৪০০ ডলারে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদ কিনেন ডা. ঈশিতা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০২১ ০২:৩১; আপডেট: ২ আগস্ট ২০২১ ০৭:৪০

ডা. ঈশিতা (ইনসেটে) ও  তার ইউনিফর্ম

ফিলিপাইনের একটি ওয়েবসাইট থেকে ৪০০ ডলারে সামরিক বাহিনীর মতো ‘বিগ্রেডিয়ার জেনারেল’ পদটি কিনেন চিকিৎসক ইশরাত রফিক ঈশিতা । এরপর সেই পদের ব্যাজ ও পোশাক বানান। তার সহযোগী শহিদুল ইসলাম দিদারও প্রতিষ্ঠানটি থেকে ‘মেজর জেনারেল’ এর একটি পদ কিনেন।

র‌্যাব জানায়, ইশরাত প্রতারণার কৌশল হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর র‌্যাঙ্ক ব্যাচ ও পদ অর্জনের চেষ্টা চালায়। সে ফিলিপাইনে পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট (আইপিএই.ফিল.কম) থেকে ৪০০ ডলারের বিনিময়ে সামরিক বাহিনীর ন্যায় ‘বিগ্রেডিয়ার জেনারেল’ পদটি বাগিয়ে নেন।

বিকালে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গোয়েন্দা অনুসন্ধানে ভিন্নধর্মী এই প্রতারণার সম্পর্কে তথ্য পেয়ে তাকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে উদ্ধার করা হয়- ভুয়া আইডি কার্ড, ডুয়া ভিজিটিং কার্ড, সিল, ভুয়া সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, পাসপোর্ট, ল্যাপটপ, ৩০০ পিস ইয়াবা, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ।

র‌্যাব জানায়, তিনি ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন, কাউন্টার ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশনের সদস্য পদের ভুয়া সনদ তৈরি করে প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। ভুয়া ডিগ্রি, পদ-পদবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আইপি চ্যানেলে নিজের প্রচার-প্রচারণা চালাতেন। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে টকশোতে অংশগ্রহণ করতেন। বিশেষ করে ভুয়া সার্টিফিকেট, এডিটিং ছবি, মিথ্যা বিবৃতি ও তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবাইকে বিভ্রান্ত করতেন। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী শিশু অধিকার, চিকিৎসা বিজ্ঞান, করোনা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচক হিসেবে নিজের প্রচার চালাচ্ছিলেন।

মঈন বলেন, ইশরাত পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে (সেশন ২০০৫-২০০৬) এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। এরপর ২০১৪ সালের শুরুর দিকে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরই একটি সরকারি সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। চার মাস চাকরির পর শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরিচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি প্রতারণা শুরু করেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে পরিচয় দিতেন। যেমন- এমপিএইচ, এমডি, ডিও ইত্যাদি। তাছাড়া ক্যানসার বিশেষজ্ঞ হিসেবেও নিজেকে প্রচার চালাতেন।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘করোনা মহামারিকে পুঁজি করে ভার্চুয়াল জগতে প্রতারণায় সক্রিয় ছিলেন ইশরাত। অনলাইনে করোনা প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন ও সার্টিফিকেট দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতেন। বিদেশি ভুয়া সার্টিফিকেট প্রচারণা করে অর্থের বিনিময়ে সার্টিফিকেট গ্রহণে আকৃষ্ট করতেন। গ্রেপ্তার ইশরাত ‘Young World Leaders for Humanity’ নামে একটি অনিবন্ধনকৃত ও অননুমোদিত সংগঠন পরিচালনা করছিলেন। যার সদরদপ্তর নিউইয়র্কে অবস্থিত বলে প্রচারণা চালাতেন। যদিও এই পেজের কো-এডমিন ছিলেন ইশরাত। এই পেজের মাধ্যমে দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতারণা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন। নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, আমেরিকা, নাইজেরিয়া, ওমান, সৌদি আরব এসব দেশে অর্থের বিনিময়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করেন। এসব দেশে সংগঠনের ব্যানারে সেমিনার অ্যাওয়ার্ড প্রদান ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন।’

‘এসব প্রশিক্ষনের পর অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের ভুয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ইশরাত ও তার প্রধান সহযোগী দিদার ভাগ করে নিতেন।’

রবিবার (১ আগস্ট)  বিকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য  জানান। এর আগে রবিবার সকালে মিরপুর থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চিকিৎসক ইশরাত রফিক ঈশিতা ও তার সহযোগী শহিদুল ইসলাম দিদারকে  গ্রেফতার করে র‌্যাব ৪।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top