৭০ বছর পর মাযের কোলে ফিরলেন হারিয়ে যাওয়া ছেলে
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:০০; আপডেট: ৪ নভেম্বর ২০২৫ ১১:২৪
গল্পের শুরুটা ৭০ বছর আগে। অনেকটা সিনেমার মতো। চাচার সঙ্গে রাজশাহী বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যান ১০ বছর বয়সী শিশু আবদুল কুদ্দুস মুন্সি। এরপর অনেকটা সময় পেরিয়েছে। কিন্তু কুদ্দুসের কোনো খোঁজ মেলেনি। ফিরতে পারেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামে।
প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে কুদ্দুস সংসার পাতেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারুইপাড়ায়। এখন তিনি আট সন্তানের জনক। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটলেও নিজের মা ও স্বজনদের ফিরে পাওয়ার জন্য ডুকরে কাঁদত কুদ্দুসের মন।
কুদ্দুস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের মৃত কালু মুন্সির ছেলে। তিন ভাই বোনের মধ্যে কুদ্দুস ছিলেন সবার বড়। তার দুই বোনের মধ্যে এক বোন জোৎস্না আক্তার মারা গেছেন। কুদ্দুস এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধ। জীবন সায়াহ্নে এসে মায়ের খোঁজ পেয়েছেন তিনি।
৭০ বছর পর শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের আশরাফবাদ গ্রামে ছোট বোন ঝর্ণা আক্তারের শ্বশুরবাড়িতে মা মঙ্গলেমা বিবি ওরফে মঙ্গলুন্নেসার সঙ্গে দেখা হয় কুদ্দুসের। মাকে দেখার পর আপ্লুত হয়ে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখেন। এরপর মায়ের হাত ধরে কয়েকবার চুমু খান। চোখ ভেজান কান্নায়। ১১০ বছরের মঙ্গলুন্নেসাও সন্তানের হাত ধরে চুমু খান। মা-ছেলের এই দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন উপস্থিত সবাই।
গত এপ্রিল মাসে ফেসবুকে বৃদ্ধ কুদ্দুস মুন্সির স্বজনদের সন্ধান চেয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারুইপাড়ার বাসিন্দা খান মোহাম্মদ আইয়ুব। ভিডিওটি নজরে আসে কুদ্দুসের চাচাতো ভাইয়ের নাতি শফিকুল ইসলামের। সেই ভিডিওর সূত্র ধরেই শফিকুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন রাজশাহী যান কুদ্দুসের কাছে। এরপর ভিডিও কলে মা মঙ্গলুন্নেসার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। কুদ্দুসের হাতে ছোটবেলার কাটা দাগ দেখে তাকে চিনতে পারেন মঙ্গলুন্নেসা।
দীর্ঘদিন পর মাকে পেয়ে আপ্লুত আবদুল কুদ্দুস মুন্সি বলেন, মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকলেও সবসময় মায়ের স্মৃতি মনে হতো। মাকে ফিরে পাব সেটা কখনোই ভাবিনি। আমার অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে।
তবে বয়সের ভারে ন্যুব্জ মঙ্গলুন্নেসা হারানো ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ ইশারায় প্রকাশ করলেও মুখে তেমন কিছু বলতে পারেননি।
ভাইকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা আবদুল কুদ্দুস মুন্সির বোন ঝর্ণা আক্তার বলেন, আমার জন্মের পর ভাইকে দেখিনি। ভাই হারিয়ে গেছে বলে শুনেছি। এভাবে ভাইকে ফিরে পাব সেটা কল্পনাও করিনি। আমার যে আনন্দ লাগছে, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
আবদুল কুদ্দুস মুন্সির ছেলে সোহেল রানা বলেন, ছোটবেলা থেকে মনে করতাম আমার দাদা-দাদি হয়তো বেঁচে নেই। এখন দাদিকে পেয়ে আমার মনে খুব আনন্দ হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর বাবা তার মাকে ফিরে পেয়েছেন, এটা দেখেও অনেক শান্তি লাগছে।
ফেসবুকে ভিডিও পোস্টকারী খান মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, আমি উনাকে (কুদ্দুস মুন্সি) বলেছিলাম একটা ভিডিও করে ফেসবুকে দেওয়ার জন্য। উনি রাজি হলে আমি একটা ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করি। সেই ভিডিওর মাধ্যমেই কুদ্দুস মুন্সি তার মাকে ফিরে পেয়েছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার মনে হচ্ছে এটিই আমার সবচেয়ে ভালো এবং বড় কাজ।
আবদুল কুদ্দুস মুন্সির চাচাতো ভাইয়ের নাতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দেওয়ার সময় মঙ্গলুন্নেসা শুধু একটি কথাই বলেছেন, কুদ্দুস তুই আয়। ৭০ বছর পর মা এবং ছেলের দেখা হওয়ার যে অনুভূতি- সেটি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। এটি কেবল তারা দুজনই অনুভব করতে পারছেন।
বিষয়: মা জন্মদাগ মায়ের কোলে ছেলে ৭০ বছর পর

                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: