সন্তুষ্ট থাকি। আমার পরিবারের সদস্য, পরিচয় ছোটবড় ভাইবোন, বন্ধু বান্ধব, ফেসবুকে " আমরা রাজশাহী উদ্যোক্তা" অনেক অনেক ভূমিকা রেখেছে।

রাজ টাইমস: বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনার ব্যবসা নিয়ে পরিকল্পনা কী?

মুহাইমিনুল ইসলাম: বর্তমান পেক্ষাপটে আম যোগানদার নিয়ে পরিকল্পনা হলো, গোটা দেশের মানুষের কাছে বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করা। ভালো মানের আম যে “আম যোগানদার” যোগান দিতে পারে সেটা দেশের মানুষের মনে প্রতিষ্ঠা করা।

রাজ টাইমস: উদ্যোক্তা শুরু কতদিন ধরে এবং রেভিনিউ কেমন?

মুহাইমিনুল ইসলাম: ১২ জুন ২০২০ সাল থেকে ব্যবসা শুরু করি । সামনে ১২ জুন ২০২১ সালে ১ বছর হবে ।

রাজ টাইমস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পরা নিয়ে জানতে চাই

মুহাইমিনুল ইসলাম: আম যোগানদার ব্যানারে দেশের চাহিদা পুরণ করে দেশের বাহিরে আম পাঠিয়ে বাংলাদেশ কে গোটা বিশ্বের কাছে রিপেজেন্ট করতে চাই। এটা কাশ্মীরি আপেল নামের সাথে সাথে এটা বাংলাদেশের আম বলবে গোটা বিশ্ব। আর আমি একটি সুপার আম বাগান করব, যেখান থেকে বহু দূর থেকে মানুষ এসে নিজের হাতে আম পেরে, ক্রয় করে নিয়ে যাবে ।

রাজ টাইমস: আর কিছু বলবেন?

মুহাইমিনুল ইসলাম: খুব ছোট প্রচেষ্টা, আমরা আমাদের আম বিক্রয়ের লাভের ৫% টাকা সামাজিক উন্নয়নের কাজে জন্য ব্যয় করি।

রাজ টাইমস: জনাব, মুহাইমিনুল ইসলাম, আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

মুহাইমিনুল ইসলাম: রাজটাইমসকেও অশেষ ধন্যবাদ।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top