১৬০০ টাকা দিয়ে শাম্মীর উদ্যোক্তা হয়ে উঠা

সাকিব কাফি | প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারী ২০২১ ০০:৫৮; আপডেট: ১৭ জানুয়ারী ২০২১ ০৩:২২

শাম্মী নাজের বেড়ে উঠা রাজশাহী শহরেই, পড়াশুনা, চাকুরী, বিয়ে এবং উদ্দ্যোক্তা হওয়া সব কিছুই রাজশাহীতেই। ছোট থেকে কখনোই জব করবে না এমনটাই ভাবতেন তিনি। পরিবারের আর্থিক কষ্ট থেকে নয়, নিজে কিছু করতে হবে সেই ইচ্ছা থেকেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠা।

খুবই সচ্ছল পরিবারের মেয়ে, বাবা ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের এ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর ছিলেন। প্রথম শ্রেনীর সরকরী কর্মকর্তার সন্তান যেভাবে বেড়ে উঠে সেভাবেই চার ভাইবোনের বেড়ে উঠি। চার ভাইবোনের সবচেয়ে ছোট হওয়ায় আদরের ভাগটা একটু বেশিই ছিলো শাম্মীর। অভাব-অনটন কি এসব কখনোই বুঝতে হয়নি।

সি.এস.সি তে বিএসসি। জব করার ইচ্ছা না থাকলেও ডিপ্লোমার ফাইনাল এক্সাম দেওয়ার ৭ দিনের দিন বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেএ জয়েন করে। সারে তিন বছর সেখানে জব করার পর ব্র্যাকের আইটি ডিপার্টমেন্টে জব পাই সে। সেখানে সাড়ে পাঁচ বছর জব করার পর জবটা ছেড়ে দিতে হয় শুধুমাত্র বাচ্চার টেককেয়ারের জন্য।

সেই থেকে শুরু হলো উদ্দ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন, জব ছাড়ার ৫ মাস পর একদমই ঘরোয়া ভাবে মাত্র ১৬০০ টাকা দিয়ে বুটিক শুরু করে। বুটিক দিয়ে উদ্দ্যোক্তা জীবন শুরু হলেও পরবর্তীতে সব ধরনের মসলা, তেল, লাল গমের আটা, চালের গুড়া এবং রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত খাবার কালাইরুটির আটা মাষকলাই আটা নিয়ে কাজ শুরু করে শাম্মাী। সাথে রান্নাপ্রেমী হিসেবে কিছু ফ্রোজেন আইটেম যুক্ত করে।

বাকীটা সময় বসে থাকতে হয়নি শাম্মী নাজকে। এভাবেই তিনি রাজটাইমসকে জানাচ্ছিলেন নিজের গল্প। বাকী গল্পটুকু তার নিজের ভাষায়-

উদ্দ্যোক্তা জীবনের শুরু থেকেই স্বপ্ন দেখি আমার কাজের মাধ্যমে কিছু মানুষের কর্মের ব্যবস্থা করা, অনেক বাধা অতিক্রম করে আমার স্বপ্নের পথে চলা শুরু করেছি, প্রায় ২০ জন গৃহিনী, স্টুডেন্টস আমার বুটিকের কাজ করেন, তারা আমার সেলাই এর কাজ করেন, আমার সেলাই এর কাজ করে তারা যে অর্থ উপার্জন করেন তা দিয়ে তারা নিজেদের হাত খরচ, টিউশন ফি আবার কেউ কেউ সন্তানের পড়াশুনার পিছনে খরচ করেন।

আমার বুটিকের কাজ করে একজন তার বাসার সামনে একটা ছোট্ট দোকানও দিয়েছিলেন। তাকে আমি আমার সাধ্যমত হেল্প করেছিলাম। যদিও তার অসুস্থতার কারনে ১ বছর পর দোকান বন্ধ করে দিয়েছন। শুধু আর্থিক স্বচ্ছতার জন্যই নারীদের চাকুরী বা উদ্দ্যোক্তা হতে হবে এমনটাও না, প্রত্যেকটা নারীর নিজের একটা আইডেন্টিটি থাকা দরকার আর সেজন্যই প্রত্যেকটা নারীরই কিছু করা দরকার। আমি সব সময় চেয়েছি সবাই আমাকে আমার পরিচয়ে চিনবে আর সেই লক্ষেই আমার পথচলা।

আমার পন্যগুলো বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় যাওয়া শুরু করেছে, দেশের বাইরে কলকাতা, ইতালি, ইংল্যান্ডেও আমার বুটিক আইটেম ও সব ধরনের মসলা গেছে এবং এখন রাজশাহীর বাইরে অনেকেই আমাকে চিনেন আর এটাই আমার উদ্দ্যোক্তা জীবনের অনেক বড় পাওয়া। হাঁটি হাঁটি পায়ে আমি আমার বিজনেসের টাকা দিয়ে রাজশাহী শহরের বায়ায় সোয়া দুই কাঠা জায়গা কিনেছি এবং আমার বিজনেসের টাকা দিয়েই সেখানে ছোট্ট একটা স্বপ্নের বাসা করার ইচ্ছা আছে, জানিনা পারবো কি না তবে শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন পূরন করার চেষ্টা করবো।

করোনার মত কঠিন সময়ে আমি ওমেন এন্ড ই-কমার্স (উই) এর খোজ পাই, সত্যি কথা বলতে উই এ জয়েন করার পরই উদ্দ্যোক্তা হওয়ার অর্থ বুঝতে শিখেছি, উই এর প্রতি বিশেষ করে রাজিব আহমেদ স্যার ও নাসিমা আক্তার নিশা আপুর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করতে পারবোনা, রাজিব স্যারের প্রত্যেকটি দিক নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করছি। উই এর মাধ্যমে অনেক ট্রেনিং করার সুযোগ পেয়েছি বিশেষ করে কোর্সেরার মত ট্রেনিং একদম বিনা পয়সায় করার সু্যোগ পেয়েছি উই এ না থাকলে এই ট্রেনিং গুলো কখনোই করা সম্ভব হতো না।

সব শেষে বলতে চাই যেকোন কিছু করার জন্য পরিবারের সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর আমি মনে করি আমি এদিকে খুবই লাকি কারণ আমার জীবনসঙ্গি সহ আমার পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য সব সময় আমাকে ১০০% সাপোর্ট করেন।

এনএস



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top