লকডাউনে বাড়িফেরা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২১ ০১:৫১; আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ০১:৫২

রাজটাইমস ডেস্ক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত ঢাকা টু রাজশাহী আর রাজশাহী টু ঢাকা আসা যাওয়া হয়। এতোকাল টিকিট কেটে বাসে কিংবা ট্রেনে যাওয়ার দরুণ কখন যাত্রা শুরু, কখন পৌঁছাবো মোটামুটি নিশ্চিত ছিল কিন্তু এবার বাড়ি যেতে পারার ব্যাপারটাই অনিশ্চিত।

বাড়িতে শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। কীভাবে যাবো ভাবতে মন চায় না। বড্ড অসহায় লাগে! কারণ আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ।

কাছাকাছি বাড়ি যাদের ইতোমধ্যে তারা হোস্টেল ফাঁকা করে বাড়ি ফিরে গেছে। ক্লান্ত দুপুরে শোয়া থেকে বসে পড়ি মোবাইল স্ক্রিনে বাবার ফোন দেখে। ওপাশ থেকে কুশলাদি বিনিময়ের পরই বললেন এখনও বাড়ি ফিরছি না কেনো! যে যেভাবে পারে সবাই তো চলে আসছে। জানতে চান কবে ফিরছি! আমি ঠিক করে বলতে পারি না কবে ফিরছি। মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই জানালেন উনি এতেকাফে বসেছেন। শত প্রার্থনার ভিড়ে ছেলে যেন নিরাপদে ফিরে হয়ত সে দোয়াটাই বেশি বেশি করছেন। বাড়ির ভাই,ভাবীসহ সকলের ফোন দিয়ে জানতে চাওয়া একটি কথাই হচ্ছে বাড়ি কবে ফিরছি!

বাড়ির মানুষের কন্ঠ শোনামাত্রই মনটা কেমন যেন করে ওঠে। অশান্ত মনটা বলে যদি পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে চলে যেতে পারতাম! ঘরে ফেরার কথা ভাবলেই এক রকম উচ্ছ্বাস কাজ করে। কিন্তু এ উচ্ছ্বাস ফিরবো কীভাবে ভেবে পরক্ষণেই ম্লান হয়ে যায়।

দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, বন্ধ থাকার পরও লাখ লাখ মানুষ বাড়ির টানে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে চলে যাচ্ছে পথ চেয়ে থাকা মুখগুলোর জন্য। আমি ভাবছি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে আমিও আগামীকাল বেরিয়ে পড়বো। সাহরি্র পর অন্ধকার সময়টুকো ঘুমানোর চেষ্টা চালনোর পরও ঘুম আসছে না।আর আসবেই বা কি করে! বাড়ির যাওয়ার উচ্ছ্বাসে ঘুম কি আর আসে!

সকাল সকাল আমি আর আমার রুমমেট কীসে যাবো,কীভাবে যাবো অত সাত-পাঁচ না ভেবেই ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বিনোদপুর থেকে অটোযোগো গেলাম কাটাখালি।ওখান থেকে সিএনজিতে চেপে বসে পৌছুলাম বানেশ্বর।বাজারে জনসমাগমের কোলাহল যেন কানের মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার ন্যায় লাগছিল।

বানেশ্বর পৌছে ছাউনি ছাড়া ভ্যানে বসে পড়ে পা দুলিয়ে শহর ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য বেশ উপভোগ করছিলাম। শিবপুর পুলিশ ফাঁড়ি পৌছে হাত তুলে মাইক্রো বাস দাঁড় করি। কোথায় যাচ্ছে জেনে নিয়ে উঠে পড়ি তড়িৎ গতিতে। মাইক্রোতে আমরা দুজন ছাড়াও আরো যাত্রী ছিল।আমার পাশে সমবয়সী একজনের বাড়ি চাঁদপুর।এসেছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে লিফ্টের ইলেকট্রিক্যাল কাজে।পেছনের সারিতে বসা স্বামী-স্ত্রী আর ফুটফুটে একটা বাচ্চা।

একের পর এক জেলাশহর পেরিয়ে এগিয়ে চলছে মাইক্রোবাস। গাজীপুরে আসতেই গাড়ির গ্লাসের ওপাশে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে শ'খানেক পিকআপ দাঁড়িয়ে আছে।বুঝতে বাকি রইল না গার্মেন্টস শ্রমিকরা বাড়ি ফেরার জন্য ঠিক করে রেখেছে পিকআপগুলো। সামনে দেখা যায় হাজার হাজার শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে আসছে। বাড়ি ফেরার উচ্ছ্বাস তাদের সারাদিনের ক্লান্তিকে ম্লান করে দিয়েছে।

আশুলিয়াতে আসার পর মেঘ কালো আকাশ আর সাথে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে দেখা যায় পাশে দাঁড়িয়ে আছে জনাকীর্ণ পিকআপ।কোলে শিশু নিয়ে বসে আছে মা।শরীর বাঁকা করে দিয়ে শিশুটিকে বৃষ্টির ফোটা থেকে বাঁচাতে মা যেন বদ্বপরিকর।

সামনের মোড়ে দেখা যাচ্ছে ঢাকা ছাড়তে যাওয়া যাত্রীতেপূর্ণ বাস ফিরিয়ে দিচ্ছে টহল পুলিশ। ঘরে ফিরতে চাওয়া ঐ বাসে থাকা মানুষজনের দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অনুভূতির কথা ভেবে ভেতরটা খচ খচ করতে লাগলো। পুরো করোনাকালজুড়ে শ্রম দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে গেলেও দু' চারটা দিন কাছের মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার পথে কতোশত বাঁধা।

ঝুম বৃষ্টির মাঝে মাইক্রোবাস উত্তরায় এসে থামল।চারদিক থেকে মাগরিব আজানের ধ্বনি শোনা যেতে লাগলো।শপিংমলের পাশে তিল ধারণের জায়গা নেই।মানুষজন গিজগিজ করছে।বৃষ্টিতে ভিজেই ঘরে ফেরার বাহন খুঁজতে লাগলাম। অবশেষে এক সিএনজি যোগাড় করে উঠে পড়লাম। দুজনে গন্তব্যে পৌছুলাম।

এলাকার পিচ ঢালা রাস্তা ভিজে একাকার। কোথাও আবার কিছু অংশ জুড়ে পানি জমে আছে তবে আকাশ এখন পরিষ্কার। আলহামদুলিল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌ নিরাপদে বাড়ি ফেরালেন। প্রার্থণা রইল বাড়িতে ফিরতে চাওয়া সকলেই যেন নিরাপদে পথ চেয়ে থাকা মানুষজনের কাছে পৌছাতে পারে।

মীর সালমান 

শিক্ষার্থী

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 

 

  • এসএইচ


বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top