দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রোগী বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয়

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারী ২০২২ ১৯:৩৮; আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ ২৩:০৫

ছবি: প্রতীকী

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের মধ্যে গত এক সপ্তাহে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে। এই সময়ে (২৭ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি) দেশে করোনা রোগী শনাক্তের হার ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। আর ১০টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২০ শতাংশ রোগী বেড়েছে ভারতে। এই এক সপ্তাহে বৈশ্বিকভাবে সংক্রমণ বেড়েছে ৭১ শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ সাপ্তাহিক পরিস্থিতি প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী ছিল। তবে এই অঞ্চলে এখন রোগী আবার বাড়ছে। ২০-২৬ ডিসেম্বরের তুলনায় গত সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ৭৮ শতাংশ।

ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে ১০টি দেশের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান ও পূর্ব তিমুর।

ডব্লিউএইচওর তথ্য বলছে, ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ২১৩ জন। এর আগের সপ্তাহে রোগী শনাক্ত হয় ২ হাজার ১৭০ জন। দেশে এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে লক্ষাধিক রোগী বেড়েছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ রোগী বেড়েছে মালদ্বীপে, ৩১ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় ৮ শতাংশ ও থাইল্যান্ডে ৬ শতাংশ রোগী বেড়েছে।

গত এক সপ্তাহে বিশ্বে করোনা শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৯৫ লাখ মানুষের। সবচেয়ে বেশি রোগী বেড়েছে আমেরিকা অঞ্চলে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী বেড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ইউরোপে রোগী বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। তবে একই সময়ে মৃত্যু কমেছে ১০ শতাংশ। শুধু আফ্রিকা অঞ্চলে ২২ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে।
দেশে করোনায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার বাড়ছে প্রতিদিন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৪৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একই সময়ে করোনায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২০ হাজার ২০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৬৭। এর আগে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি ছিল গত ২০ সেপ্টেম্বর (৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ)।

করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে করোনায় মৃত্যু, রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেওয়ার পর সংক্রমণ কমতে থাকে। গত ডিসেম্বরের প্রথম কয়েক সপ্তাহ শনাক্ত ১ শতাংশের ঘরেই ছিল। কিছুদিন ধরে সংক্রমণে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

সংক্রমণের এই বৃদ্ধি করোনাভাইরাসের অতিসংক্রমক অমিক্রন ধরনের কারণে, নাকি অন্য কারণ আছে, তা এখনো স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না।

কয়েক দিন ধরে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের বড় অংশ ঢাকা জেলার। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট শনাক্ত রোগীর ৭৯ শতাংশই এই জেলার বাসিন্দা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ হয়েছে ঢাকায়। এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সারা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে না।

২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৯৩। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ হাজার ৯৮ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৩৪ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৭০ জন সুস্থ হয়েছেন।

দেশে করোনাভাইরাসের অতিসংক্রমক অমিক্রন ধরনে নিশ্চিত সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২০ হয়েছে। করোনাভাইরাসের জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটায় (জিআইএসএআইডি) এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জিআইএসএআইডির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে যে ২০ জন রোগীর অমিক্রন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তাঁরা সবাই ঢাকার বাসিন্দা।

গত ১০ ডিসেম্বর দেশে প্রথম অমিক্রন শনাক্ত হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে জিন বিশ্লেষণ হয় কম। ৫০০ শনাক্ত রোগীর মধ্যে মাত্র ১ জনের নমুনার জিন বিশ্লেষণ করা হয়। এত কমসংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোন ধরন কী পরিমাণে ছড়াচ্ছে, তা বলা মুশকিল।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণের ২০ ডিসেম্বরের তথ্যে দেখা যায়, সংক্রমণের ১৩ শতাংশের জন্য অমিক্রন ও ৮৭ শতাংশের জন্য ডেলটা দায়ী।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top