লেখকদের রঙ্গ-রসিকতা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০৫; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৬

ছবি: প্রতীকী

লেখকরা আর দশজন মানুষ থেকে কিঞ্চিত আলাদা। তাই তাদের যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ, রঙ্গ-রসিকতাও একটু আলাদা। কোনো কোনো সময় এসবে তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পরিস্থিতির ‘শিকার’ হন শুধু। এসব পরিস্থিতি স্বীকার বা অস্বীকারও করতে হয় না অনেক লেখকের। শুধু উৎসাহী কেউ উঁকি দিলে দেখতে পান দূর দিগন্ত!

সহকর্মী আগে মিজানুর রহমান মিজান নামে লিখতেন। আচমকা তার সঙ্গে যোগাযোগ হয় সালেম সুলেরীর। সালেম সুলেরী একটি সাপ্তাহিক কাগজ সম্পাদনা করবেন। লোকবল দরকার। মিজান ভাই যোগাযোগ করলে তিনি বললেন, এ নামে তো লেখক বা সাংবাদিক কোনোটাই হওয়া যাবে না!

কী করতে হবে?

নামের আধুনিকায়ন করতে হবে। সেটাই হল শেষে। এরপর মিজান মিজানুর রহমান নাম দেখে কাছের লোকজন বলা শুরু করল মিজান নামটা দুইবার বলতে হবে কেন! অল্পদিনে আরেকটা কথা ছড়াল, ‘হবিগঞ্জে কবি নাই, আছে মিজান মিজানুর রহমান!’

সালেম সুলেরী কেবল যেন অন্যের নাম পাল্টানোয় ভূমিকা রেখেছেন, তা নয়। নিজের নামও পাল্টেছেন। তার ভালো নাম হারুনুর রশীদ। সাংবাদিক নঈম নিজাম’র নামটিও তারই দেওয়া। এটি ‘বানানো’ নাম।

একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন লেখক-সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান। একদিন সকালের দিকে সফরসঙ্গী আরেক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন, পীরের শরীর খারাপ। উত্তরে শেখ হাসিনা হেসে পরোক্ষভাবে নিজের স্বাস্থ্য বিষয়ে জানালেন, মুরিদের অবস্থাও তেমন ভালো না!

বড় লেখকের কলম দিয়ে লিখলে নাকি লেখা ভালো হয়—এমন বিশ্বাস আছে কারও কারও। অনেক বছর আগে বইমেলা থেকে আনিসুল হকের একটি কলম ‘মেরে’ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন আবু সুফিয়ান। বুঝতে পেরে আনিসুল হক বললেন, কলমটা ফেরত দিয়ো!

প্রকাশিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই। বইমেলায় সেটি তিনি উপহার দিলেন আসাদুজ্জামান নূরকে। নূর বললেন, লিখে দিন। শুনতে হলো, নাম লেখাই আছে!

বই দিলেন এখন, নাম লিখলেন কখন! সত্যতা যাচাই করতে পৃষ্ঠা উল্টালেন তিনি। অভিভূত হলেন উৎসর্গপত্রে নিজের নাম দেখে!

এমন সংলাপ নকলের সুযোগ আমারও এল একদিন। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে আমার রম্যগ্রন্থ ‘পাতালের তারকা’। বইটি উৎসর্গ করেছি কার্টুনিস্ট ও উন্মাদ সম্পাদক আহসান হাবীবকে। তখন বইমেলার বর্ধমান হাউসের পাশে বয়রাতলায় থাকত লিটলম্যাগ চত্বর। এ চত্বরের একাংশে থাকত ‘উন্মাদ’ স্টল। কাঁঠালতলায় দেখা হল আহসান হাবীবের সঙ্গে। বইটা উপহার দিলাম তাঁকে। আহসান ভাই বললেন, লিখে দাও। বললাম, নাম না লিখে তো কাউকে বই উৎসর্গ করা যায় না!

উন্মাদ ম্যাগাজিনে লেখা পাঠিয়েছেন এক পাঠক-লেখক। সেই লেখা আর ছাপা হয় না। একপর্যায়ে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পাঠক চলে এল লালমাটিয়াস্থ উন্মাদ কার্যালয়ে। সম্পাদক জানালেন, লেখা ছাপা হবে, সিরিয়ালে আছে। অন্যদিকে পাঠক দেখলেন তার লেখা আবর্জনা ফেলার ঝুড়িতে। সম্পাদকের ভাষ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল না পেয়ে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন তিনি। আহসান হাবীব বললেন, আমরা নির্বাচিত লেখাগুলো ওখানেই রাখি। পাঠক দেখলেন, তার লেখার নিচেই রয়েছে আনিসুল হকের একটি রম্য। এটা দেখে তিনি আশ্বস্ত হলেন। তবে তিনি জানলেন না, আগের সংখ্যায় আনিসুল হকের লেখাটি ছাপা হয়ে গেছে!

হাতের লেখা খারাপ হলে কম্পোজিটর ও সম্পাদক উভয়েই বিপাকে পড়েন। খারাপ হাতের লেখার এক লেখক কল করে নিজ লেখার অগ্রগতি জানতে চাইলেন। মনোনীত হয়েছে কি না, হলে কবে ছাপা হবে।

ফোনের এ প্রান্তে আহসান হাবীব বললেন, আমি লেখাটার অর্ধেক অনুবাদ করেছি। বাকিটার কাজও চলছে।

অপর প্রান্ত থেকে আর্তনাদ করে উঠলেন লেখক—কিন্তু আমি তো বাংলায় লিখেছি!

বইমেলায় একজন অভিভাবক হুমায়ূন আহমেদের বই কিনে তাঁর অটোগ্রাফ নিলেন। ছেলের হাতে বইটা তুলে দিতেই তার তারস্বরে কান্না—আমার বইয়ে উনি লিখলেন কেন!

ফয়েজ আহমদ এক কিশোরকে অটোগ্রাফ দিলেন ‘বড় হও বুড়ো হও’ লিখে। সেই কিশোর জুড়ে দিলো কান্না, কেন তাকে বুড়ো হতে বলা হলো এই দুঃখে!

লেখক: শফিক হাসান (মূল লেখাটি ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়।)


- চলবে



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top