আসামিকে কোরআনের যে তিনটি সুরা পড়তে বললেন বিচারক

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:১৪; আপডেট: ৪ মে ২০২৪ ০৪:৪৪

ছবি: প্রতীকী

মাদক মামলায় মো. ইয়াকুব আজাদ (৩৫) নামের এক আসামির সাজা স্থগিত করে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারা, মায়েদা ও নিসা ভালো করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া তাকে ৫০টি গাছ লাগাতে এবং মাদ্রাসায় ভালোমানের কিছু ধর্মীয় বই উপহার দিতে বলা হয়েছে। আজ রবিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম মামলার সাজা স্থগিত করে এ আদেশ দেন। ইয়াকুব আজাদ নোয়াখালীর চাটখিল থানার পশ্চিম শোশালিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

আজ শুনানির জন্য আদালতে দিন ধার্য ছিল। আইনজীবী জায়েদুর রহমানের মাধ্যমে আসামি ইয়াকুব আজাদ দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

শুনানিকালে কাঠগড়ায় থাকা আসামিকে বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার (আসামি) ছেলেমেয়ে আছে?’ জবাবে আসামি বলেন, ‘এক ছেলে মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ে, আর মেয়ে ছোট।’ তখন বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, ‘ঘর পবিত্র করার জন্য ছেলেকে হাফেজি পড়াচ্ছেন, সে আপনার জন্য দোয়া করবে, মরে গেলে জানাজা পড়াবে, আর আপনি ইয়াবা মামলার আসামি।’

আসামির কাছে বিচারক জানতে চান, ‘আপনি কি পড়ালেখা করেছেন।’ তখন আসামি বলেন, ‘আমি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেছি।’ এরপর বিচারক বলেন, ‘ছেলে মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ে, আপনি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস। আপনি কেন ইয়াবার মামলার আসামি হলেন?’ তখন আসামি বলেন, ‘স্যার, আমাকে ইয়াবা দিয়ে মামলা দিয়েছে।’ এরপর বিচারক বলেন, ‘পবিত্র কোরআনের কোন সুরায় মাদক সম্পর্কে বলা আছে, জানানে? সূরা, বাকারা, মায়েদা ও নিসা ভালো করে পড়বেন। এর মধ্যে পাবেন মাদক সম্পর্কে বলা কথা।’

বিচারক আরও বলেন, ‘আপনার সাজা স্থগিত করা হলো। আর প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধায়নে থেকে আপনি (আসামি) ৫০টি গাছ লাগাবেন, পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারা, মায়েদা এবং নিসা ভালো করে পড়বেন। আপনার ছেলে যে মাদ্রাসায় পড়ে, সেই মাদ্রাসায় ভালোমানের কিছু বই উপহার দেবেন। তবে এমন বই দিয়েন না, যে বই পড়ে আবার মানুষ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে।’

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) বিপুল চন্দ্র দেবনাথ ব্যতিক্রমধর্মী এ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের ৩ নভেম্বর শাহবাগ থানার হোটেল আপ্যায়নের পূর্বপাশ থেকে ইয়াকুবকে ৫ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিনই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক এস এম এলতাস উদ্দিন ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত চার্জশিটভুক্ত ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের ৫ জুলাই রায় ঘোষণা করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাশেদ তালুকদার। রায়ে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

এর আগে ২০১১ সালের ১ জুন এ মামলায় আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। চার্জগঠন থেকে মামলার বিচার কার্যক্রম হয় আসামি পলাতক থাকা অবস্থায়। রায়ের পর আসামি পরোয়ানামূলে ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন এবং ২ নভেম্বর তিনি জামিন পেয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top