রামেক হাসপাতালের ২ ইন্টার্ন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত, ঘটনা তদন্তে কমিটি

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩৯; আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩৩

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর ছেলেকে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় দুই ইন্টার্ন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুই ইন্টার্ন চিকিৎসক বরখাস্ত থাকবেন।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই ইন্টার্ন চিকিৎসক হলেন- ফরহাদ হাসান ও আলমগীর হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহম্মদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘গতকালই (বুধবার) তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে আরও কিছু কাজ হবে। তারপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

গতকাল বুধবার দুপুরে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কক্ষে সুমন পারভেজ রিপন (৩০) নামে এক যুবককে দফায় দফায় বেধড়ক পেটান একদল ইন্টার্ন চিকিৎসক। রিপনের মা পিয়ারা বেগম (৬০) গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। রিপোর্ট দেখানোকে কেন্দ্র করে বাগ্‌বিতণ্ডার জের ধরে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তাকে পেটান।

এই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এতে রিপনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আর মাইরেন না স্যার। ম্যালা মাইর‌্যাছেন ভাই। আমাকে একটু পানি খেতে দেন। আমি মরে যাব। আমাকে মারার কথা আম্মাকে বইলেন না। আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়বে।’

এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা রিপনকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। মাথা ন্যাড়া করে দিতে চান। এ ছাড়া ‘চিকিৎসকদের মারতে চাওয়ায়’ রিপনের হাত কেটে নিতে চান ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।

‘আমাকে মেরেছেন, এটা আম্মাকে বইলেন না’, ইন্টার্নদের প্রতি রোগীর ছেলের আকুতি‘আমাকে মেরেছেন, এটা আম্মাকে বইলেন না’, ইন্টার্নদের প্রতি রোগীর ছেলের আকুতি ভুক্তভোগী রিপনের বাড়ি রাজশাহী নগরীর বোসপাড়া মহল্লায়। হাসপাতালে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে তিনি অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন নগরীর রাজপাড়া থানায়। তবে অভিযোগ না করেই তিনি চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক। ওসি বলেন, ‘ছেলেটা এসে বলল যে সে অভিযোগ করবে। আমরা বললাম, অভিযোগ নেব। সমস্যা নাই।

পরে সে বলল, তার মাকে অন্য জায়গায় চিকিৎসা করাবে। হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে না। এটা শুনে আমি হাসপাতালে ফোন করলাম। হাসপাতাল আমাকে জানিয়েছে যে, তার মাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। পরে আমি একটা মিটিংয়ে যাই। এসে ছেলেটাকে আর পাইনি।’

রামেক হাসপাতালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এভাবে মাঝে মাঝেই রোগীর স্বজনদের পেটান ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। বাবার লাশ আটকে রেখে ছেলেকে মারধর করে পুলিশে তুলে দেওয়ার মতো ঘটনার নজিরও আছে।

২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার শিকার হন রাবি শিক্ষার্থীরা।

এতে রাবির অন্তত ছয় শিক্ষার্থী আহত হন। হাসপাতালে বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও চিকিৎসকদের ‘চাপ’ ও কর্মবিরতির মতো কর্মসূচির কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শক্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না।

তবে এবার আর কোনো ছাড় নয় বলে মন্তব্য করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহম্মদ। তিনি বলেন, ‘আমি একবছর হলো এখানে এসেছি। আমার সময়ে এবারই প্রথম এমন ঘটনা। আগে তো কখনো ইন্টার্ন চিকিৎসককে বরখাস্ত করা হয়নি। আমি দুজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে বরখাস্ত করেছি। কেউ দোষী হলে কোনো ছাড় পাবেন না।’

তবে রিপন ‘ফেরেশতা নয়’ মন্তব্য করে বুধবারের ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সমালোচনা করেছেন হাসপাতাল পরিচালক। তিনি বলেন, ‘কয়েকটা পত্রিকার রিপোর্ট পড়লাম। মনে হলো ছেলেটা ফেরেশতা। তার কোনো দোষ নেই।

আসলে তারও তো দোষ আছে। আমি ওয়ার্ডে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন; ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা মারধরের কাজটা ঠিক করেননি। তারা ভুল করেছেন। এটা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে সহমর্মিতা দেখানোর পর্যায়ে পড়ে না, যেটা দেখানো দরকার।’

এর আগে ওই ঘটনা নিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সাংবাদিকদের একটি বার্তা পাঠান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘হাসপাতালে মাকে ভর্তির পর থেকেই রিপন বিভিন্ন সময় চিকিৎসক ও নার্সদের বিরক্ত করছিলেন। গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

বুধবার দুপুরে ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন রিপন চিকিৎসকদের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা দেন এবং গালিগালাজ শুরু করেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং একজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে আঘাত করেন। এতে ওয়ার্ডে সংঘর্ষের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’

যদিও রিপনকে মারধরের সময়ের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রিপন বলছেন- তিনি কাউকে মারেননি। তখন একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলছেন, ‘তুই মারার চেয়ে বড় কিছু করেছিস।’ একজন ইন্টার্ন অভিযোগ তোলেন যে রিপন তাকে বলেছেন, ‘জুম্মায় জুম্মায় আট দিন বয়স হয়েছে। চোখ, কান, মুখ আমি ফাটিয়ে দেব।’

তখন রিপন এ কথার প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আমি এই কথা আপনাকে বলিনি স্যার।’ একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক তখন বলে ওঠেন, ‘এই, তুই হাত দিতে (মারতে) চাইছিলি না? হাত কাইটা রাইখা দিই?’ এ সময় রিপন বলেন, ‘আমি মারিনি কাউকে।’ রিপন তাকে ইন্টার্নদের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অনুরোধ করলে তাকে বলা হয়, ‘এই তুই বের হবি কেন? তুই না ডাক্তার দেখবি? দ্যাখ।’




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top