পদে পেতে আবাসিকতা পাল্টেছেন রাবির ৪ ছাত্রলীগ নেতা

রাবি প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২২ ০৫:১১; আপডেট: ৪ মে ২০২৪ ০৯:৫০

চার ছাত্রলীগ নেতা।

হলে পদ পেতে আবাসিকতা পাল্টেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চার ছাত্রলীগ নেতা। আবাসিকতা পাল্টিয়ে গত ১৪ মার্চ হল সম্মেনল শেষে ২৪ মার্চ রাতে দেওয়া হল কমিটির নেতৃত্বেও এসেছেন তারা। নেতৃত্ব পাওয়া এই চার ছাত্রলীগ নেতা হলেন- শহীদ হবিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু, সৈয়দ আমীর আলী হলের সভাপতি শেখ কামাল বিন হারুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুল এবং সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপুর পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে আবাসিকতা ছিল। তখন তার রোল ছিল ১৮১১১২৩১৬৫। আবাসিকতা পাল্টানোর ফলে হল কোড পাল্টে এখন তার রোল ১৮১০৬২৩১৬৫। আবার সৈয়দ আমীর আলী হলের সভাপতি শেখ কামাল বিন হারুনের পূর্বে শাহ্ মখদুম হলে আবাসিকতা ছিল। তখন তার রোল ছিল ১৭১০২১২১০৭। তবে আবাসিকতা পাল্টানোর ফলে এখন তার রোল ১৭১০৪১২১০৭।

একইভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুলের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে এবং একই হলের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমসের শহীদ হবিবুর রহমান হলে আবাসিকতা ছিল। তখন তাদের রোল ছিল যথাক্রমে ১৮১০৫৫০১৪৬ এবং ১৮১০৬১৩১৩৫। তবে আবাসিকতা পাল্টানোর ফলে এখন তাদের রোল যথাক্রমে ১৮১১১৫০১৪৬ এবং ১৮১১১১৩১৩৫।

সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষরা জানিয়েছেন, হল সম্মেলনের পূর্ব মুহুর্তে আবাসিকতা পাল্টেছেন এই চার ছাত্রলীগ নেতা।

তবে আবাসিকতা পাল্টানোর বিষয়টি চারজনের মধ্যে তিনজন হল শাখা ছাত্রলীগ নেতা স্বীকার করলেও এটি ভুল তথ্য বলে দাবি করছেন শহীদ হবিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।

আবাসিকতা পাল্টানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আশিকুর রহমান অপু বলেন, ‘এটা হয়ত আপনার কাছে ভুল তথ্য আছে। আপনি আমার কাছে এসব জেনে কি করবেন? আপনার কি কাজ? আমাকে দিয়ে কি কাজ?’

তবে এ বিষয়ে শহীদ হবিবুর রহমান হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সে (অপু) মাদার বখ্শ হলেই থাকত, কিন্তু সে আবার সিট করেছে হবিবুর হলে।’ অপু কবে নাগাদ হল পরিবর্তন করেছে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘বিষয়টি আমার এক্সাক্ট মনে নাই, কিন্তু হল সম্মেলনের প্রথম তারিখ ঘোষণারও আগে আর কি।’

আবাসিকতা পাল্টানোর বিষয়ে সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ কামাল বিন হারুন বলেন, ‘আমার প্রথমে এ্যাটাচ্ ছিল শাহ্ মখদুম হল। বিগত উপাচার্যের সময়কালে রাজনৈতিক কারণে আমাকে শাহ্ মখদুম হল থেকে আমীর আলী হলে ট্রান্সফার করা হয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবর্তন করে দিয়েছে নাকি নিজে পরিবর্তন করে নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ কামাল বিন হারুন বলেন, ‘এটা আমাদের সংগঠন থেকে পরিবর্তন করা হয়েছে। আমি নেতৃত্বে আসব বলে পরিবর্তন করেছিলাম।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আমীর আলী হল প্রাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি এটা জানিনা। আমি থাকার পর থেকে এ ব্যাপারে কিছু জানিনা।’

আবাসিকতা পাল্টানোর বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুল বলেন, ‘আমি আগে পরিবর্তন করেছিলাম। আমার কাজ্বিন বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। একসঙ্গে থাকলে আমাদের সুবিধা হবে এজন্য মূলত এখানে আসা।’ শুধু কি এ কারণে নাকি রাজনৈতিক কারণে হল পরিবর্তন করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কাবিরুজ্জামান বলেন, ‘যেকোন জায়গা থেকেই তো রাজনীতি করা যায়। আমার যে হল এ্যাটাচ্ ছিল, ওখানে থেকেও তো আমি আমার রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে পারতাম। রাজনীতিও আছে, মানে বঙ্গবন্ধু হল তো অবশ্যই মানে রাজনীতির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

একই হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস বলেন, ‘আমার সেই হলে সমস্যা হয়েছিল, সেজন্য আমার আবাসিকতা পরিবর্তন করতে হয়েছিল।’

সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে জেমস বলেন, ‘আমার সেই হলে থাকার সমস্যা হচ্ছিল। পরে আমাকে বাধ্য হয়ে পরিবর্তন করতে হয়েছিল।’ কবে নাগাদ পরিবর্তন করেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জেমস বলেন, ‘এ্যাক্সক্ট তো মনে করতে পারছিনা।’

তবে এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হল প্রাধ্যক্ষ রওশন জাহিদ বলেন, ‘হল সম্মেলনের আগে তারা দুজনে আবাসিকতা পরিবর্তন করেছেন।’

আবাসিকতা পরিবর্তনের নিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক বাবুল ইসলাম বলেন, সচরাচর আবাসিকতা পরিবর্তন করতে শিক্ষার্থীদের আমরা নিরুৎসাহিত করি। যদি একান্তই কোনো সমস্যা হয় এবং সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ যদি বলে ওই শিক্ষার্থীকে ছাড়তে তার কোনো আপত্তি নেই এবং যে হলে যেতে চায় সে হলের প্রাধ্যক্ষ যদি বলে আমার তাকে নিতে আপত্তি নেই তখন প্রশাসনের কাছে আবেদন জানালে প্রশাসন সেটার অনুমতি দেয়।

এদিকে অন্য হল থেকে কর্মী নিয়ে এসে আরেক হলে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টিকে হাস্যকর বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগরেই একাংশ। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেও একটা হলে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে না পারাটা বর্তমান কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের ব্যর্থতা বলে দাবি করছেন তারা।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, ‘অন্য হল থেকে কর্মী নিয়ে এসে পদ দেওয়া একটা হাস্যকর বিষয়। এই হলগুলোতেও যোগ্য নেতৃত্ব ছিল। তাদেরকে পদ না দিয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক শুধুমাত্র তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এমনটা করেছে। আর পদের লোভে আবাসিকতা পরিবর্তন করে অন্য হলের নেতৃত্বে এসেছে অনেকে।’

সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ নিক্সন বলেন, ‘হয় বর্তমান কমিটি যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেনি অথবা কোনো ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য আবাসিকতা পরিবর্তনের বিষয়টি করা হতে পারে। যেহেতু শেষ সময়ে এসে অনেকে আবাসিকতা পরিবর্তন করেছে সেক্ষেত্রে পদ পদবির লোভেও এমনটা করা হতে পারে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘হল পরিবর্তন করা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমরা যাদের যে হল তাদের সে হলে নেতৃত্বে আনছি।’



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top