দ্বাদশ জাতীয় সংসদ

সহস্র নারীর চোখ এখন সংরক্ষিত আসনে

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০২৪ ১১:৫০; আপডেট: ৩ মে ২০২৪ ০১:২৫

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে বসতে তৎপর হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা। তপশিল ঘোষণা না হলেও ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে নানা কায়দায় সক্রিয় রয়েছেন তারা। এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যরা যেমন আছেন; সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরাও রয়েছেন। নৌকার মনোনয়ন পেলেও জোটগত কারণে সরে দাঁড়ানোর পর সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার প্রত্যাশা করছেন কেউ কেউ।

দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া কয়েকজনও এ দৌড়ে শামিল হয়েছেন। এ ছাড়া পেশাজীবী সংগঠনের নেত্রী এবং বিভিন্ন মাধ্যমের তারকারাও নানাভাবে জানিয়ে রাখছেন তাদের আগ্রহের কথা। সব মিলিয়ে সংসদে সংরক্ষিত ৫০ আসনের জন্য সহস্রাধিক নারী আগ্রহ প্রকাশ করছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু না হলেও সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭১ জন এমপিকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে যে সংস্কার শুরু হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনের ক্ষেত্রেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিদের আমলনামা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সংসদের কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তা, নানা বিতর্ক ও অদক্ষতার কারণে এবার সংরক্ষিত এমপির অনেকে বাদ পড়বেন। তাদের জায়গায় যুক্ত হবে নতুন মুখ। এই তালিকায় থাকবেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দলের মনোনয়ন বঞ্চিত, নৌকার টিকিট পেয়েও জোটের কারণে সরে দাঁড়ানো প্রার্থী, ক্লিন ইমেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী, সহযোগী ও পেশাজীবী সংগঠনের পদধারীরা। দলের দুর্দিনে ত্যাগী ও নিবেদিত প্রয়াত নেতাদের স্ত্রী কিংবা কন্যা মনোনয়ন পেতে পারেন।

কেন্দ্রীয় নেত্রীদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে দলের জন্য ভূমিকা রাখা নারীদের মূল্যায়ন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে যেসব জেলা থেকে দীর্ঘদিন সংরক্ষিত আসনে কেউ এমপি ছিলেন না, সেসব জেলা প্রাধান্য পেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নারীনেত্রী ও বিশিষ্টজনদের সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। সেইসঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমের তারকাদের মধ্য থেকেও কেউ কেউ সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হতে পারেন।

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনের মধ্যে ৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। এসব আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ১ হাজার ৫১০ জন আবেদন করেছিলেন। এবারও পরিস্থিতি একই রকম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া কালবেলাকে বলেন, ‘সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য আওয়ামী লীগ কবে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন নারী সংরক্ষিত আসনে তপশিল ঘোষণা করার পর দ্রততম সময়ের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

এখন পর্যন্ত যতটুকু আভাস পাওয়া গেছে তাতে, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে চার-পাঁচজনকে রেখে বাকিদের বাদ দেওয়া হতে পারে। বর্তমান এমপিদের মধ্য আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, আঞ্জুম সুলতানাসহ কয়েক জনকে রেখে বাকিদের বাদ দেওয়া হতে পারে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েও জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী ও গাইবান্ধা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব আরা গিনিকেও সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। দলের মনোনয়ন পেলেও নাগরিকত্ব জটিলতায় প্রার্থিতা বাতিল হওয়া দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদকে সংরক্ষিত আসনে এমপি করা হতে পারে। ইতোমধ্যেই তিনি অন্য দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।

সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আরও আলোচনায় আছেন, দলের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, স্বাস্থ্য সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তারানা হালিম ও মারুফা আক্তার পপি। এ ছাড়া যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, বর্তমান সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজী ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ফারজানা আখতার সুপর্ণার নামও আলোচনায় আছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সাবেক সদস্য আমেনা কোহিনূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বি এম লিপি আক্তার, পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়লা পারভীন, মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শিরিন রোখসানা, নাটোর-৪ আসনের সাবেক এমপি আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের সাবেক সহসভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সাবেক এমপি মমতাজ বেগম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভ্রাতৃবধূ সুলতানা কামাল খুকুর ভাতিজি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য নেহরিন মোস্তফা দিশির নামও আসছে আলোচনায়।

তারকাদের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, মাহিয়া মাহি, পূর্ণিমা, তারিন জাহান, তানভীন সুইটি, বন্যা মির্জা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের বেশ কজন আলোচনায় রয়েছেন।

সংরক্ষিত নারী আসনে কারা মনোনয়ন পেতে পারেন— এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড তো নেই। তবে দলের দুর্দিনে, আন্দোলন সংগ্রামে যাদের অবদান থাকে তাদের সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য বিবেচনা করা হয়। সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। হতে পারেন তিনি আওয়ামী লীগের বা সহযোগী সংগঠনের অথবা কোনো পেশাজীবী বা তারকা। তবে প্রত্যেকের জন্যই দলে তার অবদান বিবেচনা করা হয়।

তথ্যসূত্র : দৈনিক কালবেলা 




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top