জনস্বার্থের নামে ‘ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক আদেশ’ চ্যালেঞ্জ করা যাবে না

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০২২ ০৬:৩৭; আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ১৩:০৯

ছবি : প্রতিকী

ফৌজদারি কার্যবিধিসহ নির্দিষ্ট আইনের অধীনে যদি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা (জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) কোনো আদেশ দেন, তবে জনস্বার্থের নামে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে সে আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা যাবে না মর্মে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া রিমান্ড আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত ৭ জুন সকাল পৌনে ১০টার দিকে জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টোপথে আসা দুই আরোহীসহ একটি বাইককে আটকান কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন। বাইক ও বাইক চালকের কাগজপত্র দেখতে চাইলে এক পর্যায়ে চালকের সঙ্গে সেদিন সার্জেন্টের তার বাগবিতণ্ডা হয়।

বাইকের চালক ও আরোহীও তখন সার্জেন্টের পরিচয়পত্র দেখতে চান। এক পর্যায়ে চালক ও বাইকের নারী আরোহীকে পুলিশ বক্সে নেওয়া হলে আরোহী নারী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। এর জেরে এলাকাবাসী এসে ওই পুলিশ বক্সে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে ও সার্জেন্টকে মারধর করে। এ নিয়ে ওইদিন রাতেই তিনজনের নাম উল্লেখ করে ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।

এ মামলায় গত ৮ জুন আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাতসহ (বাইকের নারী আরোহী) পাঁচজনের তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। এই পাঁচ জনের মধ্যে একজন আইনজীবী ও একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী। সংবিদানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে হাইকোর্টে ওই রিমান্ড আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফজলে এলাহী। জনস্বার্থ উল্লেখ করা সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর গত ৯ জুন হাইকোর্ট মামলার নথি তলব করে রিমান্ডের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন।

এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করলে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৪ জুন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। ওইদিন আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলে শুনানি ১৯ জুন পর্যন্ত মুলতবি করেন। পরে ১৯ জুন শুনানির পর রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি রায় দেন আপিল বিভাগ। রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে ওই রিটে হাইকোর্টের জারি করা রুল খারিজ করা হয়। সম্প্রতি ১১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম।

ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের রিমান্ড আদেশের বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে, ‘আইনগতভাবে ম্যাজিস্ট্রেটের এ আদেশ দেওয়ার সুযোগ আছে এবং ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনেই তিনি আদেশটি দিয়েছেন। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ জনস্বার্থের নাম করে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। কারণ একজন ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া আদেশ সংশ্লিষ্ট দায়রা আদালতে ‘সংশোধনী অধিক্ষেত্রের’ অধীনে সংশোধনযোগ্য। যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছিল তারা যদি সে আদেশে সংক্ষুব্ধ হতেন তাহলে তারা সংশ্লিষ্ট দায়রা আদালতে যেতে পারতেন। তা ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটের রিমান্ড আদেশটি তৃতীয় কোনো ব্যক্তির চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই। ’

‘হাইকোর্ট এই বাস্তব ও আইনগত বিষয় বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে’ উল্লেখ করে আপিল বিভাগ রায়ে বলেছেন, ‘হাইকোর্ট ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রুল জারি ও অন্তবর্তী আদেশ দিয়েছেন।

যখন একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা (জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) ফৌজদারি কার্যবিধিসহ একটি নির্দিষ্ট আইনের অধীনে আদেশ দেন তখন তা সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে সে আদেশে হস্তক্ষেপ করা যাবে না, যদি না ওই আদেশটি এখতিয়ার বহির্ভূত বা যথাযথ কর্তৃত্ববহির্ভূত না হয়।

পাঁচ ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনটি তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে, ‘এটি স্পষ্ট যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। এ পর্যায়ে অভিযোগের সত্যতা বিচারের কোন সুযোগ নেই। এটা সত্য যে একজন আইনজীবী বিচার বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার মানে এই না যে একজন আইনজীবী আইনের ঊর্ধ্বে এবং কোনো ফৌজদারি কার্যক্রম থেকে মুক্ত।

রায়ে আরো বলা হয়েছে, ‘আইনি পরিধির মধ্যে একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার যেকোনো আদেশ দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কেউ এতে সংক্ষুব্ধ হলে উপযুক্ত ফোরামে (উচ্চ আদালতে) এর আইনি প্রতিকারও আছে। কিন্তু রিট আবেদনকারী যেভাবে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছেন তা অত্যন্ত আপত্তিকর।

মামলার তথ্য-উপাত্ত, নথি পর্যালোচনা করে আপিল বিভাগ রায়ে বলেছেন, ‘আমরা মনে করি যে রিট আবেদনের সাথে কোনো জনগুরুত্ব বা স্বার্থ জড়িত নয়। আইন ও বাস্তবতার ভুল ধারণার ভিত্তিতে এ রিট আবেদনটি করা হয়েছে এবং হাইকোর্ট বিভাগ ভুলভাবে বিষয়টি আমলে নিয়ে রুল জারি করেছেন ও অন্তর্র্বতী আদেশ দিয়েছে। ফলে বলতে দ্বিধা নেই যে রিট আবেদনটি গ্রহণযোগ্য নয়। যে কারণে রুলটি খারিজ করা হলো।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top