‘অলটারনেটিভ থাকা উচিত, তারা সংগঠিত হলে আপত্তি নাই’

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৮ মে ২০২২ ১৮:৩৪; আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ১৫:৪১

গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক

রাজনীতির মাঠে ফের শক্তিশালী বিরোধীদলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা অলটারনেটিভ থাকা উচিত। ভালোভাবে যদি তারা সংগঠিত হতে পারে আমাদের আপত্তি নাই। তারা সংগঠিত হোক।

শনিবার (৭ মে) বিকাল সাড়ে ৫টার পর গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এরপর আওয়ামী লীগ লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘একটা দলের তো নেতৃত্ব থাকতে হয়। তাদের নেতৃত্ব কোথায়? দুইটাই সাজাপ্রাপ্ত। এক জন তো ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, দুর্নীতি, এরপর ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সাজাপ্রাপ্ত। আরেক জন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। এই নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে আবার অনেকে গাঁটছড়া বাঁধছে দেখলাম। ডান, বাম, অতিবাম, বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী, গুণী অনেকেই যুক্ত হচ্ছেন। এই জ্ঞানী-গুণী দিয়ে করুক।’

তিনি বলেন, ‘এদেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। আমাদেরই দাবি ছিল- স্বচ্ছ ব্যালট পেপার, ছবিসহ ভোটার তালিকা। এখন ইভিএম। অর্থাৎ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে সাথে সাথে ফল পাবে। মানুষ ভোট দেবে, আমরা সেটাই চাই। মানুষ যদি ভোট না দেয় দেবে না। আমরা আসব না ক্ষমতায়।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মানুষ ভোট দেবে, কিন্তু বার বার চক্রান্ত করে আমাদের ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। ভোটের মাধ্যমে আমরা সব সময় ক্ষমতায় আসছি। আওয়ামী কখনও পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি বা মিলিটারি ডিকটেটরদের পকেট থেকে গড়া সংগঠনও না। এই সংগঠন মাটি ও মানুষের সংগঠন। এই সংগঠন মাটি মানুষের জন্য কাজ করে সেটা প্রমাণিত।
আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে, দেশের মানুষ সেটা ভোগ করছে। মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে যাচ্ছে, উন্নত হচ্ছে। মানুষের স্বচ্ছলতা এসেছে। শ্রমজীবী মানুষ পাওয়াই কষ্টকর। সাধারণ মানুষ সেটা জানে, বোঝে। কিন্তু অতি জ্ঞানী তারা একটু কম বোঝে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা তাকিয়ে থাকে কখন ক্ষমতায় যেতে পারি। আর বসে থাকে কখন সিঁকে ছিঁড়বে, তখন তারা ক্ষমতায় যাবে। ওরকমই তারা বসে আছে। ওরকমভাবেই বসে থাকবে। আর যত বদনাম দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে বলে বেড়াবে। তাদের আকাঙ্ক্ষা বিদেশ থেকে কেউ এসে কোলে করে ক্ষমতায় বসাবে। অতীতে এরকম ঘটেছে। তবে এখনকার বাংলাদেশ আর সেটা না। এটা আর পারবে না, যদি আমাদের সংগঠন সেভাবে শক্তিশালী থাকে। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আমাদের উপর আছে। সেটাকে ধরে রেখে যদি এগিয়ে যেতে পারি দেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। আমরা জনগণকে বিশ্বাস করি। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন ব্যহত না হয়, অব্যাহত থাকে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আইয়ুব খান নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেয়, আবার নির্বাচনও করে। আর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর জিয়াউর রহমান ঠিক একই কাজ করেছে, তিনি সেনাপ্রধান। সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। আর্মি রুলসে কোথাও নেই যে, একজন সেনাপ্রধান কর্মরত অবস্থায় চাকরিজীবী সেনা অফিসার নির্বাচন করতে পারে, জিয়া সেটাও লঙ্ঘন করে। নির্বাচনের প্রহসন এদেশে শুরু করে।’

ভোট কারচুপি কালচার জিয়া শুরু করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে সবসময় ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। ভোটের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কখনই পিছিয়ে ছিল না। সব সময় আওয়ামী লীগের ভোটের সংখ্যা বেশি ছিল। পার্সেন্টেজের দিক থেকে বার বার এগিয়ে থাকলেও নানাধরনের চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে পেছনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই, মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া। মানুষকে বাঁচাতে হবে। খাদ্য দিতে হবে, ভ্যাকসিন দিতে হবে। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ ভ্যাকসিন দিতে কোনো টাকা নিই নাই। ভ্যাকসিন এত সস্তা না। আমরা যা করছি মানুষের জন্য করছি। আমরা সব সময় মানুষের জন্য কাজ করি। এটা প্রমাণিত সত্য।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। এছাড়া হয় না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া। ক্ষমতা তো জনগণের কাছে ছিল না। ক্ষমতা ছিল ক্যানটনমেন্টে বন্দি এবং সেখান থেকেই মার্শাল ল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মিলিটারি ডিকটেটরশিপই চালিয়েছে। যেটা আইয়ুব খান করেছিল। অর্থাৎ পাকিস্তানি একটা মডেল এখানে তৈরি করতে চাচ্ছে। যাদের যুদ্ধ করে পরাজিত করেছি। সেই পরাজিতদের পদাঙ্ক আমরা অনুসরণ করব না। আমরা বাঙালি। জাতির পিতার নেতৃত্বে আমার স্বাধীনতা এনেছি। আমাদের স্বকীয়তা আছে। নিজস্ব সত্ত্বা, সংস্কৃতি সবই আছে। আমরা সেভাবেই দেশকে গড়ে তুলব।’

তিনি বলেন, ‘যারা হয়তো ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু জনগণের কাছে ভোট চাইতে পারেন না। ভোট চাওয়ার সামর্থ্য নাই। সংগঠন করার সেই সামর্থ্য নাই বা যাদের কোনো কিছু নাই। কিন্তু আকাঙ্ক্ষা আছে। তারাই চাইবে দেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করতে। তারাই চাইবে এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে। কারণ ওই সামরিক জান্তার পকেট থেকে ক্ষমতায় বসে যে সমস্ত দল গঠন হয়, তারা আর যাই হোক গণতন্ত্র দিতেও পারে না, গণতন্ত্র চর্চাও করতে পারে না। গণতন্ত্র বোঝেও না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা তো মানুষ খুন করতে পারে। আইভী রহমানকে খুন করেছে। আমাকে হত্যা করার জন্য বার বার চেস্টা করেছে। মানুষ পুড়িয়েছে। তাদের কুকর্মগুলো আবার মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার। মানুষকে আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে কীভাবে একটা পরিবার ধ্বংস করেছে। জিয়া যেভাবে সেনাবাহিনীর অফিসার এবং সৈনিকদের হত্যা করেছে। অধিকাংশ পরিবার লাশও পায়নি। ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছে। এরশাদও তাই এবং তারেক জিয়া।’ এদের কাছে দেশের মানুষ নিরাপদ না বলেও জানান শেখ হাসিনা।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top