দেশের মাটিতে নোঙর করলো এমভি আবদুল্লাহ

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৪ ২১:০৩; আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ২১:০৪

ছবি: সংগৃহীত

সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ প্রায় এক মাস পর সোমবার (১৩ মে) দুপুরে বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছেছে। জাহাজটি সন্ধ্যায় নোঙর করে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায়। এই তথ্য জানিয়েছেন কবির গ্রুপের (কেএসআরএম) মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

এর পরপরই নাবিকদের খুশির এই মুহূর্তটি পরিবারের কাছে ফোন করে বলতে দেখা গেছে। বিশেষ এমন খবরে খুশি পরিবারের সদস্যরাও।

মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজটি আজই বিকেলে কুতুবদিয়ায় ভিড়ে, কিন্তু নাবিকদের তীরে আনা হবে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায়। তাদের লাইটার জাহাজে আবদুল্লাহ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের সদরঘাট কেএসআরএম জেটিতে নিয়ে আনা হবে।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, কুতুবদিয়ায় নোঙর করার কারণ হরো, এত বড় জাহাজ বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ নেই। জাহাজটিতে ৫৬ হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন চুনাপাথর রয়েছে। এতে জাহাজটির ড্রাফট (পানির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য) বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১২ মিটার, যা চারতলার সমান। ফলে বন্দর জেটিতে এটি ভেড়ানো সম্ভব হবে না।

মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৩০ এপ্রিল ভোররাত ৪টার দিকে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন চুনাপাথর নিয়ে দেশে রওনা দেয়।’

কেএসআরএম সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার নাবিকদের জেটিতে বরণ করার জন্য কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তারা ফুল দিয়ে বরণ করে নেবেন। নাবিকদের স্বজনদের কেউ কেউ এ সময় জেটিতে উপস্থিত থাকবেন বলেও জানা গেছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কালবেলার কক্সবাজারের পেকুয়া প্রতিনিধি এসএম জুবাইদ বলেন, জাহাজের ২৩ নাবিক পুরোপুরি সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে। কুতুবদিয়ায় কিছু মালামাল খালাস শেষে বুধবার এমভি আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম বন্দরের সদরঘাটে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর মঙ্গলবার বাড়ি ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক। এ জন্য ২৩ নাবিকের পরিবারে চলছে নানা আয়োজন। নিজ নিজ পরিবারে নাবিকদের জন্য চলছে পছন্দের রান্নাও।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ খানের স্ত্রী ফিরোজা আজমিন মিনা। নাবিকদের আসার খবর নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম কবে দিনটি আসবে। অবশেষে ঘনিয়ে এসেছে। সোমবার (১৩ মে) সকালেও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। বলেছে, মঙ্গলবার বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরবে। আমার কী যে আনন্দ লাগছে তা বলে বোঝাতে পারবো না।’

তিনি বলেন, ‘যখন তারা দস্যুদের কবলে পড়েছিল, তখন ভাবতাম কখন এই দিন আসবে। কখন মুক্তি পাবে ও বাড়ি ফিরবে। গত দুই মাস ধরে তার বাড়ি ফেরার দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। আমাদের তিন মেয়ে ফাতিমা, উনাইজা ও খাদিজাও অনেক খুশি। আতিক আগেও জাহাজে গিয়েছিল। বেশ কমাস পর পর বাড়ি ফেরে। তখন এমন মনে হয়নি, স্বাভাবিক ছিল। তার এবারের ফেরাটা আমাদের মাঝে অন্যরকম এক আনন্দ নিয়ে আসছে।’

জাহাজটিতে থাকা নাবিক নুর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘এত বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে দেশে ফিরছে- কেমন লাগছে তা বলে প্রকাশ করতে পারবো না। কাল আমিও সদরঘাটে যাবো তাকে রিসিভ করতে। এরপর তাকে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে আসবো।’

তিনি বলেন, ‘এর আগেও সে জাহাজে কাজ শেষে দেশে ফিরেছে। আমরা কখনও বিমানবন্দর আবার কখনও চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটি থেকে তাকে রিসিভ করেছি। এবারের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। তারা এক মাস দস্যুদের কবলে জিম্মি ছিল। এরপর মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরছে। নুর উদ্দিন দেশে আসছে এ জন্য তার পছন্দের সব খাবার রান্না করা হচ্ছে। সে মিষ্টি, কেক এবং পায়েস জাতীয় খাবার খেতে বেশি পছন্দ করে। আমি তার জন্য কেক, মিষ্টি, পায়েস তৈরি করছি। সে গরুর মাংস খেতে পছন্দ করে। বলা যায় তার পছন্দের সব খাবার আমি একে একে রান্না করছি।’

জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিনের বড় ভাই সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে রোকন জাহাজে কর্মরত। এত বড় বিপদে কখনও পড়েনি। আমাদের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার ছোট। অফিস থেকে বলেছে, আজ দেশে ফিরবে। এরপর বাড়িতে আসবে। আমার ছোট ভাই এত বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে দেশে ফিরছে এটা আমাদের জন্য সত্যি আনন্দের।’

জানা যায়, জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা করে। ১৯ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হারমিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি।

মুক্তিপণের বিনিময়ে দীর্ঘ এক মাস পর গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় মুক্তি পায় জাহাজসহ ২৩ নাবিক। মুক্তির পর জাহাজটি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। ২১ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আল হারমিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। জাহাজটিতে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা সেখানে খালাস করা হয়। পরবর্তী সময়ে আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর লোড করা হয়। এসব পণ্য নিয়ে দেশের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top